কাপ্তাইয়ে সুইডেন পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের ছাত্রদের সাথে পুলিশ-বিজিবি’র ব্যাপক সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্র নিহত হয়েছে। সংঘর্ষে গুলিতে আহত ছাত্র মো: রায়হান (২২ কে হাসপাতালে ভর্তির রাত সাড়ে ৮টায় তার মৃত্যু হয়। সে সুইডিসের কনেকসেশন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র বলে জানাগেছে। সংঘর্ষে কাপ্তাই পুলিশ ফাড়ীঁর ইনর্চাজ ইব্রাহিম খলিল, ছাত্র ও স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ প্রায় ১০ জন আহত হন। এই ঘটনায় পলিটেকনিকের ছাত্ররা কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, পলিটেকনিকের ৪ শিক্ষককে প্রায় এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর বিজিবি এসে তাদের উদ্ধার করেছে। পলিটেকনিকের ছাত্ররা স্থানীয় অটোরিক্সা চালক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর করে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, বিকেল ৫টা নাগাদ চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই পলিটেকনিকে শাকিল নামের এক ছাত্রের কাছে বেড়াতে আসা আরাফাত নামের এক ছাত্র বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে আটক করে। হেলম্টে ব্যবহার না করা এবং বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর দায়ে ইউএনও উক্ত আরাফাতকে স্থানীয় সিএনজি সমিতির কার্যালয়ে আটক করে ২শ’ টাকা জরিমানা করে। দন্ডপ্রাপ্ত আরাফাত পুলিশের কাছে আটক অবস্থায় জরিমানার টাকা পরিশোধের কথা বলে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি পলিটেকনিকের ছাত্রদের জানিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের শতাধিক ছাত্র অতর্কিতে ক্যাম্পাস থেকে কাপ্তাই নতুন বাজার এসে পুলিশ ও ইউএন’র হাতে আটক আরাফাতকে ছাড়িয়ে নিতে কাপ্তাই অটোরিক্সা চালক সমিতির কার্যালয় ঘেরাও করে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান, কাপ্তাই পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইব্রাহীম, কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ, সুইডেন পলিটেকনিকে ৪ শিক্ষক ও স্থানীয় ২ সাংবাদিককে অবরদ্ধ করে রাখে। এসময় ছাত্রদের আক্রমনে আহত হয় কাপ্তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই ইব্রাহিম। খবর পেয়ে কাপ্তাই থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও কাপ্তাই ওয়াগ্গা ব্যাটেলিয়ন থেকে বিজিব সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অবরুদ্ধ আহত পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। এসময় ছাত্রদের সাথে পুলিশ- বিজিবি’র ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্ররা লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশকে আক্রমন করে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে ৪/৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পলিটেকনিকে কনষ্ট্রাকশন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র রায়হান (২২) মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। পুলিশ গুলি ছোঁড়ার পর ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের উদ্ধার করে।
এদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত রায়হানকে স্থানীয় চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান মিশন হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে রেফার করে চিকিৎসকরা। চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়ার পথে রায়হান মারা যায় বলে পলিটেকনিকের ছাত্ররা জানায়। নিহত ছাত্রের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি।
কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিকে ছাত্র জাকির, হাসান, মাহবুবসহ আরো অনেকে জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালিয়েছে এতে এক ছাত্র নিহত এবং কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জানান, পুলিশকে গুলি চালানোর জন্য তিনি কোন নির্দেশ দেন নি। তবে পুলিশ কাপ্তাই সার্কেলের এ এস পি’র উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে বলে তিনি জেনেছেন।
সংঘর্ষে আহত কাপ্তাই পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইব্রাহীম জানান, আরাফাত নামেক এক ছাত্রকে ২শ’ টাকা জরিমানা করার পর তিনিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলিটেকনিকের ছাত্রদের হাতে প্রায় ১ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। ছাত্রদের সাথে পুলিশ-বিজিবি’র সংঘষে একাধিক পুলিশ আহত হয়েছে বলে তিনি জানান। কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিকে অধ্যক্ষ মোসাদ্দেকুল বারীর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।
ঘটনার পর সমগ্র কাপ্তাইয়ে তীব্র উত্তেজনা ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় নতুন বাজারের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এদিকে রাতে কাপ্তাই নতুন বাজারের কৃষি অফিসে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্টিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুজ্জামান, কাপ্তাই পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট সুইডিস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল বারী, কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান অংশুই চাইন চৌধুরী, ওয়ান বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির কর্মকর্তা, কাপ্তাই ব্যবসায়ী সমিতি ও পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/চট্রগ্রাম