gj

ডেস্ক নিউজ :: জুট প্যাকেজিং অ্যাক্ট করার পর দেশে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যবহার বাড়ছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫৬ কোটি ০৫ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৭৪ কোটি ১১ লাখ ডলার। একইসঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি অর্থবছরে ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ কম আয় হয়েছে।

পাট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় পোশাক খাত থেকে হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির গুরুত্ব অনেক বেশি। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে যেয়ে তারা বলেন, পোশাক খাত থেকে অর্জিত রপ্তানি আয়ের বড় অংশ চলে যায় কাঁচামাল আমদানিসহ কনসালটেন্সি ফি ও অন্যান্য সেবা বাবদ। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের পুরো অংশই দেশে থেকে যায়। তাই এ বিষয়ে সরকার ও পাট খাতের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্য উত্পাদন যেহেতু শ্রমঘন তাই এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যেসূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের ৪ কোটি মানুষ সরাসরিভাবে পাট খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জুট প্যাকেজিং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কারণে উত্পাদন বেড়েছে এবং পাট চাষিরা ভালো মূল্যে পাট বিক্রি করতে পারছেন। ২০১৪ সালে দেশের পাটের উত্পাদন ছিল ৬৫ লাখ বেল, ২০১৫ সালে ৭০ লাখ বেল, ২০১৬ সালে ৮৫ লাখ বেল এবং ২০১৭ সালে ছিল ৯২ লাখ বেল।

ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপের তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববাজারে শপিংব্যাগের বার্ষিক চাহিদা পাঁচ হাজার কোটি পিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৯ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আমাদের পাট শিল্পের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এজন্য পাটপণ্যের জন্য রিফাইন্যান্সিং ফান্ড বা গ্রিন ফান্ডের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদান, প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি এবং দক্ষ জনবল বাড়াতে পারলে তা পাট ও পাটজাত পণ্যের জন্য সুবিধাজনক .

ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের আট মাসে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আয় হয়েছে আট কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এ সময়ে পাট সুতা ও কুণ্ডলি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ১২ লাখ ডলার। পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানি হয়েছে ছয় কোটি ২৬ লাখ ডলারের এবং পাটজাত অন্যান্য পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ছয় কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) বলছে, বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাট পণ্যের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উত্পাদন ও পণ্য বহুমুখীকরণে আমরা এখনো পিছিয়ে থাকায় পর্যাপ্ত পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের জনগণ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়ায় সেখানে পাট পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে মোট ২২টি পাটকল চালু রয়েছে এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ২০০ পাটকল আছে। বর্তমানে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কংগো, কোস্টারিকা, মিসর, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইথোপিয়া, গাম্বিয়া, জার্মানি, গোয়েতেমালা, হাইতি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইরান, জাপান, জর্ডান, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, সুদান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান, তাজাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওগান্ডা, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করছে।

বাংলাদেশ থেকে যত পাটপণ্য রপ্তানি হয় তার বড় অংশ রপ্তানি করেন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। এ সংগঠনের হিসাবমতে, মোট রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যের মধ্যে ৬৭ শতাংশই এ সংগঠনের সদস্যরা রপ্তানি করেছেন।

বর্তমান সরকারের সময়ে পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টিতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার আইন করে ১৭টি পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এর ফলে পাটের তৈরি বস্তা ব্যবহারে চাহিদা বেড়েছে। মূলত, এই আইন বাস্তবায়নের ফলে দেশে পাটের চাহিদা বেড়ে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে পাট চাষ কিছুটা কমে গিয়েছে। গত বছর ৬ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে অর্থাত্ ৮ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here