মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা প্রতিনিধি ::

খুলনার পাইকগাছায় রাড়ুলীতে আসন্ন শীত মৌসুমে লবণপানি মুক্ত জমিতে বোরোর আবাদ করতে একাট্ট হয়েছে প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে স্থানীয় মাছ চাষীরা। এনিয়ে সেখানকার কৃষকরা স্থানীয় রাড়ুলী বোরহানপুর ফুটবর মাঠ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে ৯নং পোল্ডারের ১নং স্লুইচ গেটটি বন্ধ রেখে বোরহানপুর ও চুরাভাঙ্গাড়ী মৌজার অন্তত ৪শ’ একর জমিতে লোনামুক্ত মিষ্টি পানির বোরো আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্থানীয়দের আহ্বানে এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন, রাড়ুলী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি নাজির আহম্মেদ। জামায়াতে ইসলামী নেতা মহিবুল্লাহ এর সঞ্চালনায় আয়োজিত সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, টানা গত দু’বছরে ৯ নং পোল্ডারের ১নং স্লুইচ গেটটি বন্ধ করে সেখানকার বিস্তীর্ণ জমিতে বোরো আবাদ করলেও কতিপয় প্রভাবশালী ঘের মালিকরা তৎকালীণ ফ্যাসিস্টদের ছত্রছায়ায় সরকারি স্লুইচ গেট দিয়ে লবণপানি ঢুকিয়ে কৃষকের সর্বনাশ করে আসছে।

এনিয়ে তৎকালীণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মধ্যস্থাতায় স্লুইচ গেট দিয়ে লবনপানি না ঢুকাতে জমি ও ঘের মালিকদের মধ্যে লিখিত চুক্তি হলেও কার্যত তা কাজে আসেনি। বরাবর তারা রাতের আঁধারে ধান ক্ষেতে লবণপানি ঢুকিয়ে চরম সর্বনাশ করেছে।অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে বরাবর পার পেয়ে যায় তারা। তবে এখন সময় বদলেছে। জীবিকার প্রাণ কৃষিকে বাঁচতে সেখানকার কৃষকরা তাই ফের আশায় বুক বেধে নতুন করে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের দাবি পেশিশক্তি কিংবা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কৃষির বাস্তবায়নে তারা অন্তত রাড়ুলীর বোরহানপুর ও চুড়াভাঙ্গাড়ী মৌজার ১২শ’ বিঘা জমিতে লবণপানি মুক্ত বোরো আবাদ করতে চান।

এলক্ষে আয়োজিত সমন্বয় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পাইকগাছা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রানকৃষ্ণ দাশ, ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি তানভীর আহমেদ, আয়োজক কমিটির ফারুক সানা, জাহিদ হাসান, হাসান মোড়ল, আঃ সামাদ, ওয়াজেদ আলী শেখ ও খলিল সানা প্রমুখ।

এদিন বক্তারা বলেন, পূরনো অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তারা আসন্ন শীত মৌসুমে পোল্ডারের স্লইচগেটের মুখ বন্ধ করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণপূর্বক বোরোধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন বিপ্লবের গন্ধ মেখে নতুন বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবের প্রত্যয়ে সবুজ কৃষিতে ফিরতে তারা এসময় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরও সহযোগিতা কামনা করেন।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রাড়ুলীর উপরোক্ত দু’ মৌজায় মাছের পাশাপাশি ধান চাষের সুযোগ করে দিতে সেখানকার ৯নং পোল্ডারের ১নং স্লুইচ গেটটি বন্ধ করে লবণপানি মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আসন্ন বোরো আবাদ মৌসুমে কৃষকরা যাতে এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ধান চাষ করতে পারেন তার জন্য প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া এনিয়ে তিনি উর্দ্ধতন মহলে কথা বলবেন বলেও জানান কৃষির এ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই মাছের পাশাপাশি ভাতের উৎস্য ত্বরান্বিত করতে পাইকগাছার কৃষিতে ফিরে আসুক সোনালী সময়। সবুজ সমারোহের পর সোনালী ধানের মন মাতুক প্রান্তিক কিষাণ-কৃষানীর। এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকের পাশাপাশি জনপদের সাধারণ মানুষের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here