জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাঁকডাক দিয়ে চলছে লক্ষ্মীপুরের পশুর হাট গুলোর কেনাবেচা। পশুর হাটের অবস্থা দেখে মনে হয় করোনা কিছুই না। দেশে করোনা নামে কিছু আছে বলেও মনে হয় না। স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। সরকারের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ।

এ ছাড়া হাট গুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন ব্যবস্থা রাখাতে দেখা যায়নি ইজারাদারদের পক্ষ থেকে। এ সব দৃশ্য দেখা গেছে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন পশুর হাটে। এতে পশুর হাট গুলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের খনিতে পরিণত হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন কেউ যদি সরকারে জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০২৭ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের।
লক্ষ্মীপুরের সব থেকে বড় হাট পৌর গরুর বাজার, মোল্লার হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাটে প্রচুর পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতা। একজন মানুষের দাঁড়ানোর জায়গায় দাঁড়িয়েছে পাঁচ-ছয়জন। একজন আরেক জনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেউ করছেন পশুর দরদাম। আবার কেউবা পশু কিনে তুলছেন পরিবহনে। এদের অধিকাংশ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। কারো কারো মাস্ক থাকলেও তা নামানো থুতনিতে, কারো বা আবার রাখা আছে পকেটে। সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে ঝুঁকি নিয়ে পশু কেনা-বেচা চলছে লক্ষ্মীপুরের এ সব হাটে।

পৌর গরুর বাজারে গরু বিক্রি করতে এসেছেন জাফর আলী। ৫৭ বছর বয়সী লোকটির মুখে নেই মাস্ক। কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে জাফর আলী বলেন, মাস্ক আছে তবে বাড়িতে। গরু নিয়ে আসার সময় তাড়াহুড়াতে মাস্ক নিতে মনে ছিলনা। তাছাড়া এক সঙ্গে এত মানুষের ভিড় থাকায় যে গরম পড়েছে, তাতে মাস্ক পড়ে থাকা যায় না।

হাটে পশু ক্রয় করতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, শত-শত মানুষদের মধ্য কীভাবে এতসব নিয়ম মেনে চলা যায়। নিয়ম না মানলে জীবনের ঝুঁকি আছে ঠিক, তারপরও পশু তো ক্রয় করতে হবে। হাটে ইজারাদার বা স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। হাট গুলো নিয়ে প্রশাসন যদি একটু সচেতন হতো, তাহলে কিছুটা হলেও মানুষ নিয়ম-নীতি মেনে চলতো।
হাটের চারপাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী খাবার হোটেলও নেই স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো চিত্র। এক টেবিলেই বসে গাদাগাদি করেই খাবার খাচ্ছেন হাটে আসা মানুষজন।

এ দিকে গরু ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে গরুর দাম কম। গত বছর যে গরু বিক্রি হয় ৪৫-৫০ হাজার টাকায়, সে গরু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ হাজার টাকায়। তাতেও ক্রেতার সংখ্যা কম। ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেক খামারি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া যারা গরু বিক্রি করেছেন তারা প্রতিটি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণছেন। এতে গরু ব্যবসায়ীরা তাদের সংসার কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

লক্ষ্মীপুর পৌর গরু বাজারের ইজারাদার মনির হোসেন বলেন, করোনার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সবাইকে মাস্ক পরিধান করে হাটে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই এই আইন মানছেন না। এখন তারা যদি এসব আইন না মানেন, এক্ষেত্রে আমাদের কী করার থাকতে পারে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল ও মানুষের আয়-রোজগার ঠিক রাখার জন্য হাট গুলো খুলে দেয়া হয়েছে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাট গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সপ্তাহে সাত দিনই পরিচালনা করতে পারবেন ইজারাদাররা। এতে নিদিষ্ট দিনে হাট না বসে প্রতিদিন হাট বসলে পশুর হাট গুলোতে জন সমাগম কম হবে। তাছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতারা যেন পছন্দের পশুটি ক্রয় করে নিতে পারেন সে জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইজারাদারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here