ষ্টাফ রিপোর্টার :: বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বছর পূর্তিতে, বাংলাদেশ বেতারের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে গত ১৫ ডিসেম্বর সর্ব প্রথম প্রকাশিত এবং প্রদর্শিত হল বাংলাদেশ বেতারের উপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্য চিত্র ‘ধ্বনির অগ্রপথিক’।
বাংলাদেশ বেতারের এ প্রামাণ্য চিত্র ‘ধ্বনির অগ্রপথিক’ যার পরিকল্পনা, গবেষণা এবং পরিচালনা করেছেন কামাল আহমেদ।
প্রথমত তিনি বাংলাদেশ বেতারের একজন উর্ধ্বতন কর্তকর্তা (বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত) এবং দ্বিতীয়ত তিনি একজন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী। তাঁর দুই-সত্ত্বার সংমিশ্রণে, তাঁর প্রগতিমূখী ভাবনার আন্দোলনে নির্মিত হয়েছে এই প্রামণ্য চিত্রটি।
এ প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, এতো বড়ো মাপের একটি কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। বাংলাদেশ বেতারের দীর্ঘ ৭৫ বছরের পথ-চলায় বাংলাদেশ বেতারকে নিয়ে প্রথম প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ এবং এই কাজটি যে আমার মাধ্যমে সম্ভব হয়ে উঠবে – ভাবতেই আনন্দে শিহরিত আমি। মনে- প্রাণে কাজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম এবং বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক মহোদয় কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদের অনুপ্রেরণা এবং তত্ত্বাবধানে শেষ পর্যন্ত কাজটি সফলতার মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশ বেতারকে নিয়ে হয়তো আরো নতুন কিছু হবে, তখন এই পুরোনোকেও স্বরণ করতে হবে।
প্রাণের চেয়েও প্রিয় যে-দেশ, সেই দেশের কথা দিয়েই প্রামাণ্য চিত্রের শুরু। তারপর সূর্যোদয়ের দৃশ্যেকে দেখিয়ে দিনের শুরুকে বেঝানো এবং প্রতি দিনের শুরুতেই ঘোষণার মাধ্যমে বেতার তার প্রচার কার্যক্রম শুরু করে; শোনা যায় সেই ঘোষণার উচ্চারণ।
১৯৩৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বেতার যখন আনুষ্ঠানিকভাবে তার যাত্রা শুরু করে, সে- সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু । সেই বিশ্বযুদ্ধের দৃশ্যও প্রামাণ্য চিত্রে সংযোজিত হয়েছে। ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের যে- ভাড়া বাড়িতে বেতার প্রথম তার প্রচার-কার্যক্রম শুরু করে, সেই বাড়ির ছবিও আছে এতে। বেতার তার প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে যা যা প্রচার করেছিল তার পরিচয়ও তুলে ধরা হয়েছে প্রামাণ্য চিত্রে।
দেখানো হয় বেতারের প্রথম সঙ্গীত শিল্পী এবং নাট্য শিল্পীর ছবি। ১৯৪০ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বেতারে এসে যে অনুষ্ঠানটি করেন তার ইতিহাসও, নাজিম উদ্দিন রোড থেকে বেতারের শাহবাগ গমন, বিশেষ করে বেতারে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচারকে কেন্দ্র করে যে- পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সে সম্পর্কে ও পরিস্কার ধারণা আছে প্রামাণ্য চিত্রটিতে।
সাবেক বেতার কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুজাক্কের, আশফাকুর রহমান খান এবং আশরাফুল আলমের দেয়া বক্তব্যে অনেক অজানা কথাই জানা হয়ে যায়। জানা হয়ে যায় ‘ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র’ থেকে ‘রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা’ তার পর রেডিও বাংলাদেশ’ এবং শেষে এই বেতারের নাম হয় ‘বাংলাদেশ বেতার’।
বেতার কেন্দ্রগুলোর ছবি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফোন-ইন- অনুষ্ঠান উদ্বোধনের ছবি, বেতারের সবগুলো ইউনিটের ছবি, বিভিন্ন ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারের দৃশ্য, ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসসহ বার্তা বিভাগ এবং খবর পড়ার দৃশ্য, বেতারের নানারকম অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্যবহুল ছবি, সঙ্গীত শিল্পী এবং নাট্য শিল্পীদের অনুষ্ঠান ধারণের অংশবিশে, খেলার ধারাবিবরণী, এফ এম অনুষ্ঠান সম্প্রচার কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য ছবিও স্থান পেয়েছে প্রামাণ্য চিত্রে।
এ ছাড়া ভিডিও চিত্র এবং বর্ণনার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে ঝড় কিংবা জলোচ্ছাসের সময় বেতারের কার্যকারিতা।
বাংলাদেশ বেতারের আন্তর্জাতিক পুরস্কারের ছবি, সম্মানার ছবি, শ্রোতাদের বেতার শোনার দৃশ্য, শ্রোতা সংগঠনের খবর এবং বাংলাদেশ বেতারের কার্যক্রম সম্পর্কে মহাপরিচালক কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য এবং বেতারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত নানরকম তথ্যমূলক ছবিও প্রদর্শিত হয়েছে ‘ধ্বণির অগ্রপথিক’ নামের প্রামাণ্য চিত্রে।
প্রামাণ্য চিত্রটির আবহ সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন পরিচালক কামাল আহমেদ। ২০ মিনিট স্থিতির এই প্রামান্য চিত্রটি বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই নির্মিত হয়েছে। ধ্বনির অগ্রপথিক নামের প্রামান্য চিত্রের পান্ডুলিপি রচনায়- শফিকুল ইসলাম বাহার, চিত্র গ্রহন্থে তৈয়েব রহমান, সম্পাদনায়- সোহেল রানা মুন্না, কারিগরি সহযোগিতায়- স্বপ্ন মিডিয়া কমিউনিকেশন এবং এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে- বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ বেতারের প্রামান্য চিত্র ‘ধ্বনির অগ্রপথিক’ এর পরিকল্পনা, গবেষণা ও পরিচালনায় কামাল আহমেদ রেখেছেন তাঁর শৈল্পিক যোগ্যতার ছাপ।