Canada Bangla Website

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত মেয়ে তিথি।কানাডায় স্থায়ীভাবে থাকার স্বপ্ন তার চোখে।চারিদিকে অনেক মানুষকেই শুনছে সেকানাডা চলে যাচ্ছে।কিন্তু কিভাবে?

এব্যাপারেই খোঁজ নিতে তিনি গেলেন একটি কনসালট্যান্সি ফার্মে।চাকচিক্যে ভরা সেই অফিসের ফ্রণ্টডেস্কের ভদ্রলোকটি তিথিকে সংক্ষেপে বুঝিয়ে দিল কিভাবে তারা চোখের নিমিষেই তাকে কানাডা পাঠিয়ে দিবে।আর বিস্তারিত জানতে হলে তাদের সাথে বড় একটা অংকের টাকা দিয়ে সাইন-আপ করতে হবে।তিথির মনে তখন দ্বিধা।এতগুলো টাকা একসাথে কিভাবে যোগাড় হবে?

আলম সাহেব বাংলাদেশের একজন নামকরা ডাক্তার।বছর দু’য়েকআগে একটি কনসালট্যান্সি ফার্মে টাকা দিয়েছিলেন কানাডা’র ইমিগ্রেশন করিয়ে দেবার জন্যে।সম্প্রতি সেই কনসালট্যান্সি ফার্ম মারফত জানতে পেরেছেন যে, তার কেসটা রিফিউজ হয়েছে।এ ব্যাপারে বারংবার কনসালট্যান্সি ফার্মের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েও তিনি তা পারেননি।আর তার কষ্টার্জিত লাখ তিনেক টাকা? সেটা ফেরত পাবার আশা তিনি বাদই দিয়েছেন।

তিথি এবং আলম সাহেবের মতো ঠিক এরকমই হাজারো বাংলাদেশী আজ কানাডা যাবার স্বপ্নবোনে।কিন্তু কিছু অদক্ষ কনসালট্যান্সিফার্ম আর তথাকথিত যোগ্যতা এবং লাইসেন্সবিহীন দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে।একারণেই কানাডা’র ইমিগ্রেশন প্রত্যাশী বাংলাদেশীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী দ্বারা পরিচালিত প্ল্যাটফর্ম – ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’।

প্রবাসেও বাংলাদেশে বসবাসকারী কিছু তরুণ পেশাজীবি কানাডা’র অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্যভিত্তিক ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ওয়েবসাইটি তৈরি করেছেন। ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ প্ল্যাটফর্মের ফাউণ্ডার ভলান্টিয়ারদের মধ্যে অন্যতম মেহমুদ উজ জামান এবং সাদিয়া রহমান স্বাতী বর্তমানে কানাডা’র স্থায়ী অভিবাসী।এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষজন ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ টীমের সাথে ভলান্টিয়ার হয়ে কাজ করছেন।

যাঁরা কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসতে চান এবং যাঁরা নতুন অভিবাসী হিসেবে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাস শুরু করেছেন, তাঁদেরকে সম্ভাব্য সবধরনের তথ্যগত সহযোগিতা প্রদানের জন্যে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ২০১৬ সালে ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’এর ভলান্টিয়ারগণ তাদের ফেসবুক পাতাটির (https://www.facebook.com/immigrationandsettlement) কার্যক্রম শুরু করেছিল।এর ধারাবাহিকতায় একই বছর মার্চে একটি ওয়েবসাইটের (www.immigrationandsettlement.org) উদ্বোধন করা হয়।পরবর্তীতে তাদের ফেসবুক গ্রুপেরও (https://www.facebook.com/groups/immigrationandsettlementvolunteers/) যাত্রা শুরু হয়।একই সাথে ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ ইউটিউব চ্যানেলের (https://www.youtube.com/immigrationandsettlement) মাধ্যমেও কানাডায় ইমিগ্রেশন প্রত্যাশী ব্যক্তিরা উপকৃত হয়ে থাকেন।

 

‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ওয়েবসাইটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কানাডা’র ইমিগ্রেশ নপ্রসেসিং -এর সকল বিষয় সবার কাছে বাংলাভাষায় সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করা।এজন্য কানাডা’র অভিবাসন সংক্রান্ত সকল তথ্যগত সহযোগিতার জন্যে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে।অভিবাসন সংক্রান্ত সকল তথ্যের সমন্বয়ে একটি শক্ত সঠিক রেফারেন্স নির্ভর তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছে।এটা নতুন অভিবাসীদের জন্য কানাডায় বসবাস সংক্রান্ত সকল তথ্যগত সহযোগিতার জন্যে একটি প্ল্যাটফর্ম।স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার যে স্থানটি হবে স্বেচ্ছাসেবীদের নিজস্ব দক্ষতা উন্নয়নের একটি সুযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।

তাদের সঙ্গে কানাডিয়ান অভিবাসন বিষয়ক কোন আইনজীবি অথবা কানাডিয়ান অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কোনও প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।এখানকার সকল তথ্য সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা হয়েছে।শুধুমাত্র কানাডায় অভিবাসন বিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তর স্বেচ্ছাসেবীরা অভিজ্ঞতার আলোকে দিয়েছেন।ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের এই গ্রুপটির সকল তথ্য এবং সহযোগিতা সকলের জন্যে উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে ব্যবহারের উপযোগী।

এই প্লাটফর্ম থেকেই মেইলে সেবা গ্রহণকারীদের ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি সম্পূর্ণ গোপন থাকবে, কখনও তা ব্লগে অথবা অন্যকোন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবেনা।ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের পাতা এবং গ্রুপটি সম্পূর্ণ রূপে রাজনীতি মুক্ত।ব্যক্তিগত আক্রমণ, অশালীন মন্তব্য, ধর্মপ্রচার ও ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত, উদ্দেশ্য মূলক স্প্যামিং, বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন প্রচার, ব্লগ বা ফেসবুকের পরিবেশ নষ্টকারী ইত্যাদি বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা হয় এই ওয়েবসাইট, ফেসবুক গ্রুপ এবং পেইজে।মেধা সত্ত্ব লঙ্ঘন করে, এমন কোন লেখাকে স্বেচ্ছাসেবীগণ সমর্থন বা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন।মাতৃভাষা বাংলায় স্বেচ্ছাসেবীগণ সকল লেখা প্রকাশ করে থাকেন।কানাডা’র স্বার্থ এবং আইনবিরোধী কোন বক্তব্য ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকগ্রুপ এবং পাতায় প্রকাশিত হবেনা এবং স্বেচ্ছাসেবীগণ এধরনের বক্তব্য বা লেখাকে সমর্থন করেন না।

এছাড়া ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’  ইউটিউব চ্যানেলে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিক্ষার একটি প্রাথমিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।খুব সহজভাবে ফ্রেঞ্চ শেখানোর জন্যে একজন স্বেচ্ছাসেবী সকলকে সাহায্য করবেন।এছাড়াও ‘আইইএলটিএস’এর প্রতিটি মডিউলে ভালো স্কোর তোলার জন্যে সহযোগিতা এখানে পাওয়া যাবে।কানাডায় অভিবাসন প্রত্যাশী এবং বাংলা ভাষী যে কেউ ফেইসবুক গ্রুপ, পাতা, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইটের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এই অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগে অবদান রাখতে পারবেন।

কানাডা’র সাসকাচুয়ান প্রভিন্সের রেজিনা শহরের স্থায়ী অধিবাসী সাদিয়া রহমানস্বাতী ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতায় তাঁর কানাডা ‘রইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।বর্তমানে ‘ব্যাংক অব মন্ট্রিয়লে’ কর্মরত সাদিয়া কানাডায় তাঁর নিজের সেটেলমেন্ট এবং জবের ক্ষেত্রেও ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতা লাভ করেছেন।

সম্পূর্ণ অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী মূলক কাজের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মেহমুদ উজ জামান জানান, ওয়েবসাইটি কানাডায় ইমিগ্রেশন এবং সেটেলমেন্ট বিষয়ক বিনামূল্যে তথ্যগত সাহায্য গ্রহণের নতুন এক মাইলফলক। ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’-এর স্বেচ্ছাসেবীগণ স্বপ্রণোদিত ভাবে চান যেন বাংলা ভাষাভাষীরা অপার সম্ভাবনাময় কানাডায় অভিবাসী হিসেবে আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে আরও মজবুত করেন।এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব ব্র্যান্ডিং-এর যুগে ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে কানাডার মাটিতে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ লাভ করেন।

