জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে ::
যশোরের কেশবপুরে ৪ দিনের ৩৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টিপাতের ফলে ১১৪ গ্রামের শতশত পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। নদ নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বিঘ্নিত হওয়ায় বৃষ্টির পানি জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠা, দাখিল মাদ্রাসাসহ মৎস্য ঘের, আমন ফসল, সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মসজিদ মন্দির প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ। ঘেরের অবকাঠামোসহ শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত গ্রামের মানুষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও আত্নীয় স্বজনের বসতভিটে আশ্রায় নিয়েছে। পৌর শহরের কাঁচা তরিতরকারি বাজার, মাছের আড়ৎ, ধানের হাট প্লাবিত হয়েছে। নদনদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বিঘ্ন ঘটায় বৃষ্টির পানি না সরে জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। সরকারি ত্রান হিসেবে ১০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ।
জানা গেছে, নিম্মচাপের প্রভাবে কেশবপুর উপজেলায় গত চারদিন যাবত ভারি বর্ষণ হয়েছে। ভারি বর্ষণে উপজেলার ৬ হাজার ৫৫৬ টাকা মৎস্য ঘেরের প্রায় সবকয়টি ঘের ভেসে শত কোটি টাকার মাছ নদি-নালা খাল এক সাথে মিশে গেছে। অনেক মৎস্য ঘের মালিক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। তবে ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ নদনদী, খাল বিলে ছড়িয়ে পড়া মাছ শিকার করে অনেকে লাভবান হচ্ছে। কাউখোলা বিলে প্রতিদিন শত শত মানুষের মাছ ধরার ধুম পড়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে, কারও সর্বনাশ, আর কারও পৌষ মাস।
কেশবপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের অফিস সহকারী মোঃ রুস্তম আলী বলেন, চারদিনের অতি বৃষ্টিপাতের কারণে ৩১৭৩ হেক্টর জমির আমন ধান প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া কৃষি খাত বিশেষ করে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার বিঘা জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কৃষিখাতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ায় অসংখ্যা কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে কেশবপুর পৌরসভা সহ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শত শত বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। কেশবপুর, হিজলডাঙ্গা, বাউশলা, পরচাক্রারা, হাসানপুর, বুড়িহাটী, ব্যাসডাঙ্গা, বাঁকাবর্ষি, সুজাপুর, দোরমুটিয়া, আওয়ালগাতী, কাকিলাখালী, পৌরসভার মধ্যকুল, হাবাসপোল, আলতাপোল, সাবদিয়া, মজিতপুর, বাজিতপুর-সহ উপজেলার নিন্মাঞ্চলের গ্রাম গুলির প্রায় ১০ হাজার পরিবারের বাড়ি ঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
ভারী বর্ষণের কারণে খেটে খাওয়া দিনমজুররা বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে মানবতার জীবনযাপন করছে।
কেশবপুর পৌর সভার সরকারি ডিগ্রি কলেজ, কেশবপুর মহিলা আলিয়া মাদ্রাসা, পরচাক্রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাউশলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাউশলা দাখিল মাদ্রাসা, দোরমুটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, হিজলডাঙ্গা শহীদ ফ্লাইট লেঃ মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের, কাটাখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আলতাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্লাবিত হয়েগেছে। কেশবপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অফিস রুমের ফ্লোরে পানি উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঐ অফিসে বৈদ্যুতিক মটরের সাহায্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেশবপুর থানা চত্বর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন প্লাবিত হয়েছে। সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দিন আলা বলেন, তাঁর ইউনিয়নের সবকয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুর পৌর ভবনের সামনে পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে পরিষদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তাছাড়া কেশবপুর- কাটাখালি সড়ক, গৌরিঘোনা সড়ক, ফতেপুর সড়ক, কেশবপুর -ত্রিমোহিনী সড়ক প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলকোট- হিজলডাঙ্গা সড়কটি প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়েছে।
কেশবপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন, প্লাবিত এলাকা বাসীর জন্য সরকার ইতিমধ্যে ১০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দিয়েছেন। যা ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।