কুষ্টিয়ার তিলের খাজা পরিনত হয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পে। সারা বছরই তৈরী করা হয় তিলের খাজা। তবে শীত মৌসুমে এর আলাদা কদর রয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত চলবে তিলের খাজা মৌসুম। কুষ্টিয়ার হাজারো ঐতিহ্যের মধ্যে একটি তিলের খাজা। কুষ্টিয়ার তিলের খাজার নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন লোকের সংখ্যা কমই আছে। এক সময় শুধু স’ানীয় চাহিদা পূরণের লক্ষে তিলের খাজা তৈরি করা হতো। কালের আবর্তে এর কদর বেড়েছে দেশ জুড়ে। এটি এখন পরিনত হয়েছে একটি ক্ষুদ্র শিল্পে।
এ ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছে বাড়তি লোকের কর্মসংস’ান। এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধাও সৃষ্টি করা হলে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এ কারণে সম্ভাবনা সত্বেও প্রসার ঘটছে না এসব ক্ষুদ্র্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের। স্বাধীনতার পরে দেশের অনেক কিছু বদলালেও, বদলায়নি এ শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পীদের ভাগ্য। তিলের খাজা তৈরী শিল্পীদের সাথে কথা বললে এমনটিই জানান তারা।
কুষ্টিয়ার তিলের খাজার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের সময়ে এর আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়ায়। জানা গেছে, এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পাল সমপ্রদায়ের লোক এ উপাদেয় খাদ্যটি তৈরি করত। ভারত পাকিস’ান বিভক্ত হবার আগে শহরের দেশওয়ালী পাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার তিলের খাজা তৈরী করত। এর পর থেকেই কুষ্টিয়ায় আস্তে আস্তে তিলের খাজার প্রসার ঘটতে থাকে। ৭১’র পর থেকে কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়ায় গড়ে ওঠে তিলের খাজা তৈরীর কারখানা। তখন থেকেই ক্রমে কুষ্টিয়ার তিলের খাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশে জুড়ে। বর্তমানে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা নামে দেশের বিভিন্ন জেলায় এর কারখানা রয়েছে। অন্য জেলার কারখানাতেও কুষ্টিয়ার কারিগররাই কাজ করে।
কুষ্টিয়া থেকে কাজ শিখে তারা অন্য জেলার কারখানায় কাজ করছে। কুষ্টিয়ার বিখ্যাত ১নং নিউ স্পেশাল ভাই ভাই তিলের খাজা নামে ঢাকা, খুলনা, রাজবাড়ী, সৈয়দপুর এবং কুষ্টিয়ায় তৈরি হচ্ছে তিলের খাজা। কুষ্টিয়ার এ তিলের খাজা কারখানার একক মালিকানা নেই। সারাদেশে যৌথ মালিকানায় এটা পরিচালিত হয়। তবে কুষ্টিয়ায় মূল দায়িত্বে রয়েছেন আব্দুল মজিদ মেম্বর। তিনি জানান, বর্তমানে তিলের খাজা মৌসুম চলছে। চলবে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত। তিনি আরো জানান, বর্তমানে ২০০ কেজি তিলের খাজা প্রতিদিন উৎপাদন করা হচ্ছে। অন্য মৌসুমে ৮০-১০০ কেজি তিলের খাজা উৎপাদন করা হতো। তিলের খাজা তৈরির প্রধান উপকরণ তিল ও চিনি। চূলায় চাপানো বড় লোহার কড়াইয়ের মধ্যে চিনি দিয়ে গণগণে আগুনে জাল দিয়ে তৈরী হয় সিরা। নির্দিষ্ট তাকে আসার পর নামানো হয় চুলা থেকে।
হালকা ঠান্ডা হলে, চিনির সিরা জমাট বেধে যায়, তখন শিং এর মত দো-ডালা গাছের সাথে হাতে টানা হয় জমাট বাধা চিনির সিরা। এক পর্যায়ে বাদামী থেকে সাদা রঙে পরিণত হলে কারিগর বিশেষ কায়দায় হাতের ভাজে ভাজে টানতে থাকে। তখন এর ভিতরে ফাপা আকৃতির হয়। সিরা টানা শেষ হলে রাখা হয় পরিস্কার স’ানে। নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছাড়ানো তিল। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল তিলের খাজা। পরে এগুলি প্যাকেটজাত করে চালান দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন স’ানে।
ব্যবসার জন্য যথেষ্ট পুঁজি প্রয়োজন। ব্যবসা বড় হলে এ পেশার সাথে নিয়োজিত কয়েক হাজার মানুষ’র কর্মসংস’ানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। কুষ্টিয়ার তিলের খাজা তৈরি ও বিক্রয়ের সাথে নির্ভর করছে কুষ্টিয়ার ও বাইরের জেলার কয়েক হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা। এ শিল্পটিকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।
কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া থেকে