গত ২মার্চ ২০১৮ তারিখে ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্টের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হলো।বর্ষপূর্তির ‍দিনে গ্রুপটির প্রধান উদ্যোক্তা মেহমুদ উজ জামান বলেন, ‘আজকের দিনটাতে আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। অনেকটা ঈদের আনন্দের মতো।আজ থেকে এক বছর আগে ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ টীমের ওয়েবসাইটের শুভ সূচনা হয়েছিল। স্পষ্টই মনে পড়ে সেই দিনটির কথা যেদিন সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কানাডা’র ইমিগ্রেশন এবং সেটেলমেন্ট প্রত্যাশী মানুষদের জন্যে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক ওয়েবসাইটটির জন্ম এবং পথচলা শুরু হয়েছিল।’

মেহমুদ উজ জামান বলেন, ‘বাংলা ভাষাভাষীদের জন্যে কানাডা’র ইমিগ্রেশন এবং সেটেলমেন্ট নিয়ে এরকম তথ্য সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট আর আছে কিনা আমার জানা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী এবং বিভিন্ন পেশাজীবির ভলান্টিয়ার মানুষগুলো প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন কানাডা’র ইমিগ্রেশন এবং সেটেলমেন্ট প্রত্যাশীদেরকে তথ্যগত সহযোগিতা করার জন্যে।একই সাথে স্বেচ্ছাসেবীদের নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ টীমের ভলান্টিয়ারগণ সচেষ্ট।’

গ্রুপটির শুরুর যাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূলত ফেসবুক পেজ দিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল আমাদের। মনে পড়ে যায় সেইদিন গুলোর কথা, যখন দেখতাম কানাডা’র ইমিগ্রেশন প্রত্যাশী অসহায় মানুষজন বিভিন্ন যোগ্যতাবিহীন স্বঘোষিত ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট রূপী দালাল আর ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন, আর্থিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।সেই থেকেই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কানাডায় আসার ব্যাপারে এই আগ্রহী মানুষগুলোকে কোন আশ্বাস নয় বরং বিনামূল্যে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রদান করা।’

গ্রুপটির বিষয়ে প্রধান এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘ইমিগ্রেশন কারও ব্যক্তি সম্পত্তি নয়, বরং এটি প্রত্যেকের অধিকার এবং অপার সম্ভাবনার দেশ কানাডা’য় আসতে হলে এইইমিগ্রেশনের কাজগুলো করার জন্যে একজন শিক্ষিত ব্যক্তির কোন তথাকথিত কনসালট্যান্টের শরণাপন্ন হবার বিন্দুমাত্র দরকার নেই। ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ডসেটেলমেন্ট’ টিমের সহজবোধ্য ওয়েবসাইট, ফেসবুকগ্রুপ, ইউটিউব চ্যানেল আর এক ঝাঁক ভলান্টিয়ারের নিরলস সহযোগিতায় প্রত্যেকেই তার নিজের ইমিগ্রেশন নিজে করতে সক্ষম।’

প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শুধু উপকারই পাচ্ছেননা বরং ‘ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট’ টিমের ফেসবুক পাবলিক গ্রুপে (বেঙ্গলী স্পিকারর্স) তাদের প্রশ্নগুলোর সঠিক সমাধানও পাচ্ছেন।একই সাথে গ্রুপটির ইউটিউব চ্যানেলের সহায়ক ভিডিওগুলো থেকেও নানাভাবে উপকৃত বা দিক নিদের্শনা পাচ্ছেন।

 

কানাডা গমনে সহায়তা পেতে নিচের দেয়া ঠিকানাগুলোতে আপনি একবারঘুরে আসতে পারেন।

 

ওয়েবসাইট: www.immigrationandsettlement.org

ফেসবুকগ্রুপ: www.facebook.com/groups/immigrationandsettlement

ইউটিউবচ্যানেল: www.youtube.com/immigrationandsettlement

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here