কাজ না পেয়ে পেশা পরিবর্তনের দিকে কুষ্টিয়ার অধিকাংশ স্বর্ণশিল্পীরা। সোনার দাম উর্দ্ধমুখী রূপ নিয়েছে। দফায় দফায় বেড়ে চলেছে স্বর্ণের দাম। স্বর্ণপট্টির শিল্পীদের বেশির ভাগেরই কাজ নেয়। কিছু বড় বড় দোকানের শিল্পীদের কাজ আছে। তবে তাদের আবার সোনা সংকট। অর্থাৎ খাতায় ৫ ভরি গহণার কাজ থাকলেও দোকান থেকে সোনা দেয়া হয়েছে ৩ ভরির। বাকি সোনার আশায় ধিরে ধিরে কাজ করছে শিল্পীরা।
এদিকে স্বর্ণ শিল্পীরা কাজ না পেয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। কুষ্টিয়া শহরের স্বর্ণ পট্টির ঠাকুর বাড়ি লেন, মসজিদ গলি লেন, এ.বি সুপার মার্কেট, আব্দুর রহমান সুপার মার্কেট, আজিজুর রহমান সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে এমনটিই জানা গেছে।
স্বর্ণপট্টির আব্দুর রহমান সুপার মার্কেটের স্বর্ণশিল্পী হাকিম উদ্দিন এক্কা জানায়, সোনার দাম বৃদ্ধিতে কাজের অবস্থা খুব খারাপ। কাজ না পেয়ে অনেক শিল্পী পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরো জানান, স্বর্ণের কাজ শিখতে ৫-৬ বছর অনেকে ব্যাগার খেটে কাজ শেখে। কিন্তু বর্তমানে অনেক কারিগরের চেয়ে একজন দিন মজুরী অনেক বেশি টাকা আয় করে। সে কারণে এখন নতুন করে আর কেউ এ কাজ শিখতে আসছে না। কুষ্টিয়ায় তুলনা মূলক কারিগর বেশি তার পরও বর্তমানে সোনার দাম অতিরিক্ত বাড়ার ফলে দোকানদাররা তাদের ভাই ভাসেত্ম ভাগ্নেদের কাজ দিচ্ছে। অন্য কারিগরদের কাজ দিচ্ছে না।
স্বজন প্রীতির কারণে যে সব কারিগরদের সোনার দোকান মালিক কোন আত্নীয় স্বজন নেই তারা এখন কাজ খুবই কম পাচ্ছে, অনেকে পাচ্ছে না। একে তো প্রতিযোগিতার মার্কেট তার উপর আবার স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি সব মিলিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পরেছে কুষ্টিয়ার স্বর্ণ শিল্পীদের। আর এসব কারণে দিন দিন সোনার কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে অনেক শিল্পীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারিগর জানায়, বড় বড় দোকান মালিকরা ঢাকার তৈরী গহনা কিনে নিয়ে আসায় কুষ্টিয়ার স্বর্ণ শিল্পিদের আরও কাজ কমছে। ঢাকা থেকে তৈরী গহনা কুষ্টিয়ায় আনা হয় কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঢাকার তৈরী গহনা বিভিন্ন ডিজাইনের ছোট ছোট ডাইস দিয়ে তৈরী যা দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়, এসব ডাইস মেশিনের সাহায্যে কাটিং করা হয়।
এখানে সব ডাইস সহজে পাওয়া যায় না কিছু ডাইস পাওয়া গেলেও স্বল্প সোনায় ডাইস কাটিং করা ঝামেলাসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়, আর এসব কারণে ঢাকা থেকে তৈরী গহনা আনা হতে পারে। কুষ্টিয়া জেলা স্বর্ণ শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কর্মকার জানায়, কুষ্টিয়ার স্বর্ণ শিল্পিদের জিবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষে ১৯৯৩ সালে স্থাপিত হয় কুষ্টিয়া জেলা স্বর্ণ শিল্পি সমিতি।
এক সময় এ সমিতির আওতায় মজবুব একটি সংগঠন ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তে কাজের তুলনায় স্বর্ণ শিল্পির সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায়, আবার বার বার সোনার দাম বহু গুনে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কারিগর কাজ না পেয়ে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে কাজ কমেগেছে।
প্রবীর কর্মকার জানায়, এক সময় সোনার কাজ শিখতে অনেকে তাদের সন্তানদের কাজে দিতে আসতো। এখন আর সোনার কাজ কেউ শিখতে আসে না। কারণ সোনার কাজ শিখতে ৫-৬ বছর প্রায় সময় লেগে যায়। আর যারা কাজ শিখেছে তারাই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাঞ্চন কুমার/কুষ্টিয়া