জুঁই জেসমিন :: যদি আমরা মনে করে থাকি, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা আর বাড়েনি, আক্রান্ত ৪৭/৪৮ আর মৃত্যুর সংখ্যা সেই পাঁজ জন, এই ভেবে নিশ্চিন্তে সচেতনতা ভুলে অবাধে চলতে থাকি তাহলে চরম চরম ভুল হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যান্য দেশ হতে মৃত ও আক্রান্তের হার না কমছে বা না নামছে শুন্য অবস্থানে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিরাপদ বা ঝুঁকিমুক্ত নয়।
আমাদের- উত্তম করণীয় বাড়িতে থাকা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। নিজ নিজ গ্লাস প্লেট ও গামছা ব্যবহার করা, হিসেব নিকেশ করে খাওয়া দাওয়া করা। চলতে ফিরতে সৃষ্টিকর্তার কাছে সারাক্ষণ প্রার্থনা করা- হে প্রভু বা সৃষ্টিকর্তা আমাদের তুমি হেফাজতে রেখো। সকল বিশ্ববাসীর প্রতি তুমি রহম করো মহামারি ভাইরাসের কবল থেকে প্রত্যেককে রক্ষা করো।
আমরা জানি, জীবন চলার পথে প্রয়োজন অর্থের আর জীবনকে সুন্দর স্বপ্নিল ভাবে রাঙাতেও প্রয়োজন অর্থের- কিন্তু সেই অর্থ যদি জীবাণুয়ে ভরতে থাকে দিনের পর দিন- তাহলে আমাদের পরিবার সুস্থ বা নিরাপদ কী থাকবে? আপনি ও আপনার পরিবার সুস্থ থাকবে কী করে? আজ আপনার ফুটফুটে শিশুটিও টাকা চেনে, আঁকড়ে মুস্টিবেঁধে ধরে থাকে টাকা, শুধু তাই নয় অনেক শিশু পয়সা ও টাকা মুখেও নেয়- এ ব্যাপারে আপনি কতটুকু সচেতন, আসলে আমরা কেউই সচেতন না। শিশুর হাতে জীবাণু ভরা টাকা পয়সা দিই আনন্দে উৎসাহে।
করোনা ভাইরাস হতে নিরাপদ থাকার জন্য মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অতি জরুরি হাতে গ্লাবস ও টিস্যু ব্যবহার করা, আর বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে এটা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। চকচকে কড়কড়ে টাকা নোটগুলো কিভাবে অতি দ্রুত জীর্ণশীর্ণ হয়, মেরুদণ্ড ভেঙে যায় জীবাণুতে, সৌন্দর্য আকর্ষণ কোনোটিই থাকেনা, কি কি কারণ বা কোন দ্রব্যমূল্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে টাকার এমন ভয়াবহ অবস্থা হয়? কখনো কি ভাবি আমরা, ভাবলেও নীরবতার মাঝে এড়িয়ে চলি করনীয় বা সতর্কতা।
সবচেয়ে এই অর্থ নোট অসুস্থ্য জীর্ণশীর্ণ হয় এবং জীবানুতে ঢেকে যায় মাছ বিক্রেতা ও মাংস বিক্রেতার মাধ্যমে। একটু ভাবুন বা লক্ষ করুন যারা মাছ বা মাংস বিক্রি করে তারা যেই হাতে মাছ পাল্লায় তুলে ওজন করে সেই ভেজা হাতেই টাকা নেয়, ক্রেতার কাছে আবার যারা পশু পাখির গোশত বিক্রেতা তারাও এমনটি করে রক্তমাখা হাতে টাকা আদান প্রদান করে। দেশ তথা জগত প্রযুক্তির ডানায় ভর করে চললেও এই মাছ মাংস কেনা বেচার ক্ষেত্রে আদিমতা আজও বেশ শক্ত ভাবেই আছে। যেই হাতে দ্রব্য লেনাদেনা সেই হাতেই অর্থও লেনাদেনা- মুখের থুথু দিয়ে টাকা গোণা বা হিসেব করা হয় কম বেশি অনেকের অভ্যাস। শিশু হতে বড় অনেককেই দেখা যায় টাকা হাতে মুষ্ঠিবেঁধে দীর্ঘ সময় থাকে পথ চলে, ঘাম ও শরীরের তাপমাত্রায় টাকা প্রায় যেন সিদ্ধ, এতে কমছে অর্থের আয়ু, ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু, বাড়ছে অসুস্থতা, দানব হয়ে বের হচ্ছে মহামারি আকারে রকমারি ভাইরাস।
শাকসবজি, পান, গুড় এমন ভেজা দ্রব্যসামগ্রীর বেচাকেনার ক্ষেত্রেও টাকা আদান-প্রদান এ অর্থ নোট স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। আর বিভিন্ন প্রকার ছোটো খাটো জীবাণু, তাতো আছেই। আমরা যারা জার্নি করি অনেকেই বড় ব্যাগগুলো লকারে দিই, সেই ব্যাগ আবার শোয়ার ঘরে রাখি পরিষ্কার না করেই। আর হাতের ব্যাগ? তা তো বিছানায় রেখে, আরামসে গল্প আড্ডায় মেতে থাকি। এই আমাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নিয়ম ও করনীয়তা। আগের মানুষ নতুন কাপড় কিনলে তা ধুয়ে তারপর পরতো। আর এ যুগের আমরা নতুন কাপড় কিনেই না ধুয়ে গায়ে দিই এবং কি দর্জির কাছে সেলাই করা কাপড়ও না ধুয়েই আয়রন করে নিয়ে পরতে থাকি- এই আমাদের সচেতনতা।
আমরা যতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় হেয়ালিপনা, পণ্য দ্রব্য কেনাবেচায় পরিবেশ যে পরিমাণ নোংরা রাখি, এতে যতটুকু সুস্থ আছি ভালো আছি শুধু মাত্র অনূকূল আবহাওয়ার কারণে। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে কি হারে যে এক একটি প্রাণ যেতো অসুস্থতায় ছটপট করে? যা বুঝা যায় আবহাওয়া পরিবর্তন সময় কালে, সর্দি কাশি জ্বরের যখন ঝড় বয়ে যায়। তবে বড় দুঃখের বিষয় অতিরিক্ত কীটনাশক বিষ সার জমিতে প্রয়োগের ফলে, মাটির উর্বরতা ও আকাশের আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক জলবায়ু আগের মতো নেই। এখন আবহাওয়ার যা তুমুল রূপ ষড় ঋতুর দেশ বলে মনেই হয়না। বর্ষাকে বর্ষা মনে হয়না, শরৎকে শরৎ মনে হয়না। অসময়ে রোদ বৃষ্টি ঝড় প্লাবন।
আগের যুগে বছরে একবার অসুস্থ হতো মানুষ জ্বর সর্দি কাশিতে, আর এখন সারা বছর লেগেই আছে অসুস্থতা। ঘরে ঘরে কিস্তির মতো এসিডের বড়ি যাচ্ছে পেটে সকাল বিকাল। নিজ নিজ অবস্থান থেকে কোনো ব্যক্তিই সম্পুর্ণভাবে সুস্থ নয়। অসুস্থতায় ভুগছে পরিবার – এর জন্য দায়ী কে, আবহাওয়া নাকি আমরাই? আমরা কিন্তু কেউই গুরুত্ব দিচ্ছিনা, হাট বাজার থেকে যে হারে জীবাণু ছড়াচ্ছে, ব্রয়লার মুরগীর মাংস যারা দলে দলে কিনছি, কখনও কি দেখার চেষ্টা করেছি কোন জলে পরিষ্কার করে, কেমন নোংরা জলে মুরগী সিদ্ধ করে পরিষ্কার করে? জায়গা ও জল দেখলে আমার মনে হয়না সেই মাংস কেনা বা খাওয়ার ইচ্ছে রুচিবোধ থাকবে। মাছির উপদ্রব তো আছেই বাজারে বাজারে।
করনীয়- সবজি থেকে মাছ মাংস বিক্রেতা অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি হাতে গ্লাবস পরবে এবং হাত দিয়ে কেউই মাছ বা মাংস প্যাকেট বা পলিথিনে যাতে না ভরে, থালা বা মাছ মাংস তোলা উপযোগী কোনো যন্ত্র বা বাসন ব্যবহার করতে হবে। প্রত্যেক মাংস বিক্রেতা এক কেজি ও হাফ কেজি করে মাংসর প্যাকেট করে সাজিয়ে রাখবে, ক্রেতা তা প্যাকেট নেবে বাজার মূল্য দাম দিয়ে। নগদ বিকাশ একাউন্ট খুলে বড় ব্যবসার বিক্রেতারা বিকাশ নাম্বার ঝুলিয়ে রাখবে দোকানের সামনে। এক কেজি মাছ বা মাংস কিনলে, মাছ মাংসের দাম নগদ বিকাশ নাম্বারে বিকাশ করে দেবেন ক্রেতারা। এমনটি করলে না ঘুরবে মাছি না ছড়াবে জীবাণু। আসুন আমরা এক স্লোগানে সচেতন হই- পরিষ্কার রাখি পরিবার পরিবেশ, করোনা ভাইরাস করি নিঃশেষ।