শুভ নববর্ষ! বিদায় ২০১১, স্বাগতম ২০১২। সবার মঙ্গল আর শান্তি কামনায় রোববার শুরু হচ্ছে ইংরেজি নতুন বছর।

২০১১ সালের সুখ-দুঃখের সব হিসাব-নিকাশ পেছনে ফেলে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শুরু হচ্ছে ২০১২ সাল। সুখ-সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় নতুন বছরকে স্বাগতম। সবাইকে ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম-এর পরিবারের পক্ষ থেকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা।

‘ছন্দে ছন্দে পদে পদে অঞ্চলের আবর্ত-আঘাতে/উড়ে হোক ক্ষয়/ ধূলিসম তৃণসম পুরাতন বৎসরের যত/ নিষ্ফল সঞ্চয়’- এভাবেই কবিতায় নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সেই নতুন সূর্য, নতুন দিনকে স্বাগত জানাতেই বিশ্ববাসী ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকেই শুরু করে নানা আয়োজন। আতশবাজি, গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড় এমনি বহুমাত্রিক আনন্দ-উৎসবে বরণ করে ‘শূন্যঘণ্টা’। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হলো নানা আনুষ্ঠানিকতায়।

শনিবার রাত ১২টার পরপরই সারা বিশ্বে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হবে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। বর্ষবরণের আনন্দোৎসবে অংশগ্রহণ করে সর্বস্তরের মানুষ। ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় সবার মধ্যে।

দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া।

এছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন দেশবাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেছে।

ইংরেজি নতুন বর্ষের শুরুতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তার বাণীতে সবার জীবনে উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও অনাবিল সুখ কামনা করেছেন।

শনিবার দেয়া এক বানীতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নববর্ষ উদযাপন আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ইংরেজি নববর্ষ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে নতুন বছরে আগের বছরগুলোর জঞ্জাল ধুয়েমুছে সাফ হওয়ার কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী, প্রবাসী ও বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বিদায়ী ২০১১ আমাদের জাতীয় জীবনে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, বিদায়ী বছরে আমরা উদযাপন করেছি স্বাধীনতার এবং বিজয়ের ৪০ বছরপূর্তি উৎসব। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে দেশবাসী নতুন করে শপথ নিয়েছেন।

এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীতে, ইংরেজি নববর্ষে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।  কামনা করেছেন সকলের সুখ, স্বাচ্ছন্দ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

বেগম জিয়া তার বানীতে বলেন, পুরনো বছরের ব্যর্থতা, গ্লানি, হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে নবউদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায় নববর্ষ। পাশাপাশি অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে তৎপর হতে পারলে নতুন বছরটি হয়ে উঠতে পারে সাফল্যময়।’

২০১১ সাল নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশিদের কাছে। তথ্য-প্রযুক্তির সাফল্যের পাশাপাশি পুরো বছর জুড়েই টালমাটাল থেকেছে পুঁজিবাজার। জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি,মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া, জ্বালানী সহ অন্যান্য খাতে ভর্তূকি, বিদেশী সাহায্য আশানুরুপ না পাওয়ার মত বিষয়গুলো সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা নতুন বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিকে আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পুরো বছর জুড়ে সরকারের দিন বদলের স্লোগানকে অনেকটাই ম্লান করেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, ক্রসফায়ার বিতর্কের মত বিভিন্ন বিষয়।  আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নৈরাজ্য বাগে আনা সম্ভব হয়নি। এসব নিয়ে সরকারের সমালোচনা ছিল ব্যাপক।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত বিষয় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস, বহুল প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের অগ্রগতি। আর ব্যর্থতার কাতারে নিজদলীয় শীর্ষ ব্যক্তিদের সমালোচনায় মুখর সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। মন্ত্রী পরিষদে পরিবর্তনও এসেছে।

সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ সমালোচার খোরাক জোগায়।এছাড়া নিজ বক্তব্যের জন্য বছর জুড়ে আলোচিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ‘এই শুনলাম, পত্রিকা পড়ে জানলাম, হত্যা-খুন বিচ্ছিন্ন ঘটনা, বিগত সব সময়ের চেয়ে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো’ এধরনের বাক্যবাণে সমালোচিত হয়েছেন সাহারা খাতুন। একইভাবে আরেক মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সমালোচিত হয়েছেন, ‘স্টুপিড’ আর ‘রাবিশ’ শব্দ ব্যবহারে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর খাতা জুড়ে আশ্বাস থাকলেও প্রত্যাশার খাতা শূণ্যই রয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি না হলেও তার সরস সাফাই হতবাক করেছে বিশিষ্টজনদের।

আন্দোলন-সংগ্রামে বিরোধী দল ছাড়াও চলতি বছরে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি পুলিশী হামলার শিকার হয়েছে একাধিকবার। মিছিলে মারাত্মকভাবে আহত হন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ক্ষমতাসীনদের এই আচরণ সুধী সমাজকে দারুণভাবে ব্যথিত করে।

এছাড়া সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী বাতিল, ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, ট্রানজিট-করিডোর, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মিয়ানমারের সাথে বৈরী সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে বছর জুড়েই ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

উচ্চ দ্রব্যমূল্যে থেকে রেহাই কিংবা জীবন যাত্রার লাগামহীন ব্যয় থেকে মুক্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নতুন বছরে সবার অন্যতম প্রত্যাশা। প্রত্যাশা থাকবে স্থিতিশীল অর্থনীতির। নজর থাকবে নতুন বিনিয়োগ , শ্রম বাজারে কর্মসংস্থান আর রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতগুলোর দিকে। সামাজিক নিরাপত্তা, শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন আরো শক্তিশালী হবে সেই আকাঙ্ক্ষায় অব্যাহত থাকবে পথ চলা। শুভ নববর্ষ, শুভ ২০১২।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/হেড অব নিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here