মিজানুর রহমান মানিক, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) থেকে ::

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বন্যা কবলিত বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা এখনো নিদারুন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গত কয়েকদিন বৃষ্টি বন্ধ হলেও পানি কমছেনা এখানকার জনপদের বসতবাড়ি থেকে। রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ির আঙিনা এখনো পানির নিচে। এদিকে চলতি আমন মওসূমের বীজতলা তৈরি ও আবাদের সময় প্রায় অতিক্রান্ত হতে চলেছে। বানের পানিতে তলিয়ে থাকা বীজতলার বীজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার বীজ ও চারা সংগ্রহ করে কেউ কেউ আংশিক বপন করলেও তা পচে গেছে। তবুও কৃষক আশায় আশায় চাষ করে পানি তা নষ্ট করে। দীর্ঘ মাসাধিককাল ধরে এ জলাবদ্ধতার কারণেও বেশির ভাগ কৃষকই তাদের আবাদযোগ্য জমিতে আমন আবাদ করতে পারছেন না। ফলে উপজেলার চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ ও চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে মওসূমের আমন আবাদ করা যাচ্ছে না। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান কম উৎপাদান হওয়ার আশংকা করছেন উপজেলার কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানান, ধান বপনের (বীজতলা তৈরি জৈষ্ঠ- আষাঢ এবং ধান বপন শ্রাবণ-ভাদ্র) সময় প্রায় শেষের দিকে হলেও এসব জমি এখনো ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া বীজ এবং চারাগাছ সংকটের কারণে চাইলেও এখন আর আবাদ করা সম্ভব নয়। উপজেলার চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ ও চরলরেন্স ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা ও ফসলি জমি এখনো ২-৩ ফুট পানির নিচে জলমগ্ন অবস্থায়।

ক্ষতিগ্রস্থ চাষী ও এলাকাবাসি জানিয়েছেন, প্রতি বছরই অতিবৃষ্টির কারণে কম-বেশি এমন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। এ বছর বন্যার কারণে সমস্যা ব্যাপক আকার ধারন করেছে। কারণ হিসাবে তারা চিহ্নিত করেছে এ অঞ্চলের চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছে স্থানীয় ভুলুয়া নদী এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এককালের
খরস্রোত ভুলুয়া নদী এখন একশ্রেণির প্রভাবশালী ও অসাধু জেলেদের কবলে পড়ে সরুকায় খালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখল, নদীর পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ করে অসংখ্য মাছের ঘের তৈরি, নদীর দু’পাড় দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ জনবসতি এবং নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ভুলুয়ার শাখা খালগুলোও দখলের পাশাপাশি বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে পড়ায়
বর্ষায় পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হয়ে আছে। নিরুপায় এলাকাবাসী এতে স্থানীয় দখলদার প্রভাবশালীদের নিকট প্রশাসনের একপ্রকার আত্মসমর্পণ বলে উল্লেখ করছেন।

এনিয়ে ভুলুয়া নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পানি প্রবাহের গতিপথ স্বাভাবিক করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিবাদি করে সুপ্রীম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছেন স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

ভূক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষে এডভোকেট মিলন মন্ডল বলেন, সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে রেশনিংয়ের ব্যবস্থাসহ বিনাসুদে কৃষি ঋণ চালু করার দাবি করেছেন।

চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু গ্রামের কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবছর ২৫ একর জমিতে ধান চাষ করেন। বন্যার কারণে এবছর এক শতক পরিমাণ জমিতেও আবাদ করা সম্ভব হয়নি। চরকাদিরা গ্রামের মোরশেদুর রহমান বলেন, তাদের ১৫ একর জমির সবটুকুই এখনো ২-৩ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। গত কয়েকদিন বৃষ্টি না থাকলেও পানি নামছে না। ভুলুয়া তীর সংলগ্ন জমিতে প্রায় প্রতিবছরই জলাবদ্ধতায় স্থানীয় কৃষকদের মারাত্মকভাবে ফসলহাুিন ঘটছে।

উল্লেখ্য, ভুলুয়া নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরের কৃষি বান্ধব একটি নদী। যা বর্তমানে বিভিন্নভাবে দখলদারদের দখলে।

কমলনগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীন রানা বলেন, এ অঞ্চলের কৃষি কাজের জন্য ভুলুয়া নদী আর্শিবাদ হলেও বিভিন্ন কারণে নদীর পানি প্রায় স্থবির, সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। ফলে আমন আবাদের জন্য কমলনগরের ৫ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাবে। তবে ৫-৭ দিনের মধ্যে পানি কমলে এবং চাষীদেরকে চারাগাছ সরবরাহ করতে পারলে আরও কিছু জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা যাবে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here