মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

চলতি মৌসুমে খুলনার পাইকগাছায় কাগজি লেবুর বাম্পার ফলন হলেও বাজারে চাহিদা ও মূল্য কম। আর লেবু চাষীরা হতাশ হচ্ছেন। বাজারে চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। নানাবিধ কারনে কাগজি লেবুর চাহিদা ও দাম কম। পুষ্টি বিশেজ্ঞর মতে, মুখের রুচি বাড়াতে লেবুর জুড়ি নেই। বাজারে বিভিন্নরকম লেবু পাওয়া যায়। কাগজি লেবু, পাতি লেবু, কমলা লেবু, মোসাম্বি লেবু, গন্ধরাজ ও বাতাবি লেবু খুব পরিচিত আমাদের কাছে।

১০০ গ্রাম কাগজি বা পাতিলেবু থেকে যে সব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় ভিটামিন সি ৬৩ মিলি গ্রাম যা আপেলের ৩২ গুণ ও আঙ্গুরের দ্বিগুণ, ক্যালসিয়াম ৯০ মিলি গ্রাম, ভিটামিন এ ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ১৫ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলি গ্রাম, লৌহ ৩ মিলি গ্রাম। টাটকা লেবুর খোসাতেও পুষ্টি রয়েছে। এ গরমে ১ গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং স্বস্তি ফিরে আনে। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এই ভিটামিন দেহে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে না, সেজন্য শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে প্রতিদিনই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠান্ডা জনিত সমস্যায় লেবু অত্যন্ত কার্যকর।

লেবুতে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি অ্যান্টি অক্সিডেন্টস হিসেবে কাজ করে দেহে ক্যান্সারসহ নানা ঘাত প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে। শিশুদের দৈনিক ২০ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি আবশ্যক। এ সময় ভিটামিন সি’র অভাব হলে তা শিশুর ওপর প্রভাব পড়ে, ফলে শিশুর দাঁত, মাঁড়ি ও পেশি মজবুত হয় না।

মাথায় খুশকি নিবারণে লেবুর রয়েছে অসাধারণ ক্ষমতা। লেবুর রস চুলের গোড়ায় ঘসে ঘসে লাগায়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুইদিন করে লাগালে মাথার খুশকি হবে সাফ এবং চুলের আঠালো ভাব দূর হয়ে চুল হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। যাদের অরুচি ভাব আছে তারা খাবারে লেবু খেলে রুচি ফিরে পাবে খুব দ্রুত। সুতরাং আমাদের নিত্যদিনই ভিটামিন সি
জাতীয় ফল লেবু খাওয়া উচিত। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছড়ানো ছিটানো ভাবে প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে কাগজি লেবুর চাষ হয়। সব মিলিয়ে উপজেলায় ৫ হাজারের উপরে লেবুর গাছ আছে।উপজেলার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলী ইউনিয়নে আংশিক এলাকায় লেবুর বাগান রয়েছে। গদাইপুর ইউনিয়নেরমটবাটী, হিতামপুর, গদাইপুর ও গোপালপুর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লেবুর বাগান গড়ে উঠছে। এপ্রিল মাসে লেবু গাছে ফুল ধরে। জুন ও জুলাই মাস ফল পরিপক্ব বা খাওয়ার উপযোগী হয়। একটি কাগজি লেবু গাছে ৫শ থেকে ১ হাজার ফল হয়।

উপজেলার চেচুয়া গ্রামের লেবু ব্যবসায়ী আবুল কাশেম ও আব্দুর রহিম জানান, এ বছর লেবুর ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। তারা লেবু বাগান মালিকের কাছ থেকে প্রতিটি লেবু ৫০-৭৫ পয়সা দরে ক্রয় করছি। স্থানীয় বাজরেও চাহিদা নেই লেবুর। স্থানীয় বাজারে ছোট লেবু ১ টাকা ও বড় লেবু ২টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।

মটবাটি গ্রামের লেবু বাগান মালিক আব্দুল করিম বলেন, লেবুর চাহিদা নেই, দামও কম। গাছের লেবু হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে। তা
ছাড়া বারোমাসি লেবুও প্রচুর পরিমাণে ধরেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপকূলীয় অঞ্চল লবণাক্ত হওয়ায় ৩/৪টি ইউনিয়নে কাগজি লেবু আবাদ হয়। কাগজি লেবু লাভ জনক হওয়ায় ক্ষেতের আইলের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিকে লেবু বাগান তৈরী শুরু হয়েছে। লেবু বাগান লাগাতে তেমন কোনো খরচ হয় না, সামান্য পরিচর্যা করলে লেবু বাগান থেকে প্রচুর ফলন পাওয়া যায়। কৃষি অফিস থেকে লেবু বাগান তৈরী করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here