মীর মেহ্জাবিন মামুন
মীর মেহ্জাবিন মামুন ::   বিশ্ব  মহামারী করোনা ভাইররাস (কোভিড-১৯) তার তাণ্ডব বিস্তার করেছে গোটা পৃথিবী জুড়েই। আক্রান্ত করছে লাখো মানুষকে। কেড়ে নিয়েছে অজস্র প্রাণ। বাংলাদেশেও এটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়ে পরবর্তীতে ছয় দফা বাড়িয়ে এই লকডাউন শেষ হয়েছে ৩০ মে। সীমিত আকারে খুলেছে অফিস- আদালত, সীমিত আকারে চলছে গণপরিবহণও। যদিও বাংলাদেশে এখনো প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। তারপরেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশা করা যায়, করোনা ভাইরাসের এই প্রবল পরাক্রমশালী ঝড় একদিন থেমে যাবে। এমন অবস্থায়, এই মহামারীর পরবর্তীতে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ বা করোনা পরবর্তী কেমন বাংলাদেশ চাই? সে বিষয়েই আলোকপাত করতে চাই।
.
আগামী কয়েক সপ্তাহে সরকার ও জনগণ যে সিদ্ধান্ত গুলো নেবে, তার উপর নির্ভর করবে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গতিপথ, পরিবর্তন হয়ে যাবে অনেক কিছুই। এই পরিবর্তন যে শুধু আমাদের স্বাস্থ্যপরিসেবাতেই হবে, ব্যাপারটা এমন না। পরিবর্তন হবে আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি। ইতোমধ্যেই আমরা যে বিরাট একটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি বা এখনো হচ্ছি; এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের খুব শক্ত, স্থির ও সুদূরপ্রসারী কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্তগুলো এমন হতে হবে, যাতে করে আমরা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে পারি।
.
ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস মহামারীতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নানা খাতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরবর্তী কালে, এই প্রণোদনা প্যাকেজে ঘোষিত অর্থের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিতে যথাযথা পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা পরবর্তীতে উন্নয়নের আগে আমাদেরকে মৌলিক চাহিদা গুলোর দিকেই বেশি নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যেই দেশের অনেক মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন, আরও অনেক মানুষ কাজ হারানো আশঙ্কায় দিন পার করছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ এর হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। ফলে প্রধান কাজ হবে এই মানুষগুলোর কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কারণ অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে সমাজের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি ঘটতে পারে।
.
মহামারী করোনা পরবর্তীকালে, আমাদের কৃষি ব্যবস্থা যাতে সচল থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একেবারে কৃষি পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত সঠিক ব্যবস্থা নিশ্চত করতে হবে। কারণ আমারা যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ এবং আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অনেক। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতি করার যে কোন বিকল্প নেই তার একটা বাস্তব ধারণ পেতে সক্ষম হয়েছি এই মহামারী করোনার কারণে। করোনা পরবর্তীকালে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতির কোন বিকল্প নেই। হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সব কিছুর সুষম উন্নতি হবে সেটা করোনা পরবর্তী বাংলাদেশে দেখতে চাই। করোনার ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, শিক্ষায় এই অচলাবস্থা দূর করাসহ ভবিষ্যতে কখনও  এই ধরনের পরিস্থিত তৈরী হলে, সেটা মোকাবেলা কিভাবে করা যাবে? সেই ব্যবস্থা এখনই  গ্রহণ করতে হবে। বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত, সেশনজটসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও যে সকল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে করোনা পরবর্তী বাংলাদেশে, সৃষ্ট এসকল সমস্যার যথাযথ সমাধানসহ ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবসস্থার সমূহ উন্নতির আশা করছে জাতি।
.
পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলের মতো বড় বড় যে সকল প্রকল্পের কাজ চলমান আছে সেগুলো অব্যহত রাখতে হবে। তা না হলে এগুল আমাদের অর্থনীতিতে আরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সব বড় বড় প্রকল্পসহ করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন প্রয়োজনীয় প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের সময়ের দাবি ।
.
ব্রিটেনভিত্তিক বিখ্যাত ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মন্তব্য করেছে, করোনার এই আগ্রাসনের কারণে এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৩ শতাংশ। কিন্তু আগেভাগে এটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল সাড়ে ৭ ভাগ। সুতরাং করোনা পরবর্তী কালে এই অর্থনীতি আগের অবস্থাই ফিরিয়ে আনা হবে প্রধান কাজ। কারণ অর্থনীতিকে বাঁচাতে না পারলে দেশকে বাঁচানো অসম্ভব হবে। করোনা পরবর্তী বাংলাদেশে সরকার ও জনগণ এক হয়ে কাজ করবে, সেটা যত বেশি নিশ্চিত করা যাবে করোনার এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা তত ত্বরান্বিত হবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা থাকবে আমাদের অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব আগে অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। আমাদের অভ্যন্তরীণসহ বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে সুষম উন্নয়ন আমাদের অর্থনীতিকে করোনা পরবর্তীকালে আরো শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখাবে।
.
মহামারী এই করোনা যেহেতু ইতোমধ্যে বাংলাদের বিরাট একটা ক্ষতি সাধন করেছে। আমাদের দেশ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবসা কতটা উন্নত বা শক্তিশালী সেটা কিন্তু করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই করোনাকে যদি আমরা শুধু ক্ষতি কারণ হিসেবে না দেখে এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, তাহলে করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা আরো উন্নত করতে যে আমাদের আরো কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। করোনা পরবর্তী কালে, আমাদের এই সকল ব্যবস্থায় ক্ষতি কাটিয়ে টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, এমন বাংলাদেশই দেখতে চাই।
.
.
.
লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here