কুষ্টিয়া চিনিকল শুধুমাত্র আখের ওপর নির্ভরশীল হলে চিনিকলকে ধারাবাহিক লোকসান গুনতেই হবে। আর এই লোকসানের পরিমানও লাখ নয়, কয়েক কোটি টাকা। চিনিকল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৬ বছরে লোকসানের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর লাভ মাত্র ২৬ কোটি টাকা। আখ স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারনে চিনিকলটি যেন লাভের মুখ দেখছেই না। শুধু কুষ্টিয়া চিনিকলই নয়, দর্শনার কেরু এন্ড কোং ছাড়া দেশের ১৩টি চিনিকলকেই গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান। তবে শুধুমাত্র চিনির ওপর নির্ভরশীল হলে চিনিকলকে আর লাভের মুখ দেখতে হবেনা। এক সময় হয়তবা চিনিকলের অসিত্মত্বই বিলিন হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে সেখানে কর্মরত হাজারো শ্রমিক-কর্মচারী। তাই চিনিকলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করতে হলে বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। ভাবাও হচ্ছে। আখ ছাড়াও আখের উপাদান থেকে আর কি কি পন্য উৎপাদন করা সম্ভব তা নিয়েও চলছে নানা হিসেব-নিকেশ। আর এই হিসেব-নিকেশ হচ্ছে কুষ্টিয়া চিনিকল কেন্দ্রীক। দর্শনা চিনিকলের আদলে চিটাগুড়(মোলাসেস) থেকে ডিসটিলারী (এ্যালকোহল প্রুপ লিটার)কারখানা করা যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে। গত ৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ সংক্রানত্ম একটি প্রসত্মাবনাও উত্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল আলম হানিফ সমন্বয় সভায় উল্লেখ করেন বর্তমান সরকার কুষ্টিয়ার উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর। মেডিকেল কলেজ বাসত্মবায়ন, বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া অগ্রগতির সাথে সাথে এতদ্বাঞ্চলের ভারী শিল্প কুষ্টিয়া চিনিকলকে কিভাবে লোকসানী প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করা যায় সেজন্য দর্শনা কেরু এন্ড কোং’র মত ডিসটিলারী করার চিনত্মাভাবনাও চলছে। মোলাসেস’ সুগার আমদানী করে রিফাইনারী সুগার তৈরীর প্রসত্মাবনাটি লোকসানে সহায়ক বলে ওই প্রসত্মাবনা গুরুত্ব না দিয়ে ডিসটিলারী তৈরীর বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এবং দ্রুত বাসত্মবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার হবে বলেও হানিফ ওই সমন্বয় সভায় উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদ’র অন্যতম সদস্য ও খোকসা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সুগার সেচ এন্ড রোড ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান জানান, ডিসটিলারী করার ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে প্রসত্মাবনা পাঠাচ্ছি। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের প্লানিং সেল হয়ে বিষয়টি শিল্পমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্লানিং মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একনেকে পাশ হয়ে তার পর তা কার্যকর হবে। তিনি বলেন, জননেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া চিনিকলের স্বার্থে চিনিকলকে যাতে করে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগনিত করা যায় সেই লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যায় বর্তমান সরকারের মেয়াদেই কুষ্টিয়া চিনিকল দর্শনা চিনিকলের আদলে ডিসটিলারী নির্মাণ করা সম্ভব হবে। সদর উদ্দিন খান আরো বলেন ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন দর্শনা চিনিকল শুধুমাত্র চিনি বিক্রিতে মোটা অংকের লোকসান গুনছে। আর ডিসটিলারী শাখায় লাভ হচ্ছে বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সেখানে কর্মরত সকল শ্রমিক-কর্মচারী এবং কর্মকর্তারা নিয়মিত বেতনসহ লভ্যাংশও পাচ্ছেন। তিনি বলেন দর্শনা ডিসটিলারীতে প্রতি বছর এ্যালকোহল উৎপাদন হয় ৪৫ লাখ প্রুপ লিটার। যার বাৎসরিক লক্ষমাত্রা ১৩হাজার টন। সদর উদ্দিন খান আরো বলেন ডিসটিলারী উৎপাদনের প্রধান  উপাদান হচ্ছে চিটাগুড়(মোলাসেস)। কুষ্টিয়া চিনিকলে মোলাসেস প্রাপ্তীতে কোন সমস্যা হবার কথা নয়। এখান থেকে যে পরিমান মোলাসেস পাওয়া যাবে। তা ছাড়াও আশপাশ চিনিকল বিশেষ করে মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর চিনিকল, পাবনা ও নাটোর চিনিকল থেকে মোলাসেস সংগ্রহ করা যাবে। এক্ষেত্রে চিনিকলগুলো মোলাসেস’র ন্যায্য মূল্য পাবে। এব্যাপারে কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল আলম হানিফ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি কুষ্টিয়া চিনিকলে ডিসটিলারী করার ব্যাপারে খুবই আনত্মরিক। পরিকল্পনাটি বাসত্মবায়ন হলে কুষ্টিয়া চিনিকল বছরে মোটা অংকের মুনাফা অর্জনে সক্ষম হবে। সেই সাথে সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব পাবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাঞ্চন কুমার/কুষ্টিয়া

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here