কুষ্টিয়া শহরের মোহিনী মিলের আবাসিক এলাকা মিল লাইনের অনেক মানুষ এখন জীবন জীবিকার জন্য ঠোংগা বা বক্স তৈরীর কর্ম বেছে নিয়েছে। সামান্য আয়ে ব্যবসা চালিয়ে এখানকার অনেক পরিবারের রুটি রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে। মোহিনী মিলের শ্রমিক নরেশ চন্দ্র সরকার ১৯৮৪সালে মোহিনী মিল বন্ধ হওয়ার পর পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনপাত করতেন অন্যান্য শ্রমিকদের মত।
জীবন সংগ্রামে বেচেঁ থাকার জন্য সামান্য সঞ্চয় দিয়ে শুরু করেন কাগজের বোর্ড ও মার্বেল পেপার দিয়ে বাক্স বানানো। সেই সময়ে এই সব বাক্সর তেমন ব্যবহারও ছিল না তাই প্রথম দিকে এর বাজারজাত করা দুরুহ হয়ে পড়তো তার পরেও তিনি নিরাশ হননি। দীর্ঘ সংগ্রাম ও কষ্ট করে এই বাক্স তৈরীর ব্যবসা ধরে রাখলেন। পরবর্তিতে পরিবারের ছেলে মেয়ে বড় হলে তারা তাকে সহযোগিতা করতে শুরু করলেন। আর এই নরেশ চন্দ্র অনুসরণ করে এলাকার বহু মানুষ এ ব্যবসার সাথে উৎপোত ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। আর এর সাথে এখানকার কয়েকশত মানুষের আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। আশে পাশের বাড়ির মহিলারা এ কাজ করে বাড়তি আয় করে সংসারের জোগান দিচ্ছেন বলে জানা গেল।
সরেজমিনে দেখা গেছে মিল লাইনের অনেক পরিবার এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। সামান্য লাভ আর কষ্ট করে এই বাক্স তৈরীর ব্যবসা চালাতে অনেকে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। মিল লাইনের গৃহবধূ শুকুরন জানালেন, এটা একটি কুঠির শিল্প, এই শিল্পের ব্যাপক বিস্তার এবং এর কলবর বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে এক সময় এসববের তেমন ব্যবহার হত না কিন্তু এখন প্রচুর চাহিদা।
এমন দিন রয়েছে গ্রাহকের চাহিদা পুরন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি জানালেন, আমার এখান থেকে মিষ্টির প্যাকেট খাবারের প্যাকেট, জুতার বাক্স,শাড়ির বাক্স,বেকারীর কেকের বাক্সসহ বিভিন্ন রকমের প্যাকেট বাক্স তৈরী করা হয়। প্রকার ভেদে এই সব বাক্স তৈরী শ্রমিকদের ১ শতটির জন্য ২০ টাকা থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। একজন মানুষ সারা দিনে ১/২শতটি বাক্স তৈরী করতে পারে। এই বাক্স তৈরী করতে দীর্ঘ সময় লাগে আবার পারিশ্রমিক পাচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত।
এসব কাজে নিয়োজিত মহিলারা জানালেন,ঘরে বসে সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়তি আয় হিসেবে এই বাক্স তৈরী করে যা উপার্জন হচ্ছে সেটাই সংসারের কিছুটা প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তবে পারিশ্রমিক আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান মিল লাইন এলাকার তৈরী বাক্স শহরের সার্বিক চাহিদা পুরন করে জেলার বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটানো হয়।
এদিকে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলোচনাকালে তারা জানালেন, পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করলে বাক্স প্রতি মুল্য বৃদ্ধি পাবে তাতে সাধারন ক্রেতারা ক্ষতির মধ্য পড়বে। তবে এ ব্যবসাকে আরো ব্যাপকভাবে সমপ্রাসরনের জন্য এব্যবসার সাথে জড়িতরা বোর্ড ও কাগজের মুল্য কমানোর দাবী জানালেন।
স্কুল ছাত্র তুহিন জানালেন, প্রতিদিন স্কুলের পাশাপাশি একাজ করে সংসারের বাড়তি আয়ের জোগান দিতে হয়। বেবী ও শেলী জানাপ্রণ, সাংসারিক কাজের ফাঁকে বাড়তি আয়ের জন্য এই কাজ করি। কিন্তু সময় এবং শ্রমের মর্যাদা পাওয়া যায় না। এলাকাবাসী জানালেন, কয়েকজন ব্যবসায়ী এ ব্যবসাকে পুঞ্জিভুত করে রেখেছেন। ফলে নিজেদের ইচ্ছেমত একাজের সাথে জড়িতদের খুবই কম মজুরী দেয়।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাঞ্চন কুমার/কুষ্টিয়া