কৃষ্ট মোহন সিংহ :: HSC পরীক্ষা ২০২০ নিয়ে মহা মুশকিলে আমরা। কিভাবে হবে, কবে হবে, অন্য ভাবে হলে কি হবে – ইত্যাদি প্রশ্ন শিক্ষিত সমাজে ঘুরপাক খাচ্ছে। বহু চিন্তা ভাবনা করে আমি একটা সহজ উপায় বের করে ফেলেছি। জানি এটা কাজে আসবে না তবু্ও কেন যেন লিখতে ইচ্ছা করলো।
এবার আসল কথায় আসি। যদি HSC পরীক্ষা নভেম্বর মাসের মধ্যে শুরু করা যায় তাহলে আবার ২ মাস কলেজের ক্লাস বন্ধ হবে। পরীক্ষা কেন্দ্র এবং পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাকি কলেজে ( কেন্দ্র নয়) পুরাতন একাদশ এবং নতুন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ হয়ে যাবে। আবার নভেম্বর মাসে পরীক্ষা শেষ হলে ফলাফল বের হতে দু মাস অর্থাৎ জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি ২০২১ লেগে যাবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার পুরাতন একাদশ মানে ২০১৯- ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা ২০২১ ( নির্ধারিত) কবে হবে? বিষয়গুলো একেবারে ফেলে দেবার বিষয় না।
সব চিন্তাভাবনা করে আমি একটা উপায় বের করে ফেলেছি।
১) দিন সংক্ষিপ্তকরণঃ
৭টি বিষয়ের পরীক্ষা ১৩ দিন না করে ৭ দিনে করা যায়। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে ১৩ দিন পরীক্ষা হলে যেতে হয়। এটা কমিয়ে আনা যায়। একদিনে ১ম পত্র ও ২য় পত্র একত্রে ৫০+৫০ নম্বর মোট ১০০ নম্বর পরীক্ষা নেওয়া যায়। যেহেতু প্রশ্ন পত্র তৈরী এবং উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু নতুন করে প্রশ্নপত্র তৈরি করার অবকাশ নেই। এক্ষেত্রে দুই পত্র ১০০+ ১০০ = ২০০ নম্বরের পরীক্ষা কমিয়ে ১০০ নম্বর পরীক্ষা নেওয়া যায়। ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রে সৃজনশীল ও নৈবর্ক্তিক প্রশ্ন নেই। পরীক্ষার্থীদের হলে মৌখিকভাবে অথবা রুটিনে নির্দেশনা থাকবে যে প্রতি পত্রের ১০০+১০০ মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে নুন্যতম ৫০+৫০ করে মোট ১০০ নম্বর উত্তর করতে হবে।
এক্ষেত্রে তিন ঘন্টার পরীক্ষায় এক সাথে দুটি প্রশ্ন পত্র সরবরাহ করতে হবে। তবে একটি মাত্র উত্তরপত্র (খাতা) সরবরাহ করতে হবে। শুরুতে ১ম পত্রের উত্তর করার পর শেষে ২য় পত্রের উত্তর করতে হবে। পরীক্ষার্থীগণ ১ম ও ২য় পত্র কথাটি শিরোনামে লিখে দিবে।
দুই পত্রের এমন খাতা (উত্তরপত্র) একজন নিরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। এতে করে স্বল্প সময়ে খাতা মূল্যায়ন করা যাবে।
২) বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর সঠিক রাখাঃ
যেহেতু বহুনির্বাচনি পরীক্ষার উত্তরপত্র মেশিনে মূল্যায়ন করা হবে সেহেতু সেসব পত্রে ৩০+৩০ = ৬০ নম্বর ঠিক রাখতে হবে। তবে আগে ১ম পত্র ৩০ নম্বরের জন্য এবং পরে ২য় পত্রের জন্য আলাদা দুটি উত্তর পত্র সরবরাহ করতে হবে।
আর সৃজনশীল প্রশ্নে ৪০+৪০= ৮০ নম্বরের মধ্যে ২০+২০ = ৪০ একটি উত্তরপত্রে উত্তর করত হবে। মানে আগে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৭ টি ×১০= ৭০ নম্বর(এক পত্রে) উত্তর করতে হতো। এখন করবে ৭০ এর মধ্যে মাত্র যেকোনো ২০ নম্বর।
তাতে করে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া ও ফলাফল দেওয়া যাবে। অনুরূপভাবে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো (ব্যবহারিক পত্র)হবে।
৩) ICT পত্রে পরিবর্তন হবে নাঃ
যেহেতু এটা এক পত্র সেহেতু এর কোন পরিবর্তন হবে না।
৪) ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে নাঃ
এক্ষেত্রে নিজ কলেজের শিক্ষকগণ বিবেচনা করে নম্বর প্রদান করবেন। তবে সেটা হবে ক্লাসের উপস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে।
৫) সামাজিক দুরত্বঃ
পরীক্ষার হলে পরিদর্শকগণ পরীক্ষার্থীর কাছে গিয়ে স্বাক্ষর, উপস্থিতি ও পরিচয় নিশ্চিত করে থাকেন। এবার সেটা হবে না। পরীক্ষা শুরুর আগে নিদির্ষ্ট টেবিলে গিয়ে একজন করে শিক্ষার্থী হাজিরা করবেন এবং দুর থেকে প্রবেশ পত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ড কক্ষ পরিদর্শকের সামনে মেলে ধরবেন।
৬) উত্তর পত্রের সিরিয়াল নাম্বার তোলাঃ
প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে একটি আলাদা কাগজ সরবরাহ করতে হবে যেখানে আগে থেকে লেখা থাকবে পরীক্ষার তারিখ, পরীক্ষার নাম বা বিষয়, পত্র ও উত্তর পত্রের ক্রমিক নম্বর (১) (২) (৩) ( ৩ নং টা লিখিত) এবং রোল যা পরীক্ষার্থীগণ নিজ দায়িত্বে পূরণ করে জমা দিবেন। পরীক্ষার শেষে কক্ষ পরিদর্শক মূল হাজিরা খাতায় ক্রমিক নম্বর তা তুলবেন।
