সোহানুর রহমান ::

উত্তরের নদ-নদীময় জেলা কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো যুব নেতৃত্বের চর সম্মেলন। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ইয়ুথনেটে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় প্রতীকি যুব সংসদ ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের আয়োজনে দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বক্তারা বর্ধিত জলবায়ু অভিযোজন অর্থায়নের জন্য আহ্বান জানান। স্থানীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনার  বাস্তবায়ন ও স্থানীয় ঝুঁকি নিরসনে সমাজভিত্তিক সমাধান, এর ভিত্তিতে সুষম বরাদ্দের কার্যকর ব্যবহারের উপর গুরত্বারোপ করেন বক্তারা।

সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, অতিমাত্রায় নদীভাঙন চরের মানুষদের বাসস্থান কেড়ে নিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে হয়েছেন উদ্বাস্তু। বারবার হারাচ্ছেন তাদেও ফসল ফলানো কৃষি জমি। কৃষিসহ অনেক সম্ভাবনা দিক থাকলেও দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বারবার বন্যায় চর এলাকার জনগোষ্ঠির সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিসহ জীবন-জীবিকা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অনেকাংশে কর্মসংস্থান না থাকার ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক চাষী পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে এবং সাময়িক আয়ের সন্ধানে দেশের অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে। দুর্যোগের সময়ে দুর্গম চরের বাসিন্দারা বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি বিপন্নতার মধ্যে পড়ে এবং দুর্ভোগ পোহায়। ক্ষতি কমানোর জন্য বন্যা আশ্রয়ন কেন্দ্র পর্যাপ্ত নেই। নেই কমিউনিটি ক্লিনিকও। শিশু এবং কিশোররা ন্যূনতম মৌলিক সামাজিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে যা তাদের বৃদ্ধি, বিকাশ, সুরক্ষা এবং অংশগ্রহণকে ব্যাহত করে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে চর ইয়ুথনেটের বাসিন্দা শাহিনা আক্তার সম্মেলনে বলেন, চরাঞ্চলের মেয়ে শিশুরা বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ার পর অল্প বয়সে গর্ভধারণ করে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না থাকায় মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার বেশি চরাঞ্চলে। যাতায়াতের অসুবিধার জন্য চর থেকে শহরের হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মারা গিয়েছে একাধিক গর্ভবতী মা এবং অন্যান্য রোগী। আমার নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা চাই এবং কিশোরীদের জন্য স্কুল চাই।

চর সম্মেলনের আহ্বায়ক  সুজন মোহন্ত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন শুধু কুড়িগ্রাম কিংবা বাংলাদেশের সমস্যা নয় এটি একটি বৈশ্বিক সংকট। আমরা আমাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি করার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের হিস্যা, দাবী তুলে ধরতে চাই বহিবিশ্বে। জলবায়ু সুবিচার আমাদের ন্যায্যতার দাবী। এ সংকট মোকাবেলায় আমরা তরুণরা স্থানীয় পর্যায় থেকে কন্ঠস্বর তুলে ধরতে চাই। চরের মানুষদের  অধিকারের ও ন্যায্যতার কথা তুলে ধরতে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমরা সহানুভূতি, অনুকম্পা বা অনুদান চাই না। আমরা চাই ন্যায্যতা, সুবিচার এবং দায়িত্ববোধ।
ইয়ুথনেটের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান জানান, আমরা চরকে আর ক্ষয়-ক্ষতির প্রতীক হিসেবে দেখতে চাইনা। আমরা চাই চরের নয়া ব্রান্ডিং- জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীল, আধুনিক ও স্মার্ট চর। স্থানীয়, লোকায়াত ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানকেও গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে চরকে স্মার্ট ও জলবায়ু সহনশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। চরের উপর বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

দিনব্যাপী এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুর রহমান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ আফরোজা বেগম আলপনা, রৌমারী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার স্মৃতি, সাংবাদিক সফি খান, ইয়ুথনেটের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, সেভ দ্য চিলড্রেনের টেকনিক্যাল ম্পেশালিস্ট ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।

চর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কুড়িগ্রামের তরুণ জলবায়ুকর্মী স্বপন সরকার।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here