দেলোয়ার জাহিদ :: ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত রোববার এক বিশেষ ভিডিও বার্তায় করোনাভাইরাসের সংকট কাটিয়ে ওঠতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও মনোবল অটুট রাখার আহবান জানান। রানির প্রত্যাশা, ‘আমরা আবার মিলিত হব’।
রানি এলিজাবেথ মনে করছেন এর আগে বিশ্ব অনেক সংকট মোকাবিলা করেছে এবং ভালোভাবে উতরেও গেছে। তবে এই সংকট অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা … এবার আমরা সবার চেষ্টায় বিশ্বের সব জাতির সঙ্গে এক হয়েছি। ‘আমরা সবাই মিলে সফল হবো। এই সফলতার দাবিদার হবেন সবাই।
মার্কিন লেখক, চিন্তাবিদ, ও বুদ্ধিজীবী, নোয়াম চমস্কির মতে, করোনার আঘাত চাইলেই সামাল দেওয়া যেতো। যেতো থামানো এ মৃত্যুর মিছিল (দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ৪), লেখকের মতে বিশ্বের কাছে এই ভাইরাস সম্পর্কে অনেক তথ্য আগে থেকেই ছিল। নোয়াম চমস্কি হুঁশিয়ার করেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি শেষ হলে বিশ্বের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে—পারমাণবিক যুদ্ধ আর বৈশ্বিক উষ্ণতা।
২০১৯ সালের অক্টোবরে, এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঠিক আগে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ধারণা হয়েছিল যে এটা মহামারি আকারে ছড়াতে পারে।’
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির ‘ইভেন্ট ২০১’ নামে এক গবেষণার বরাত দিয়ে চমস্কি দাবি করেন, এই মহামারির সম্ভাব্য আবির্ভাবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের স্বার্থ জড়িত ছিল।’
মহামারির সম্ভাব্য আবির্ভাবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের স্বার্থ জড়িত ছিল নোয়াম চমস্কির এমন অভিযোগটি গুরুতর। ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, শাসকগোষ্ঠীর অবহেলার কারণেই করোনা সংকট জটিল হয়ে পড়েছে বলে চমস্কি মনে করেন।
ব্রিটেনের রানি আমাদের কানাডার ও রানী । কানাডার রাজতন্ত্র সাংবিধানিক ফেডারেল কাঠামো এবং ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলের সংসদীয় গণতন্ত্র ও সরকার ব্যব্স্থার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে । ওখানে ও তার ভাষণে আমাদের আগ্রহের কারণ রয়েছে।
কানাডার ফার্ষ্ট লেডী COVID-19 সংক্রমনে যখন করোনাভাইরাসের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তখন ক্রমবর্ধমান মহামারীতে তার দেশের অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনা প্রবর্তনে প্রানান্ত। নিঃসংকোচে প্রতিদিন সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছেন আশ্বস্থ করছেন দেশবাসীকে। জনগনকে জাস্টিন ট্রুডো মনে করেন তার অক্সিজেন হিসেবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতিতে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় বেশ কিছু উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। দেশের সরকারের তরফ থেকে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সার্বিক একটি প্যাকেজে ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও ‘এর আগে রফতানিমুখী শিল্পকর্মী ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা (জরুরী) প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছে। যা দেশের জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ২২ শতাংশ।
বৈশ্বিক এ সমস্যা মোকাবেলায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শ্লথ চিন্তাভাবনার খেসারত দিচ্ছে বিশ্ববাসী। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, এমনকি এশিয়ার নেপাল ভুটান এর মতো দেশও পরিস্থিতি মোটামুটি সামাল দিতে পেরেছে। কিন্তু সমস্যা মোকাবেলায় আমেরিকা ইউরোপ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনেকটা আত্মসমর্পন গোটা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে।
বাংলাদেশ তার রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ধীর ও সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে বা শ্লথ গিতিতে নিচ্ছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলার কাজে সমন্বয়ের অভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। পোষাক কারখানা খোলার দুদূল্যমনতায় গার্মন্টেস শ্রমিকগণ নজিরবিহীন হয়রানীর শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে দেখা যায়:
-করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ বিলম্ব;
-সামাজিক দূরত্বের অর্থ বুঝাতে ব্যর্থতা;
-মাস্ক পড়া ও ঘনঘন হাত ধোওয়া কার্যকর হয়নি;
-সেলফ আইসোলেশন সীমিত;
-স্বাস্থ্যবিভাগের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ;
-এবং ত্রান বিতরণ ব্যবস্থায় সমন্বয়ের অভাব;

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভারতজুড়ে ডাকা ‘লকডাউন’এর উদাহরন টানতে চাই। মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পারলে ‘লকডাউন’ সফল হবে মনে করেন চার অর্থনীতিবিদ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন, তার উত্তরসূরি ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্থার ডুফলো ও অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। সর্বভারতীয় এক টেলিভিশন আলোচনায় সম্প্রতি এই চার অর্থনীতিবিদ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ডাকা লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
করোনা সংকট আরও জটিল হওয়ার পূর্বে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনাভাইরাস নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
লেখক: বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিট কমান্ড, নির্বাহী ও ডাইভার্স এডমন্টনের সম্পাদক। কানাডার এডমন্টন প্রবাসী গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষনা ফেলো। ইমেইল: [email protected]