কুয়াকাটায় ওয়াকিং বীচ নেই: ধ্বংসস্তুপে বসে সময় কাটাতে হয় পর্যটকদেরমিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :: একযুগ আগেও কুয়াকাটা সৈকতের প্রস্থ্য ছিলো প্রায় তিন কিলেমিটার। মূল ওয়াপদা থেকে সৈকতের দূরত্ব ছিলো প্রায় এক কিলোমিটার। কিন্তু এখন কুয়াকাটার নেই কোন ওয়াকিং বীচ। সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনে মূল সৈকত ভেঙ্গে এখন ভাঙ্গনের মুখে এক কিলোমিটার দূরে থাকা সেই মূল ওয়াপদা (বাঁধ)।

দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতে এই বর্ষা মেীসুমে পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানো এখন নির্ভর করছে জোয়ার-ভাটার উপরে। আর রাতে সৈকতে নামা তো আরও বিপদজনক।

ছয় বছরের ছেলে সিয়ামকে নিয়ে কুয়াকাটায় ভ্রমনে এসেছেন দোলা ইসলাম ও তার মা আয়েশা বেগম। সিয়ামের বায়না সৈকতে সাইকেল চালাবেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করেও সৈকতে নামতে পারেন নি তারা। সাগরের জোয়ারের কুয়াকাটার ওয়াকিং বীচ তলিয়ে থাকায় বনাঞ্চলের মধ্যে বসেই দেখতে হয়েছে সাগরের ঢেউয়ের খেলা। আর ভাটার সময়ে ওয়াকিং বীচ ময়লা আবর্জনা ও সৈকত সংলগ্ন গাছের গুড়ির এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকায় সিয়ামের আর সাইকেল চালানো হয়নি কুয়াকাটায়।

কুয়াকাটা সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের জিড়ো পয়েন্ট থেকে পূর্বদিকের প্রায় দুই কিলোমিটার মূল সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাগরের ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া নারিকেল, ঝাউ গাছ ও গাছের গুড়ি। পশ্চিম দিকের সৈকতে ভেঙ্গে পড়ে আছে সাগরের ভাঙ্গনে বিলীন এলজিইডি’র ডাকবাংলোর সিমেন্ট ও রডের খন্ড ও লেম্বুর চর বনাঞ্চলের গাছের গুড়ি। মুল সৈকতে নামার রাস্তা না থাকায় ফার্মস এন্ড ফার্মসের ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে প্রায় ৩/৪’শ ফুট ঘুরে সৈকতে নামতে হয়। সেই রাস্তাও অনেক সময় বন্ধ থাকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাস ও পিকনিক পার্টির রাখা মাইক্রোবাস রাখার কারনে।

বরগুনা থেকে সৈকতে ভ্রমনে আসা দোলা ইসলাম জানান, রাস্তার ও জঙ্গলে আর কতক্ষন ঘুরে বেড়ানো যায়। ছেলেটা সাইকেল নিয়ে এসেছে কিন্তু চালানোর জন্য। কিন্তুু জোয়ারে তো রাস্তায়ই পানি ওঠে, আর ভাটার সময় কয়েক’শ ফুট সৈকত তলিয়ে আছে ময়লা আবর্জনা ও ভাঙ্গা গাছের স্তুপে। এরমধ্যে হেঁটে চলাই কষ্টকর, সাইকেল চালাবে কিভাবে।

ষাটোর্ধ আজিমউদ্দিন আহমেদ দুইদিন আগে কুয়াকাটায় এসেছেন নাতি-নাতনীদের সাথে। কিন্তু এখনও তার সূর্যোদয় ও সৈকতে নামা হয়নি। তিনি বলেন, বয়স হইছে এখন। ভেবেছি ভোরে সৈকতে হাটাচলা করব। কিন্তু জোয়ারে তো সৈকতে নামাই যায় না। আর ভাটায় ময়লা আবর্জনার স্তুপে নামতে সাহস পাইনা।

কুয়াকাটার বাসিন্দা আবদুল আলী বলেন, আগে সাগর দেখতে ও গোসল করতে দেড়/দুই মাইল বালির মধ্যে হাঁটতে হইতো। আর এ্যাহন তো রাস্তায় দাড়াইয়া সাগর দ্যাহা যায়। যেহারে সাগরে ভাঙ্গছে তাতে আর কয়দিন পর হয়তো বাড়ি বইয়াই দ্যাহা যাইবে।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা একাধিক পর্যটক বলেন, এখন শুধু কুয়াকাটায় সাগর আছে, সৈকত নেই। আর যে সাগরে সৈকত নেই সেখানে পর্যটকরা ভ্রমনে গিয়ে হোটেলে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই নেই।

কুয়াকাটার হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র কেন্দ্রীক সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। কুয়াকাটা কেন্দ্রীক হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু কিছু ব্যক্তি কেন্দ্রীক উন্নয়ন হলেও কুয়াকাটা সৈকত তলিয়ে গেছে উন্নয়ন আশ্বাসের সাগরে। এ কারনে প্রতিবছর সাগরে কোটি কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পদ বিলীন হলেও সৈকত উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটা সৈকত ও ভাঙ্গন রোধে বছরের পর বছর ধরে তারা শুধু আশ্বাসই শুনছেন। কিন্তু মাইলের পর মাইল এলাকা বিলীন হলেও এখনও জানতে পারছেন না কবে কাজ শুরু হবে। আর যে পর্যটনকেন্দ্রে সৈকত নেই সেখানে পর্যটকরা কোথায় ঘুরে বেড়াবে।

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস সূতে জানাযায় কুয়াকাটা সৈকতের জিড়ো পয়েন্ট ও ভাঙ্গন রোধে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গন রোধে গ্রোয়েন বাঁধ ও সৈকতে পর্যটকদের জন্য ওয়াকিং ও ডাইভিং রোড করার পরিকল্পনা রয়েছে। হয়তো আগামী অর্থ বছরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here