খুলনায় ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় আগত শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বেলা ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ, যাত্রীবাহী বাস ও ইজি বাইসসহ ২০টি যানবাহন ও ক্লিনিক ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রদলের ৩শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। তবে ৫জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার নগরীর সরকারী আযম খান কমার্স কলেজ, সরকারী বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও বয়রা মহিলা কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য সকাল ১০টার দিকে সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে অবস্থান করছিল। এসময় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল না করার জন্য ছাত্রদল নেতাদের হুমকি দেয়। পরে তারা ছাত্রদল নেতা রাকিব খানকে কলেজ গেটে পেয়ে মারধর করে। এসময় মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী সন্ধানী ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্লিনিকের ভেতর ঢুকে আসবাবপত্র ভাংচুর ও তাদের মারধর শুরু করে। এখানে প্রায় আধাঘন্টা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেল্লাল হোসেন, মুজাহিদুল ইসলাম ও সোহাগ আহত হয়। এদের মধ্যে শিমুল ও মামুনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাকিব ও সাইফুলকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীদেরকে বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে পাইওনিয়ার কলেজের সামনে থেকে ছাত্রদল মিছিল করার প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ নেতা দিপু ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে। এনিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে আবারও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রলীগের সাথে একত্রিত হয়ে ছাত্রদলের উপর হামলা চালায়। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে কলেজের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা নগরীর পিটিআই মোড়ে ভাংচুর শুরু করে। এসময় পুলিশের একটি পিকআপ, তিনটি যাত্রীবাহী বাস, ১০/১২টি ইজিবাইক, একটি মাইক্রোবাস, দু’টি প্রাইভেটকার ভাংচুর করা হয়। পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে দুই রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি করে। গুলির ছররায় ছাত্র লুবিন ও প্রিন্স আহত হয়। পরে তাদেরকে গোপনে ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে পুলিশের দাবি, সংঘর্ষে পুলিশের নায়েক আলমগীর, কনষ্টেবল শাকিন মাহবুব, আব্দুর রহিম, ইমরুল ও গাড়ির ড্রাইভার মকবুল ইটের আঘাতে আহত হয়েছে। এ ঘটনায় খুলনা সদর থানার এসআই পুষ্পেন দেবনাথ বাদী হয়ে ছাত্রদলের দু’ তিনশ’ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। ও মামলায় পুলিশ ছাত্রদল নেতা ফয়সালসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, পরীক্ষা শুরু হলে ছাত্রলীগ কর্মীরা হলে নকল সরবরাহ করছিল। এ সময় প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ কর্মী রাজু ছাত্রদল কর্মী রাকিব খানকে মারধর করে। পরে সকাল ১০টার দিকে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজনের নেতৃত্বে সবুজ হাজরা, রাজু সরকার, সুমন, হাসান, ডলার, দিপু, মান্নাসহ শতাধিক কর্মী তাকে মিছিল না করার জন্য হুমকি দেয়। কোন কারণ ছাড়াই তারা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এমনকি মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন তার হাত থেকে মোবাইল সেটও কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। ঘটনার পর মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করার জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালিয়েছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অপরদিকে, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সবুজ হাজরা বলেন, আমরা তাদের মিছিল না করতে অনুরোধ করেছিলাম। তারা আমাদের কথা শোনেনি। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে কিছু বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যাপারে খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান বলেন, আযম খান কমার্স কলেজে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে নগরীর পিটিআই মোড় এলাকায় ভাংচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ শর্টগানের দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here