৭) এক কক্ষে কম সংখ্যক পরীক্ষার্থীঃ
এক বেঞ্চে একজন পরীক্ষার্থী বসবে। যেসব পরীক্ষা কেন্দ্রে রুম কম, মাঠে অস্থায়ী কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে। পার্শবতী কোন উচ্চবিদ্যালয়েও ভেনু করা যায়।
৮) সকাল ১০ টার পরিবর্তে বিকাল ২ টায়ঃ
যদি এরই মধ্যে স্কুল কলেজ খুলে যায়, তাহলে সকাল ০৯ টা থেকে ১ টা ক্লাস এবং বিকাল ২টায় পরীক্ষা নেওয়া যায়। তবে প্রতিদিন কক্ষে দু বার জীবাণুনাষক স্প্রে করতে হবে।
৯) কক্ষ পরিদর্শকগণের সম্মানীঃ যেহেতু পরীক্ষার দিন কমে আসবে, সেহেতু কেন্দ্র খরচও কম হবে। তখন অবশিষ্ট টাকা দ্বিগুণ হারে সম্মানী দেওয়া যাবে। নুন্যতম ৫০০ টার কম নয়।
১০) দ্রুততম সময়ে ফলাফলঃ
উপরোক্ত সময় এবং নম্বর অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করলে ১ মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
৷৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।।
HSC রেজাল্ট প্রকাশের পর ২ থেকে ৩ মাস সময় লেগে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য।
তাহলে চলে যাবে এপ্রিল কিংবা মে মাস। এক্ষেত্রে আমার একটি পরামর্শ আছে।
১) ফলাফল প্রকাশের আগে ভর্তি পরীক্ষাঃ
HSC Final Exam 2020 শেষ হওয়ার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ব্যবস্থা করা যাবে। যাদের এসএসসি পরীক্ষায় ৩.০০ বা ৩.৫০ ফলাফল তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
২) বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা উপজেলায়ঃ
অসম্ভব কিছু না, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক ১০০ নম্বরের নৈব্যর্ত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা পরিমাপ করা যায়। তবে এটা হবে সমন্বিত প্রাথমিক ভর্তি পরীক্ষা। এটা হবে মেডিক্যাল পরীক্ষার আদলে এবং আলাদা করে কোন বিশ্ববিদ্যালয় নিজ ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা নিবে না।
৩) ফলাফল প্রকাশের পরে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষাঃ
HSC পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর যারা কৃতকার্য হবে এবং নুন্যতম ৩.০০/৪.০০ পাবে তারা দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে। আর এ পরীক্ষাটা হবে জেলা শহরে এবং জেলা প্রশাসকের দ্বায়িত্বে। এ পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হবে তাদের দুটো পরীক্ষার নম্বর যোগ করে স্কোর নির্ণয় করা যাবে। দুটো পরীক্ষার রোল নং হবে এসএসসির রোল নং। আলাদাও করা যায়।
৪) লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নঃ
জেলা পর্যায়ের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার উত্তর পত্র মূল্যায়ন করবে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। একটি আন্তবোর্ড বা কমিটি থাকবে।
৫) বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনঃ
কলেজে একাদশ শ্রেণিতে যেভাবে ভর্তি করা হয় সেভাবে ভর্তিপরীক্ষায় উর্ত্তীণ ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করবে। আসন ও স্কোর অনুযায়ী নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ফলাফল ঘোষণা করবেন। এক্ষেত্রে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় আবার এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল এবং স্কোর এবং কি জন্ম তারিখ বিবেচনায় ভর্তি নির্বাচন করতে পারবে। তবে অবস্যই শিক্ষার্থীকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইভা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। সেদিন শিক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার খাতা ভাইভা বোর্ডে থাকবে যাতে হাতের লিখা মিলিয়ে দেখা যায়।
উপসংহারঃ
করোনা কালে সময় ও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই যুগোপযোগী হতে হবে। মান্ধাতার আমলের ব্রাম্মণ সমাজের সমাজপতি দৈত্যের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করলে চলবে না। খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে হোক বা আরো অন্যভাবে হোক যাতে করে ছাত্র-ছাত্রীসহ অভিভাবককে গোটা বাংলা দৌড়াদৌড়ি না করতে হয়। কোচিং সেন্টারে টাকার গাট্টি খুইতে না হয়। সবাই আমাদের ছোট ভাই-বোন, তাদের সুরক্ষার দ্বায়িত্ব শিক্ষিত সমাজের।
লেখকঃ প্রভাষক, যুক্তিবিদ্যা, সরকারি শহীদ আকবর আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও।