মিশরের সেনাবাহিনীর দুজন উর্ধ্বতন জেনারেল আজ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন৻

টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে এই জেনারেলরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান৻ সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর জেনারেলদের তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম৻

তবে সামনের সোমবার অনুষ্ঠিতব্য পার্লামেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হতে পারে বলে যে জল্পনা চলছিল, তা নাকচ করে দিয়েছে মিশরের সামরিক কর্তৃপক্ষ৻ তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন হবে৻

মিশরে সর্বশেষ এই বিক্ষোভে এ পর্যন্ত তিরিশ জন নিহত হয়েছে৻খবর : বিবিসি

জেনারেলদের নমনীয় অবস্থান

মিশরের সর্বময় ক্ষমতা এখন যে সামরিক কাউন্সিলের হাতে, মাত্র মঙ্গলবারও তাদের মুখে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর কথাবার্তা শোনা গেছে৻

কিন্তু বৃহস্পতিবার মিশরের দুই উর্ধ্বতন জেনারেলের কন্ঠে ছিল ভিন্ন সুর৻

গত কদিন ধরে তাহরির স্কোয়ারে যা ঘটেছে, তার জন্য তাঁরা পুরো সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে ক্ষমা চেয়েছেন, শোক প্রকাশ করেছেন নিহতদের পরিবারের কাছে৻

সামরিক কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আল আসার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, “যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য আমি মিশরের জনগণের কাছে পুরো সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে ক্ষমা চাইছি৻ যারা এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং যে তরুণরা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য আমরা শোক প্রকাশ করছি৻”

সামরিক কাউন্সিলের আরেক সদস্য জেনারেল জেনারেল মোখতার আল মোল্লা জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আকঁড়ে রাখার কোন অভিসন্ধি নেই৻

তিনি বলেন, ২৫ শে জানুয়ারীর বিপ্লব শুরুর পর সামরিক বাহিনী যে কথা দিয়েছিল, তা রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ৻

বিভক্ত জনমত

কিন্তু জেনারেলদের এই আপাত নমনীয় অবস্থান তাহরির স্কোয়ারের তরুণ বিক্ষোভকারীদের কতোটা সন্তুষ্ট করবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান৻

তাহরির স্কোয়ারে বুধবার রাতের পর আর নতুন করে সংঘাত হয়নি, কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এখনো সেখান থেকে সরেনি৻

মোহাম্মদ হাসানিন নামের একজন বিক্ষোভকারী বলছিলেন, সামরিক বাহিনীকে তারা আর বিশ্বাস করেন না৻

“বিপ্লবের পর আশা করেছিলাম দু মাসের মধ্যেই সব দাবী বাস্তবায়ন করা হবে৻ কিন্তু গত জানুয়ারী থেকে এই নভেম্বর পর্যন্ত কোন দাবীই মানা হয়নি৻ জনগণ পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করছে প্রায় এক বছর হতে চললো৻ এজন্যে মানুষ প্রাণ দিয়েছে৻ কিন্তু কিছুই হয়নি৻ এজন্যেই মানুষ এত ক্ষুব্ধ৻ ”

কায়রো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েন বলছেন, নির্বাচন নিয়ে মিশরের জনমত বিভক্ত৻

জনগণের একটা অংশ চায় নির্বাচন হয়ে যাক, অন্য দিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি হলো, আগে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে হবে, তারপর নির্বাচন৻

মিশরের সবচেয়ে সুসংগঠিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী, মুসলিম ব্রাদারহুড এখনো পর্যন্ত এই বিক্ষোভে যোগ দেয়নি৻ তারা চায় নির্বাচন হোক৻ কারণ নির্বাচনে তারাই জয়লাভ করবে বলে মনে করা হচ্ছে৻

কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বের ওপরও তরুণদের দিক থেকে চাপ বাড়ছে, যারা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একটা কঠোর অবস্থান নেয়ার পক্ষপাতী৻

এ অবস্থায় আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এবং গুরুত্বপূণ এই দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৻

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here