খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পেরে বেজায় খুশি কৃষক

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কৃষকরা সরকারি খাদ্য গুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পেরে বেজায় খুশি। এ বছর কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান কৃষি কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য গুদামে জমা দিয়ে লাভবান হয়েছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে। গত ১৯ মে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল লক্ষ্মীপুর খাদ্য গুদামে বোরো ধান সংগ্রহের উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে স’ানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিক ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুর খাদ্য গুদামে বোরো মৌসূমে ১৮‘শ ৭৫ মে.টন ধান ক্রয়ের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হলেও একশ্রেণীর সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা সরকারি সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। এসব নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান খাদ্য গুদাম এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কয়েকজন দালালকে জেল জরিমানা করেন। যার প্রেক্ষিতে খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয় বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর সদরে ধান ক্রয়ের জন্য কোন বরাদ্ধ দেয়া হয়নি।

২০১৯ সালে বোরে সংগ্রহ মৌসুমে লক্ষ্মীপুর খাদ্য গুদামে ৯‘শ ৫৭ মে.টন ধান ক্রয়ের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়। উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভায় স্বচ্ছতার সাথে কৃষকদের নিকট থেকে বোরো ধান সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে কৃষকের তালিকা তৈরী করে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করতে বলা হয়।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫‘শ কৃষকের তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তালিকা অনুযায়ী কৃষি কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা সর্বনিম্ন ১‘শ ২০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার কেজি ধান বিক্রি করতে পারেন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কৃষকের ধান বুঝে নিয়ে কৃষকের ব্যাংক একাউন্টে ধানের মূল্য পরিশোধ করেন। কৃষকরা তাদের নিজ নামীয় কৃষি একাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে টাকা উক্ত উত্তোলন করেন। যার কারণে খাদ্য সিন্ডিকেট, দালাল ও আড়ৎধাররা গুদামে ধান বিক্রি করার কোন সুযোগ পাচ্ছেনা। এ বছর খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালায় কৃষি বিভাগের তালিকাভুক্ত কৃষকদের ধানের মূল্য কৃষকের ব্যাংক হিসাবে পরিশোধের নিয়ম চালু করায় কৃষকরা সরকারি গুদামে প্রতি কেজি ধান ২৬টাকা মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এতে কৃষদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

সদর উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের ও চরভূতা গ্রামের ইউসুফ বলেন, আমরা নিজেদের ক্ষেতে উৎপাদিত ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বাজারে ধানের দাম কম ছিল। এখন সরকার আমাদের কৃষি কার্ড করে দিয়েছে। আমরা কৃষি কার্ডসহ গুদামে ধান নিয়ে এসে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান বিক্রি করেছি। গুদাম থেকে আমাদের ব্যাংক একাউন্টে চেক দেয়া হচ্ছে। আমরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেই। এর আগে সরকারিভবে ধান ক্রয় করা হলেও তাতে লাভবান হতে পারেনি কৃষক। সবই ছিল ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম বলেন, কৃষকরা উপজেলা কৃষি অফিসে তাদের কৃষি কার্ড জমা দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়ে প্রতি কেজি ২৬ টাকা মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন। যে সব কৃষকের নিকট ধান রয়েছে তারা এখনো তালিকাভূক্ত না হয়ে থাকলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে তালিকাভূক্ত হয়ে গুদামে ধান বিক্রি করার জন্য তিনি কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রামিম পাঠান জানান, উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির নির্দেশনা এবং কৃষি বিভাগ থেকে সরবরাহ করা তালিকাভূক্ত কৃষকদের নিকট থেকে চিটামুক্ত শুকনা ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। কৃষকের ধান গুদামজাত করে কৃষকের নামীয় (কৃষি কার্ড দিয়ে খোলা) কৃষি একাউন্টে ধানের মূল্য পরিশোধ করা হয়। কৃষকের একাউন্ট ব্যতিত বিল পরিশোধ করার কোন সুযোগ নেই।

তিনি আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদেরকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সে তালিকায় যাদের নাম আছে, আমরা তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করছি। তিনি কৃষি কার্ডসহ চিটামুক্ত শুকনা ধান গুদামে এনে জমা দিয়ে বর্তমান সরকারের ধান সংগ্রহ অভিযান সফল করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here