কেশবপুরের সাগরদাঁড়ীর মধুমেলায় এবারও যাত্রা, যাদু প্রদর্শনী, বিচিত্রানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রদর্শনীর আড়ালে অপসংস্কৃতিমূলক অশ্লিলতা চলছে। জাতীয়, আঞ্চলিক পত্রিকায় অতীতে বিষয়টি নিয়ে বহু লেখালেখি, ছবি প্রকাশ হয়েছে। অশ্লিলতার দায়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রা, পুতুল নাচ, যাদুর প্যান্ডেলগুলো উচ্ছেদ করেছেন। এবারও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছিল, অশ্লিলতার অনুমোদন আর নয়, কিন’ ফলাফল সেই একই। সাগরদাঁড়ীর মধুমঞ্চের একদিকে মহাকবি’র সাহিত্যকর্ম নিয়ে জ্ঞানগর্ব আলোচনায় সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় মধুসূদনের সৃষ্টিকে জীবনপাথেয় করার অকুলতা অপরদিকে চলছে যাত্রা, পুতুল নাচ, যাদু, ভ্যারাইটি শো’ জুয়া বোর্ডের নামে উঠতি বয়সি প্রজন্মকে চটি সাহিত্যে আকৃষ্ট করে রমরমা ব্যবসা । এ দৈত আয়োজনে নতুন প্রজন্ম কি ফলাফল লাভ করবে তা নিয়ে মধু গবেষকরা উদ্বিগ্ন।
২২ জানুয়ারি রাত ১০টার পর সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মূলমঞ্চে জাতীয় ও স্থানীয় বরেণ্য ব্যক্তিত্বের উপসি’তিতে মহাকবি মাইকেল মদূসূদনের সাহিত্যকর্ম নিয়ে জ্ঞানগর্ব আলোচনা। মধুমঞ্চের দক্ষিণদিকে কয়েকশ গজ দূরেই যাত্রা প্রতিমা অপেরা, ঢাকা মডার্ণ যাদু প্রদর্শনী, ঢাকা ডিজিটাল যাদু প্রদর্শনী ও বাংলাদেশ চলচিত্র, চলচিত্র বিষয়ক ও বিচিত্রানুষ্ঠান, অদৃশ্য ডিজিটাল যাদু, ডিজিটাল যাদু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান, চলচিত্র নায়ক নায়িকাদের সমন্বয়ে যাদু প্রদর্শনী, বিচিত্রানুষ্ঠান ও মডেল তারকাদের নৃত্য পরিবেশন ‘ভ্যারাইটি শো চলে যাবে স্মৃতি পড়ে রবে’, ইত্যাদি চটকদার নামে চলছে অপসংস্কৃতি চর্চা। যা মধুসূদনের জন্মবার্ষিকীতে একেবারেই বেমানান। শুধু বেমানান নয়, তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধাও বটে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১০লক্ষ টাকায় মধুমেলার মাঠ বিক্রি করা হয়েছে। এ টাকা তুলতে এত আয়োজন। গরুহাট কিনে ইজারাদার যেমন লাভ করতে চায়, তেমনি মধু’হাট কিনেও লাভ করতে চায় ইজারাদাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাত্রা, ডিজিটাল যাদু ও ভ্যারাইটি শো’র কয়েকজন জানালেন, ৭দিনের জন্য প্রতিটি প্যাণ্ডেলর জায়গা ১লক্ষ টাকায় কিনেছি। যাদু কেউ দেখে না! তাই মেয়ে ভাড়া করে নাচাচ্ছি। অশ্লীল নাচ কেন? প্রশ্ন করতেই উত্তর ‘টাকা তুলতে হবে না! যাত্রার সাথে প্রতি রাত ৫০হাজার টাকা চুক্তি। তারপর চমকে উঠার মত সংবাদ, দেশ জাতির অহংকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ফান্ড তৈরীর জন্য এবারের আয়োজন। যা লাভ হবে সবই মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় হবে। তবে বিশ্বাস করিনি। কারণ,‘মা ভাবনা কেন… আমরা হারব না হারব না, তোমার মাটির একটি কনাও ছাড়ব না…আমরা পাঁজর দিয়ে দূর্গখানা গড়তে জানি… আমরা বীরের মত জীবন দিয়ে মরতে জানি….। এঁরা হলেন দেশ মাতৃকার গর্ব, নতুন প্রজন্মের অহংকার আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানী হানাদার, রাজাকার আলবদররা আমার দেশের মা-বোনদের তুলে নিয়ে, নির্যাতন করে জোরপূর্বক সম্ব্রম লুট করেছে। জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে মা-বোনদের ইজ্জত ফিরিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা কখনই স্বাধীন দেশের মাটিতে মা-বোনদের নাচিয়ে কল্যাণ ফান্ড তৈরী করতে পারেন না। মুক্তিযোদ্ধা নাম ব্যবহার করে যারা এগুলো করছে তাদেরকেও গোলাম আযম, সাইদী, মুজাহিদদের পাশাপাশি বিচার করা উচিত।
মধু মঞ্চের ঢোকার মুখেই মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছবির উপরে যশোরের তালুকদার গ্রুপের বর্ণাঢ্য প্রচারণা। এ ছাড়া মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলের প্রতিটি খুটিতে সাটানো হয়েছে তালুকদার গ্রুপের কাপড়ে লেখা প্রচারণা। মধু মঞ্চে মহাকবির ছবি যতোটা না স্থান পেয়েছে তার থেকে বেশি স্থান পেয়েছে মিডিয়া পার্টণার বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি, বাংলা লিংক আর তালুকদার গ্রুপের প্রচারণা সম্বলিত ফেষ্টুন। এসব কারণে মধুমঞ্চের অনেক আলোচক মধুমেলাকে বাণিজ্যিক করন করার অভিযোগ তুলেছে ।
কেশবপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ মীর রেজাউল হোসেন রেজা জানান, অশ্লীলতার প্রমাণ পেলে অন্যবারের মত সাথে সাথে উচ্ছেদ করা হবে। ইউএনও খাঁন মোঃ রেজা-উন-নবী জানান, প্রত্যেক প্যাণ্ডেলে আইন শৃ*খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ থাকায় এবার অশ্লিলতার কোন সুযোগ নেই ।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জাহিদ আবেদীন বাবু/কেশবপুর
কেশবপুর (যশোর)প্রতিনিধিঃ