ডেস্ক রিপোর্ট::  বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই ঘটনাবহুল মেগা-ইভেন্ট। যেখানে টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ আর তাকে ঘিরে সূক্ষাতিসূক্ষ বিষয়ও দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউব ছেয়ে যায় লাখ-কোটি পোস্টে। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বকাপকে ঘিরে ২ কোটি পোস্ট বিশ্লেষণ করেছে ফিফা ও ফুটবলারদের সংগঠন ‘ফিফপ্রো’। যেখানে ফ্রান্স সবচেয়ে বেশি আপত্তিকর ও গালিগালাজের শিকার হয়েছে।

কাতার বিশ্বকাপে কিলিয়ান এমবাপেদের স্বপ্নভঙ্গ করে শিরোপা ছিনিয়ে নেয় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। ট্রাইবেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর পর তৃতীয় বিশ্বসেরার শিরোপা অর্জন করে। এরপর বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতেন আলবিসেলেস্তে সমর্থকরা। স্বাভাবিকভাবেই তাই সবচেয়ে বেশি অভিনন্দিত হওয়ার কথা মেসি বাহিনী। কিন্তু ফ্রান্সকে কেন সর্বোচ্চ গালি ও আপত্তিকর আক্রমণের শিকার হতে হলো?

বিশ্বকাপ শেষের ছয় মাস পর এ নিয়ে তারা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্বকাপজুড়ে এ নিয়ে নজরদারি করেছিল ফিফার ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্রটেকশন সার্ভিস’ (এসএমপিএস)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতার বিশ্বকাপে খেলোয়াড়, কোচ ও অফিশিয়ালদের উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার আপত্তিকর পোস্ট করা হয়েছে। সেই তালিকায় ফ্রান্স শীর্ষে, মেক্সিকো দুই, ব্রাজিল তিন এবং চারে অবস্থান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার।

ফিফপ্রোর তত্ত্বাবধানে বানানো একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্বকাপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ২ কোটি পোস্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৫টি পোস্ট আপত্তিকর বা আপত্তিকর সম্ভাবনাময় বিবেচনায় আড়াল (হিডেন) করে দেওয়া হয়।

ফিফাপ্রো’র প্রতিবেদনটি বলছে, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবে প্রায় ২ কোটি পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬৯৬টি পোস্টে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা পুরোপুরি আপত্তিকর। এগুলো ‘ফ্লাগড’ পোস্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর এই তথ্য একটি বিশেষজ্ঞ দল ‘ডাবল হিউম্যান ট্রায়াজ’ প্রক্রিয়ায় বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৯ হাজার ৬৩৬টি পোস্টের ভাষা ও বিষয়বস্তু আপত্তিকর মানহানিকর, বৈষম্যপূর্ণ ও হুমকিমূলক। টুইটারে এমন নেতিবাচক পোস্ট হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফিফার অভিযোগের পর এ ধরনের ২৩ শতাংশ পোস্ট মুছে ফেলেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ।

ম্যাচের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আপত্তিকর পোস্ট হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালের ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে। ম্যাচটিতে পেনাল্টি মিস করেছিলেন ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। এই ম্যাচ নিয়ে ১২ হাজারের বেশি পোস্ট ও মন্তব্য রিপোর্ট করেছে ফিফা। ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে করা আপত্তিকর পোস্ট ও মন্তব্যের সংখ্যা এই তালিকায় দুইয়ে—১২ হাজারে কাছাকাছি। মরক্কো ও পর্তুগালের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ রয়েছে এরপরই—প্রায় ১১ হাজার আপত্তিকর পোস্ট ও নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়।

গ্রুপপর্বে অন্য দলের তুলনায় মেক্সিকোর খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক আপত্তিকর পোস্ট করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে টুর্নামেন্ট এগিয়ে চলার সঙ্গে ব্রাজিল, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের নিয়ে করা আপত্তিকর পোস্টের সংখ্যা মেক্সিকোকেও ছাপিয়ে যায়। পুরো বিশ্বকাপে খেলোয়াড়, জাতীয় দল এবং ফেডারেশনের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টের উদ্দেশে দেওয়া আপত্তিকর বার্তার শিকার হওয়ায় অন্যদের ছাপিয়ে গেছে ফ্রান্স। বিশ্বকাপ রানার্সআপদের নিয়ে এমন প্রায় ৬ হাজার বার্তা চিহ্নিত করেছে ফিফার সোশ্যাল মিডিয়া প্রটেকশন সার্ভিস।

আপত্তিকর পোস্টের আরেক লক্ষ্য ছিল ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া দলটিকে উদ্দেশ্য করে ৩ হাজারের বেশি আপত্তিকর বার্তা পোস্ট করা হয়। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে ইংল্যান্ড। ইংলিশ খেলোয়াড়, জাতীয় দল ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) অ্যাকাউন্ট উদ্দেশ্য করে প্রায় ৩ হাজার বার্তা রিপোর্ট করা হয়েছে।

এই তালিকায় চতুর্থ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনা। মেসিদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে দেড় হাজারের মতো আপত্তিকর বার্তা রিপোর্ট করেছে ফিফা। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল এমন বার্তা হজম করেছে ১ হাজারের একটু বেশি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here