জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে ::
সংস্কারের নামে লুটপাট আর ভূমিদস্যুদের দখলদারিত্বে যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী নাব্যতা হারা খালে পরিনত হয়েছে। ফলে নদ-নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। নদ-নদী খনন না করায় এবছরও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী মহল।
জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে, কপোতাক্ষ নদ, হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপার ভদ্রা, শ্রীনদী। এ নদ-নদী দিয়ে এক সময় পালতোলা নৌকা চলাচল করতো। হরিহর নদীর পাড়ে গড়ে উঠে কেশবপুর বাজার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসারীরা নৌকা করে কেশবপুর বাজারে আসতো খেজুরের গুড়, ধান, পাট নারিকেল সহ বিভিন্ন কৃষি পন্য ক্রয় করতে। সংস্কারের অভাবে নদ-নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। এ সুযোগে দু’পাশ একটু একটু করে ভূমিদস্যুরা দখল করে কৃষি জমি, মাছের ঘের, পুকুর তৈরি করেছে।
ফলে নদ-নদী নাব্যতা হারা সুরু খালে মতো পরিনত হয়েছে।  এসব নদ-নদী খননে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও যেনতেন ভাবে খনন করায় নদ-নদী গুলো দিনদিন আরো নাব্যতা হারিয়ে সরু খালের মতো পরিনত হয়েছে। খননের সময় নদীর দু’পাশ সেটে, কোনরকম তলদেশ সমান করে মাটি নদীর পাড়ে এমন ভাবে রাখা হয়, যাতে মনে হয় নদ-নদী গভীর করে খনন করা হয়েছে। আবার খননকৃত মাটি নদীর পাড়ে রাখায় তা বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে নদীতে গিয়ে পড়ে পুনরায় ভরাট হয়ে যায়। তাছাড়া খন্ড খন্ড করে খনন করায় নদ-নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সীমানা নির্ধারন করে, সম্পুর্ন নদী এক অর্থ বছরে চওড়া ও গভীর নদ-নদী গুলো খনন করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে ভুক্তভোগী মহল মনে করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরের শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিহর নদের ৫ কিলোমিটার, বুড়িভদ্রা নদীর ৭ কিলোমিটার অংশ পলিতে ভরাট হয়েছে। এ ছাড়া আপার ভদ্রা নদীর ১৮ কিলোমিটার ও হরি নদের ১৫ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়েছে। এর আগে ২০১৬-১৭ সালে এই নদ-নদীগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হতে পেরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সে সময় কেশবপুর পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নেন।
ভুক্তভোগী মহলের অভিমত, কেশবপুর উপজেলার মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে হলে নদ-নদীগুলো চওড়া ও গভীর করে  খনন করতে হবে । নদ-নদী খনন এলাকার মানুষর প্রাণের দাবি। বর্ষা মৌসুমের আগে নদী খননের দাবি জানান তাঁরা।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মূলত কেশবপুর শহরের পানি হরিহর নদ, বুড়িভদ্রা ও আপার ভদ্রা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। এ তিন নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে কেশবপুরে পূর্বাংশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরি নদের ১৫ কিলোমিটার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে এখনো বাগডাঙ্গা গ্রামে মানুষের বাড়িতে পানি রয়েছে। বিল খুকশিয়া, কালীচরণপুর বিল ও বাগডাঙ্গা বিল জলাবদ্ধ হয়ে আছে। এ বিলগুলোতে আট বছর ধরে কোনো ফসল হচ্ছে না।
গতকাল শনিবার ২৯ জুন কেশবপু বাজার সংলগ্ন হরিহর নদ ঘুরে দেখা গেছে, নদের এই পাঁচ কিলোমিটার অংশে এক, দেড় ফুট মতো পানি আছে। বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছ থেকে বড়েঙ্গা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার বুড়িভদ্রা নদীতে কোনোরকম পানি রয়েছে। অন্যদিকে বড়েঙ্গা থেকে পশ্চিমে আপার ভদ্রা নদীর ১৮ কিলোমিটার কোনো পানি নেই। এখানে আপার ভদ্রা নদী থেকে পূর্বে হরিহর নদ এবং উত্তরে বুড়িভদ্রা নদীর সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বড়েঙ্গা গ্রামের  বাসিন্দা আকরাম বলেন, এখানে নদী বলতে কিছুই নেই। ঘূর্ণিঝড় রিমালের বৃষ্টির আগে তিন নদীর মোহনায় সাইকেল চালিয়ে যাওয়া যেত। তিনি বলেন, বর্ষার আগে এ তিন নদ-নদী খনন করা না হলে এ বছর বর্ষা মৌসুমে কেশবপুর শহরে পানি উঠে যাবে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগে নদ-নদী ও বিলের মধ্যের খাল খনন করতে হবে। তা না হলে কেশবপুর ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় নির্মজিত হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করছে না। কেশবপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নদ-নদীগুলো পলিতে ভরাট হওয়ায় এ বছর জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। তবে টাকার সংস্থান না হওয়ায় নদী খননের কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিক্ষিপ্ত ভাবে কাজ করলে তা থেকে কোনো ফলাফল আসবে না। তাই  মনিরামপুর-কেশবপুর এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে সমন্বিত একটি গবেষণা প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here