কামরুল হাসান, কলারোয়া প্রতিনিধি ::
প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সদ্য প্রকাশিত ৪১ তম বিসিএস এর ফলাফল। এই ফলাফলে এমন এক যুবকের স্বপ্ন পূরণের কথা বলবো দারিদ্র দমাতে পারেনি যাঁকে। স্বপ্ন পূরণের পথে বাধাও হতে পারেনি। এমনই এক অদম্য মেধাবীর নাম রায়হান কবির। সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই মেধাবী ৪১ তম বিসিএস এ প্রশাসন ক্যাডারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। কলারোয়া পৌরসভার মির্জাপুর গ্রামের রায়হান কবিরের এই অর্জন গর্বিত করেছে তাঁর পিতা-মাতা ও এলাকাবাসীকে।
জানা যায়, বাবা আজিজুর রহমান অস্বচ্ছল এক কাঠ মিস্ত্রি। রায়হান কবির ও তাঁর বোন সাথী বেগম শৈশবে মায়ের সাথে কলারোয়া পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মির্জাপুর গ্রামে আলাদাভাবে বসবাস করতেন। বাবা অল্পবিস্তর বিরতিতে থাকতেন তাদের সাথে। তবে বাবার সাথে মতানৈক্যের কারণে মির্জাপুর গ্রামে মাত্র আড়াই কাঠা জমির উপর টালির ছাউনি দেওয়া ছোট্ট এক বাড়িতে দুই সন্তানকে নিয়ে মা বিলকিস বেগম শুরু করেন এক সংগ্রামী পথচলা। অপরের বাড়িতে গার্হস্থ্য কাজের পাশাপাশি হাঁস-মুরগী-কবুতর পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন বিলকিস বেগম।
কলারোয়া বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছেই তাদের বাড়ি। ছেলে রায়হান কবিরকে ওই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এখান থেকে ২০০৯ সালে রায়হান কবির এসএসসিতে ‘এ-’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হন। ২০১১ সালে কলারোয়া শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হন। এই দুই পরীক্ষার কোনোটিতেই তিনি জিপিএ-৫ পাননি। কিন্তু তাতে এতটুকু দমে যাননি তিনি। দারিদ্র জয় করার তীব্র প্রত্যয়ের যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন তা শুরু হয় এরপর থেকেই। ইচ্ছে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। হলো না তা। ভর্তি হন ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে তিনি অনার্স ও মাস্টার্স উভয়েই প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্বপ্ন শুরু করে পাখা মেলতে।
৪০ তম বিসিএস প্রিলিতে অংশ নিয়ে ভালো কিছু করতে পারেননি তিনি। কিন্তু রায়হান কবির তাতে দমে না যেয়ে ৪১ তম বিসিএস এ অংশ নেন। এবার মেলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা। কঠিন লড়াইয়ের দীর্ঘ পথচলা ছুঁয়ে যায় এবার স্বপ্নকে। তিনি প্রশাসন ক্যাডারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর এ অর্জনে উচ্ছ্বসিত মা
বিলকিস বেগম গত রোববার কৃতজ্ঞতা জানাতে ছুটে আসেন রায়হান কবিরের বিদ্যাপীঠ বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
শিক্ষকমন্ডলীর সাথে মমতাময়ী মা আবেগ ও উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করেন। প্রধান শিক্ষক রাশেদুল হাসান কামরুল জানান, রায়হান কবিরের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অবদান ছিলো অপরিসীম। তিনি নানামুখী দারিদ্র মোকাবেলা করে সন্তানের
পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। পিতার দেওয়া প্রতিটি খরচের সাথে মমতাময়ী মা জীবনের সবটুকু উজাড় করে আর্থিক সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। জীবন-জীবিকার নিত্য প্রয়োজন মেটাতে ক্লান্ত হয়ে পড়া এই মা আজ বড়ই তৃপ্ত।
রায়হান কবির নিজে ফোন করে তাঁর বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকমন্ডলীকে কৃতজ্ঞতা জানান ও তাঁর জন্য দোয়া কামনা করেন।
রায়হান কবির জানান, তিনি এর আগে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ায় বাগেরহাটের একটি স্কুল এন্ড কলেজে চাকুরি পান।