পৌষ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের হাটগুলোতে ইরি-২৮সহ অন্যান্য জাতের ধান উঠতে শুরু করেছে। আমন কাটতে এখনো প্রায় ১৫দিন বাকী। কৃষকরা তাদের চাহিদা প্রয়োজনে হাটে ধান আনতে শুরু করেছে। গত মৌসুমের তুলনায় এবারের স্থানীয় হাটগুলোতে মণ প্রতি ৩৬০টাকা কম দরে আমনের বিভিন্ন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমে এর দাম ছিল মণ প্রতি ১হাজার ৫০টাকা, এবারের দাম ৬৯০টাকা। পাট, আলু, ফুলকপি, মূলা, পেঁয়াজ ও রসুনের দরপতনে গ্রামীন কৃষি অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই আমন ধানের দরপতনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬লাখ কৃষক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এবারের দফায় দফায় জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে অনিশ্চিয়তার কারণে বোরো চাষে এ অঞ্চলের কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। অক্টোবারের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভণর খুলনা সফরে এলে এ অঞ্চলের কৃষকদের তার কাছে ফরিয়াদ ছিল, তারা বাঁচবে কেমন করে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০জেলায় এ মৌসুমে ১লাখ ৯৯হাজার হেক্টর জমিতে ৭লাখ ৬৬হাজার মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদন হয়। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে ধানের হাটগুলোতে প্রতিমণ আউশ ৫৬০টাকা থেকে ৬০০টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এই সূত্র জানান, ১০জেলায় এই মৌসুমে ৭লাখ ১হাজার ২৮০হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। সংশিষ্ট সূত্র আশা প্রকাশ করেছে, ১৮লাখ মেট্রিক টন আমন উৎপাদন হবে। গত মৌসুমে খুলনা নগরীর পশ্চিম প্রান্তে বটিয়াঘাটা উপজেলার কৈয়া হাটে প্রতি মণ ২৮জাতের ধান ১হাজার ৫০টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। একই জাতের ধান এবার ৬৯০টাকা দরে গতকাল বিক্রি হয়েছে। এ অঞ্চলের প্রধান প্রধান হাটগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা সদর, তেতুলতলা, শৈলকুপা, কালিগঞ্জ, ভাটই, বারোবাজার, হাটগোপালপুর, হলিধানী, খালিশপুর, কালা, ভৈরব, মাগুরা জেলা সদর, শ্রীপুর, আড়পাড়া, মোহাম্মদপুর, সত্যুজিতপুর, শালিখা, যশোর জেলার চৌগাছা, ঝিকরগাছা, নাভারণ, রূপদিয়া, বারিনগর, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর, হাসাদ, আলমডাঙ্গা, শরতগঞ্জ, বদরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর মেহেরপুর জেলার গাংনী, বামনদী, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর, আলার দরগা, বৃত্তিপাড়া, শানদিয়াড়া, উজানগ্রাম, সাতক্ষীরা জেলার পারুলিয়া, আবাদের হাট, নাজিমগঞ্জ, মুচিডাঙ্গা, শ্যাসনগর উপজেলা সদরের নকিপুর, নওয়াবেকী, খুলনার পাইকগাছা উপজেলা চাঁদখালী, গড়ুইখালী, কপিলমুনি, ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া, চুকনগর, বটিয়াঘাটা উপজেলা সদর, কৈয়া, দাকোপ উপজেলার চালনা বাজার ও নলিয়ান বাজারে আমনের সব ধরনের জাত উঠতে শুরু করেছে। কৈয়া বাজারের ফরিয়া দৌলতপুরের গাইকুর গ্রামের শেখ রওশন আলী জানান, পৌষের এই সময় হাটে আমনের আমদানী বেশি। তার দেয়া তথ্য মতে, বটিয়াঘাটা উপজেলা শৈলমারী, হোগলবুনিয়া, হাটবাড়ি এলাকা থেকে আগত কৃষকরা ধানের দাম শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার শুকদারা গ্রামের অধিবাসী ফরিয়া মোঃ মোস্তকা হোসেন জানান, গত সপ্তাহে হাটে তিনি ৪০মণ ধান কিনেছে। গতকালের হাটে ৬০ মণ ধান কেনেন। কৃষকদের উদ্ধৃদি দিয়ে এই সূত্র জানান, সার ও বীজ দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ উঠছে না। ডুমুরিয়া উপজেলা সাহস গ্রামের কৃষক সৈয়েদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমন মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা করে। বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়ে ৮ মণ করে। গতকাল প্রতি মণ ৬৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। তার দেয়া তথ্য মতে, প্রতি বিঘায় ১ হাজার ৬৪০ টাকা করে লোকসান হয়েছে। একই ভাবে লোকসান দিয়েছে সাহস গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও আজিজুর রহমান ফকির।
বটিয়াঘাটা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের মৃত সুধান্য বিশ্বাসের পুত্র রবিন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, সার ও জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। বোরো চাষে তারা উৎসহ হারিয়ে ফেলেছে।
আউশের দাম প্রসঙ্গে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা মনোহারপুর গৃ্রামের কৃষক রাশেদুল হাসান জানান, আউশে কৃষি উপকরণ যেমন সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তিনি বলেন, আউশ ১ বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ হয় ৮ হাজার টাকা, এক বিঘার জমির উৎপাদিত ধান বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকা। যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর গ্রামের কৃষক ইজতবা ইসলাম বলেন এবার আউশে বিঘা প্রতি ধান বিক্রি করে ১ হাজার ৩৫০ টাকা লোকসান হয়েছে। ২৯অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে বর্গাচাষীদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভণর ড. আতিউর রহমান সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এ সময়ে মাগুরা, যশোর অঞ্চলের কৃষকরা তার কাছে ফরিয়াদ করেন, ধান ও পাটের দাম নেই। কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে কৃষক বাচবে কেমন করে।
ইউনাইটেড নি্জি ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা