জেসমিন বাপ্পি , ঘাসফুল ::  
কোভিডকালীন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপন করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে আজ ৯ অক্টোবর ২০২১ , সকাল ১১.০০টায় ঘাসফুল প্রধান কার্যালয় হতে আয়োজিত বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয় ।
ঘাসফুল চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী’র সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। তিনি অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি,প্যানেল আলোচক, আলোচক ও অংশগ্রহণকারীদের দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে অংশগ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাসফুলের সিইও আফতাবুর রহমান জাফরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব শিশুদিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২১ এবং এর প্রতিপাদ্য : ‘শিশুর জন্য বিনিয়োগ করি, সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ি’ উপর আজকের ঘাসফুলের এ আয়োজনে সকল অংশ্রহণকারীদেরকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান।
এরপর “শিশুদের পরাণ – ঘাসফুলের শিশু বিষয়ক কার্যক্রমের উপর ভিডিওচিত্র” প্রদর্শন করা হয়। আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মাননীয় সাংসদ এরোমা দত্ত। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে একজন মানুষ হিসেব শুধুমাত্র নিজেদের কাজের দায়িত্ব থেকে নয়, দায়িত্বের বাইরে গিয়েও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সমাজে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠির জন্য কাজ করতে হবে। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির মাধ্যমে শিশু অধিকার ও শিশু সুরক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাক্তন মুখ্যসচিব ও ইউসেপ বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আবদুল করিম বলেন, “ শিশুর সুরক্ষায় বিশ্ব এবং রাষ্ট্র সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। স্কুলে মূল শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল শিক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে শিশু সুরক্ষার আইন রয়েছে এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত হেড মিউকোসাল ইমোনোলজি এন্ড ভ্যাকসিনোলজি ইউনিট,আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র সাইন্টিস্ট ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বাংলাদেশে টিকা নেওয়া পর শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে তবে রোগের প্রকোপ বেড়েছে, প্রযুক্তিগত উপকরণের অভাবে শিশুদের দ্রুত রোগ নির্ণয় অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে।
আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে ঘাসফুলের প্রধান উপদেষ্টা ডা. সাদিয়া আফরোজ চৌধুরী বলেন, করোনাতে মানুষের আয় কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে শিশুদের উপর। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. নায়লা জামান খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ বাংলাদেশ বহুল জনসংখ্যার দেশ, এখানে নবীনদের দায়িত্ব নিতে হবে, তবেই বাংলাদেশ আগাবে। শিশু বিকাশ কেন্দ্রে শিশুদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের ৮০% সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এটা পর্যাপ্ত নয়, দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়নে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের মাধ্যমে আরো কাজ করতে হবে।
প্যানেল আলোচক সিনেসিস হেলথ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’র প্রধান নির্বাহী ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন “করোনায় মানুষ যখন ঘরবন্দী তখন তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন সার্ভিস শুরু হয়েছে, আমরা ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষকে সার্ভিস দিয়েছি। ১% শিশু করোনা আক্রান্ত হয়েছে। কোভিডের শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কোভিডে বেড়েছে বাল্যবিবাহ, স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে অনেক শিশু, শিশুদের সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে অনেক। পদ্ধতিগত ভাবেও আগাতে হবে সমন্বয়ের মাধ্যমে। শিশুদের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ করতে হবে সুস্থ শিশু ও সুস্থ পরিবার মাথায় রেখে। কোভিডের পর এখন নতুন সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন যা শিশু বেড়ে উঠা ও সুরক্ষার অন্তরায়, নদী ও লিভিং সিচুয়েশন চেন্জ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের উন্নয়নে এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে। যেহেতু ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি গোল অর্জন করে শিশু সুরক্ষা বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
প্যানেল আলোচক সাবেক সচিব ও ঘাসফুল সাধারণ পরিষদ সদস্য মাফরুহা সুলতানা বলেন, শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কোভিডের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপনে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে শিক্ষা ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে বিনিয়োগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার আন্জুমান বানু লিমা, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম’র মো. নূরুল আবছার ভূঁঞা, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’র পরিচালক আবদুস শহিদ মাহমুদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র চাইল্ড প্রোটেকশন -সমন্বয়কারী রাফিজা শাহীন, ব্লুম চিটাগাং’র প্রতিষ্ঠাতা তাসনিম আবেদীন, ওয়ার্ল্ড ভিশন’র ম্যানেজার শ্যামল ফ্রান্সিস রোজারিও, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম(পরিদর্শক সাধারণ) বিশ্বজিত শর্মা, ইউসেপ বাংলাদেশ চট্টগ্রাম’র জয় প্রকাশ বড়–য়া, ব্র্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম’র প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, ইপসা’র মোহাম্মদ আলী শাহিন।
উপস্থিত ছিলেন- ঘাসফুল উপদেষ্টা সদস্য সুরাইয়া জান্নাত এফসিএ, ঘাসফুল এর নির্বাহী সদস্য পারভীন মাহমুদ এফসিএ, ঘাসফুল সাধারণ পরিষদ সদস্য ইয়াসমিন আহমেদ, কলকারখান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব মোবররাত,আইএলও’র ঢাকার প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম মুকুল, ব্র্যাকের বিভাগীয় প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মজুমদার, যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি- মো: শহিদুল ইসলাম, মণিষার নির্বাহী পরিচালক আজমল হোসেন হিরু,উপকুলের প্রধান নির্বাহী জোবায়ের ফারুক লিটন, সংশপ্তকের অগ্রদূৎ দাশগুপ্ত, বিশ^াস যুব সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী শফিউল বাশার, অপরাজেয় বাংলাদেশের প্রতিনিধি জিনাত আরা বেগম,স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী শিকদার, আইডিএফ প্রতিনিধি মাকসুদ, বাসাস’র সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট রাশেদুল হাসান,সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী, ঘাসফুল পরাণ রহমান স্কুলের অধ্যক্ষ হোমায়রা কবির, উপাধ্যক্ষ মাহমুদা আক্তার, সিআইইউ’র শিক্ষার্থী রোকসানা সাথী প্রমূখ।
সুপারিশমালাগুলোর মধ্যে রয়েছে :: 
১. শিশু সুরক্ষায় শুধুমাত্র প্রকল্পের উপর নির্ভর না করে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
২. শিশুশ্রম নিরসনে সেক্টরভিত্তিক ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার জন্য সরকার ও উন্নয়ন সংস্থা সমুহের সাথে ( পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের মাধ্যমে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
৩. বিভিন্ন বিদ্যমান শিশু সুরক্ষা কমিটিগুলোকে সচল করে শিশু অধিকার ও সুরক্ষা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৪. শিশু সুরক্ষায় এলাকা ভিত্তিক জরিপ গবেষণা ও প্রতিবেদন গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৫. কোভিড ২০১৯ এ শিশুর স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৬. স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপন করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. মুল শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল শিক্ষা সুযোগ বাড়াতে হবে।
৮. শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়তে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
৯. কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি সাহায্যে শিশু অধিকার ও শিশু সুরক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here