স্টাফ রিপোর্টার :: করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ নির্দেশনা বুধবার থেকে কার্যকর হবে। সরকারি ছুটি থাকায় আজ মঙ্গলবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ।

ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কোনো শিক্ষকের কাছে বা কোচিং সেন্টারেও তারা যেতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনকে গতকাল সোমবার বিকেলেই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

সোমবার মন্ত্রিসভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এদিকে একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের চলমান সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার মন্ত্রণালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন সংক্রমণের শিকার না হয়, তাদের মাধ্যমে যেন কেউ সংক্রমণের শিকার না হয় সেজন্য এই সিদ্ধান্ত। গ্রীষ্ফ্মকালীন ছুটির সঙ্গে এই অনির্ধারিত ছুটি সমন্বয় করা হবে। ১ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৩১ মার্চের পরবর্তী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পূবনির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাঠ কর্মসূচি ছিল আজ মঙ্গলবার। এটি বাতিল করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের কাছে এই চিঠি প্রধান শিক্ষকরা পৌঁছে দেবেন। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসায় বৃক্ষরোপণ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৪ সালে ছাত্রলীগের এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণের অংশ বিশেষ পাঠের কর্মসূচি ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ছিল শোভাযাত্রার কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিও স্থগিত থাকবে।

শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি হল খালি করার ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এই অনির্ধারিত ছুটির কারণে শিক্ষার্থীদের গ্রীষ্ফ্মকালীন ছুটি এগিয়ে নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাধারণত জুনে গ্রীষ্ফ্মকালীন ছুটি থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্ফ্মকালীন ছুটি নির্ধারিত আছে জুলাই মাসে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি করা হয়েছে। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন-নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। এসব কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সিদ্ধান্ত। এমনকি এ সময়ে কোচিং সেন্টারও অবশ্যই বন্ধ থাকবে। ছুটির এই সময় শিক্ষার্থীরা বাসায় থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগেই মুজিববর্ষের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। শুধু গাছ লাগানোর বিষয় আছে। প্রধান শিক্ষক বা অন্য শিক্ষকেরা অনূর্ধ্ব ২৫ জনের জমায়েতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান এবং গ্রীষ্ফ্মকালীন ছুটি আছে। প্রয়োজন হলে সেই ছুটির সঙ্গে এখনকার ছুটি সমন্বয় করা হবে। ১ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আরও সময় আছে। পরীক্ষার কাছাকাছি সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ডা. দীপু মনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের ঘরে রাখার বিষয়টি অভিভাবকরা নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে যেসব নির্দেশনা দেওয়া আছে তা প্রতিপালনের ব্যবস্থা করবেন। বাসায় থাকবেন মানে বাসায়ই থাকবেন। কোথাও বেড়াতে যাবেন না। কোচিং সেন্টারে যাবেন না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ ও দেশের এক কোটি ৪০ লাখ শিশুর কাছে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা তার এ চিঠি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পাঠ করার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। তবে সেটি হচ্ছে না। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বন্ধের সময়টা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকতে হবে। এ সময় বাইরে ঘোরাফেরা করা যাবে না। বাসায় বসে লেখাপড়া করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও স্কুল খোলা হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকলেও আবাসিক হলগুলো খোলা থাকবে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চলবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারপারসন, হল প্রাধ্যক্ষ, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের নিয়ে জরুরি সভার পর সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

উপাচার্য বলেন, পরবর্তী সময়ে এই সময় আরও বাড়ানোর দরকার হলে তাও বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, অনির্ধারিত এই বন্ধ গ্রীষ্ফ্মকালীন ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে পুষিয়ে নেওয়া হবে। ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত হলেও আবাসিক হলগুলো বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে গতকাল হল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here