করুনা এখন দৃষ্টান্তসঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :: গ্রাম্য বধু নাসরিন জাহান করুনা(৪০)একজন সমাজ উন্নয়নকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম আর মেধা মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়ে দিয়েছে এমনই একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উত্তর পানপট্টি গ্রামের নাসরিন জাহান করুনা(৪০)।

শ্রম ছাড়া জীবন স্বার্থক হয় না এরই প্রমান দিয়েছেন করুনা। বিডিএস এর সদস্য লাভ করে এ সংস্থার সহযোগিতায় করুনা মুরগীর খামারটি ছোট থেকে বড় খামারে উন্নতি করেন। তিনি একজন সফল নারী যা পটুয়াখালী জেলার মধ্যে মডেল হিসেবে খ্যাতিমান। এমন কোন দিন নেই তার খামারটি দেখতে নারী পুরুষ না আসে।

একবার দেখলে অনেকে অভিভূত হয়ে যায় কিভাবে এতবড় খামার তৈরি করল। তিনি এলাকায় একজন মডেল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। তার অনুকরণে এলাকায় অনেক নারী সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে।

উপজেলা প্রানিসম্পদ অফিস থেকে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নে তিন শত মুরগী খামার রয়েছে। এর মধ্যে বয়লার ২৭০টি, সোনালী ২০টি ও লেয়ার ১০টি প্রকল্প রয়েছে। তবে মাকসুদুল হাসান মুকুলের (৫০)স্ত্রী নাসরিন জাহান করুনার প্রকল্পটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়।

সূত্র জানায়, গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নে উত্তর পানপট্টি গ্রামের মাকসুদুল হাসান মুকুলের স্ত্রী নাসরিন জাহান করুনা ২০১১সালে প্রথমে মাত্র ১শতটি লেয়ার মুরগী নিয়ে তার খামার প্রকল্প শুরু করেন। তাতেই তিনি আশার আলো দেখতে পায়।

করুনা ২০১৪ সালের ৮জুলাই গলাচিপা শাখার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিডিএস)এর বনফুল মহিলা সমিতির সদস্য পদ লাভ করে। এর পর ২২জুলাই পনের হাজার টাকা ও ২০১৫ সালের ২০জানুয়ারী ৫০হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। ঋণের টাকা দিয়ে তার খামারে ২০১৪ সালে ৬শত মুরগী আর ২০১৫ সালে ২হাজার মুরগীতে উন্নীত করেন। ৩য় দফায় একই বছরে ১৬ জুলাই ১ লাখ টাকা পেয়ে খামারটিতে ৪ হাজার  মুরগী উত্তোলন করেন।

৪র্থ বারের মতো ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ২লাখ টাকা ও ৫ম বারের মতো ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল ৩ লাখ টাকা লোন নিয়ে খামার প্রকল্পটি সম্প্রসারন করেন। এছাড়া তার একটি বৃহৎ আকারের একটি মাছের ঘের রয়েছে। লভ্যাংশ থেকে তিনি নিয়মিত লোনের কিস্তি পরিশোধ করেন। বর্তমানে তার খামারে লেয়ার জাতের সাদা মুরগী ৪ হাজার এবং ২ হাজার লাল মুরগী রয়েছে। দৈনিক গড়ে তিনি ৫হাজার ২শত থেকে ৫হাজার ৪শত ডিম পান। মুরগী পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশে বড় ধরনের ৫টি ঘর রয়েছে।

এ ছাড়াও খাবার, ডিম ও শ্রমিক থাকার জন্য আলাদা ২টি ঘর রয়েছে। মুরগীর পরিচর্যা করার জন্য স্থানীয় তিন জন শ্রমিক নিয়োজিত আছেন করুনার খামারে। শ্রমিকরা হলেন দেলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান ও সবুজ মিয়া। পরিচর্যাকারী মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনজনকে আলাদা আলাদা বেতন দিচ্ছেন। খামারটিতে সুন্দর মতো পরিচর্যা করছি। রোগ বালাই যাতে না আসে সে ব্যাপারে মালিকসহ সবাই যত্নবান।

এদিকে, নাসরিন জাহান করুনার মাছ এবং মুরগীর ডিম তার পরিবার আমিষ ও প্রোটিনের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজার ,উপজেলা ও জেলায় রপ্তানি করে। যা দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে । করুনার এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে এমন কি ভালো বিদ্যাপীঠে পড়া শুনা করছে।

পানপট্টি গ্রামের স্বাবলম্বী নাসরিন জাহান করুনা জানান, শুরু থেকে ১০০টি মুরগী নিয়ে যে ঘরটিতে খামার করেছি নিদর্শন সরূপ সেই ঘরটি সবসময় ১শত মুরগী দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। অক্লান্ত পরিশ্রম আর বিডিএস এর সহযোগিতায় খামারটি দিনে দিনে উন্নতি লাভ করে। এখন পরিবার নিয়ে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছি। আমার দেখাদেখি এলাকায় আরও খামার তৈরি করছে।

উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম জানান, গলাচিপায় মুরগীর খামার গুলো আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেকনিক্যাল সাপোর্ট, পরামর্শ ও টিকা এ অধিদপ্তর থেকে দেয়া হয়ে থাকে। এতে দেশের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। আবার আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়।

বিডিএস গলাচিপা শাখার শাখা ম্যানেজার মো: মোস্তফা বিশ্বাস জানান, গলাচিপা উপজেলায় বিডিএস এর ৭০১ জন সদস্য রয়েছে।  সততা, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে করুনা দম্পতিকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এ উপজেলায় অনেক সদস্য ক্ষুদ্র  লোন নিয়ে  সফলতার মুখ দেখছেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here