কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: ছোটবেলায় যখন একটু একটু করে সবকিছু বুঝতে শিখছেন, তখন থেকেই পৃথিবীটাকে অন্ধকার দেখেন কাজলী খাতুন। হারিয়ে যায় তার দু’চোখের আলো। চোখে আলো না থাকলেও কন্ঠ ছিল সুরেলা। ছোট বয়স থেকে গুনগুন করে গান গাওয়া দেখে প্রশংসা করতো প্রতিবেশিরা। একটা সময় এক ভিক্ষুকের সাথে তার বিয়ে দেয় পরিবার। তারপর থেকে স্টেশন আর ট্রেনে শুরু হয় তার ভিক্ষর জীবন। ভাল কন্ঠ থাকাই গান গেয়ে ভিক্ষা করেন কাজলী। তার গান শুনে যাত্রী, সাধারণ মানুষ ও সঙ্গীত শিক্ষকরা  বলছেন, কলকাতার রানাঘাট স্টেশনের সেই ভিক্ষুক রানু মন্ডলের মতো কাজলীর মাঝে তারকা শিল্পী হয়ে ওঠার প্রতিভা রয়েছে।

কাজলী খাতুন (২৯) পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দহপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র শহিদুল ইসলামের মেয়ে। পাবনা-ঢাকা রেলপথের যাত্রীদের কাছে পরিচিত মুখ তিনি। ১৪ বছর ধরে বিভিন্ন ট্রেনে আর স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষা করে চলছে তার জীবিকা। যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তার স্বামী ও দুই সন্তানের সংসার।

সম্প্রতি দেখা মেলে চাটমোহর রেলস্টেশনে। আলাপকালে কাজলী খাতুন জানান, তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় কাজলী। বাবা শহিদুল ইসলাম খুব একটা কাজ করতেন না। বাবার সাথে তার মায়ের বনিবনা না হওয়ায় তার জন্মের দুই বছর পর বাবাকে ছেড়ে চলে যায় তার মা রেহানা খাতুন। এরপর দাদীর কাছে বড় হতে থাকেন। এর মধ্যে তিন বছর বয়সে হঠাৎ করেই চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে নষ্ট হয়ে যায় তার দুই চোখ। তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

কাজলী জানান, তার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন এক ভিক্ষুকের সাথে বিয়ে দেন স্বজনরা। তারপর সেই স্বামীর সাথে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়ি। সেই থেকে আজ অবধি ১৪ বছর ধরে পাবনা-ঢাকা রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনে আর স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষা করে চলছি। মেয়ে জাহিদা ও ছেলে খায়রুল কে তাদের দাদী-নানীর কাছে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন কাজলী।

কাজলী খাতুন ভিক্ষাবৃত্তিতে থাকতে চাই না। বাড়িতে বসে সন্তানদের নিয়ে আনন্দে দিন কাটাতে চাই। অন্ধকার জীবন পেতে চাই আলো। আমৃত্যু গান গেয়ে যেতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আরো ভাল গান উপহার দিতে পারবে বলে আশা তার।

এদিকে, কাজলীর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে অনেক যাত্রী সোস্যাল মিডিয়ায় তার গান ভিডিও আপলোডও করেছেন কেউ কেউ। চাটমোহর স্টেশনে অপেক্ষামান কয়েকজন ট্রেনযাত্রী বলেন, কলকাতার রানাঘাটের সেই ভিক্ষুক রানু মন্ডলের মতো কাজলীর কন্ঠ খুব ভাল। এক গান গেয়ে রানু মন্ডল যদি ভিক্ষুক থেকে বিখ্যাত শিল্পী হতে পারে তাহলে কাজলীর মাঝেও রয়েছে সেই প্রতিভা। সবাই যদি কাজলীর পাশে দাঁড়ায় তাহলে তিনি ভাল কন্ঠশিল্পী হয়ে উঠতে পারেন।

একটু প্রশিক্ষণ পেলে কাজলীর অন্ধকার জীবনে আলো ফুটতে পারে। এজন্য সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here