কলারোয়ায় চলতি মৌসুমে এবারও বোরো আবাদের ধুম পড়েছে। আবাদের এ ভরা মৌসুমে কৃষকরা এখন চারা রোপণ ও ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস- সময় কাটাচ্ছেন। কৃষক পরিবারের সকল আশা-আকাঙ্খা ও চাহিদা পূরণের অন্যতম অবলম্বন হলো এই বোরো আবাদ। ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুকে নিয়েই প্রতি বছর কৃষকরা সবচেয়ে বেশি শ্রম ও অর্থ দিয়ে এ চাষ করে থাকেন। কোনোবার স্বপ্ন পূরণ হয়। আবার কোনোবার তা হয়না। কিন’ থেমে থাকে না উচ্চ ফলনশীল ধানের এ আবাদ। কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মনোয়ার হোসেন আমাদের প্রতিনিধি কামরুল হাসানকে জানান, চলতি মৌসুমে কলারোয়ায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমি। এরমধ্যে হাইব্রিড ১ হাজার হেক্টর ও উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ১১ হাজার ৬শ’ হেক্টর।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন- লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি আবাদ অর্জিত হয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে অর্জিত আবাদ এ পর্যন- ৭ হাজার ২শ’৮০ হেক্টর। যার মধ্যে হাইব্রিড ৭শ’৮০ হেক্টর ও উফশী ৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর। এবার গত মৌসুমের তুলনায় ১শ’৩০ হেক্টর জমিতে বেশি বোরো আবাদ হচ্ছে। গত মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১২ হাজার ৪শ’৭০ হেক্টর। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে গতবারের ন্যায় কপোতাক্ষ তীরবর্তী জলাবদ্ধ ফসলী জমি সেচ দিয়ে তা বোরো চাষের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। যা এখনো চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে কপোতাক্ষ তীরবর্তী জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, পানি সেচ কাজে কৃষকদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কৃষকরাও সাধ্যমত পানি সরিয়ে প্রায় ১ হাজার বিঘা জমি বোরো চাষের উপযোগী করে তুলেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনোয়ার হোসেন আরও জানান, কৃষকরা সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় উপজেলায় বোরো আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা নতুন করে জেগে ওঠা জমি বাড়ায় এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, জানুয়ারীর প্রথম থেকেই কৃষকরা বীজতলার চারা তুলে তা জমিতে রোপণ করা শুরু করেছেন। এই রোপণ চলবে ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয়/তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন-। কৃষি অফিসের দায়িত্বশীলরা এখন মাঠ পর্যায়ে চারা রোপণ পর্যবেক্ষণ করছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন বিভিন্ন বিষয়ে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলী মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রচন্ড শীত উপেক্ষা ভোর থেকেই কৃষকরা মাঠে চারা রোপণ করছেন। কৃষকরা এখন বোরো চারা রোপণসহ নিবিড় ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস- রয়েছেন।
রবি মৌসুমের প্রধান ফসল বোরো আবাদে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত সেচ ও সার। একই সাথে রোগবালাই দমনে কীটনাশক ব্যবহারবিধি সম্বন্ধে তারা ব্লক সুপারভারজারদের সাথে কথা বলছেন। জ্বালানী তেলের উচ্চমুল্য উৎপাদন ব্যয় এবার কিছুটা হলেও বাড়াবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের। এ ছাড়া এবারও কপোতাক্ষের জলাবদ্ধ জমি সেচ দিয়ে আবাদের উপযোগী করা হয়েছে। সে কারণে গতবারের চেয়ে বোরো আবাদের জমির পরিমাণ এবার বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী সেচযন্ত্র রয়েছে। এলাকার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রানি-ক পর্যায়ের অনেক কৃষক জানান, তাদের সবারই কিছু কিছু আবাদী জমি আছে কিন’ নিজেদের কোনো সেচ যন্ত্র নেই। সেচের জন্য তাদের অপরের সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। বোরো আবাদের সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে অপার সম্ভাবনাও। সেকারণে কৃষকরা এ মৌসুমটিকে দেখেন এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে। উপজেলার সীমান-বর্তী কাদপুর গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন জানান, তিনি এবার ১৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন।
এই গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসান টিপু ৮ বিঘা, তৌহিদুর রহমান ১৪ বিঘা, মশিয়ার রহমান ৬ বিঘা, মফিজুল ৭ বিঘা, আতাউর ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। এদের চারা রোপণ শেষ। এখন এরা কেবলই পরিচর্যায় ব্যস- রয়েছেন নিজ নিজ জমিতে। উপজেলার ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের কৃষক শেখ মফেজ উদ্দিন, আ: মান্নান সানা, ভৈরব সাহা, ফরহাদ ঢালী, গাজনা গ্রামের ইসমাইল ধাবক, রইছউদ্দিন, রামকৃষ্ণপুর(জয়নগর) গ্রামের আঃ গফ্ফার গাজী, খোরদো-বাটরা গ্রামের হজরত মোল্য্লাসহ কপোতাক্ষ পাড়ের অনেক কৃষকরা সেচ দিয়ে আবাদ শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ এখনো সেচ দিচ্ছেন। জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার শওকত আলি জানান, জলাবদ্ধ জমির পানি নিষ্কাশন কাজ এখনো তার এলাকায় পুরোদমে চলছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতি সদয় হলে গতবারের মত এবারও বোরোর বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা।
কামরুল হাসান/কলারোয়া।