ঢাকা :: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি কমরেড জাহেদুল হক মিলু’র অকাল প্রয়াণে শোকসভা আজ শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোকসভায় আলোচনা করেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, ডা. মওদুদ হোসেন রাবু, কমরেড মিলুর বড় ভাই মো. শাহরিয়ার হোসেন, স্কপ-এর নেতা আনোয়ার হোসেন, বিলস্ এর নির্বাহী পরিচালক সুলতান আহমেদসহ বাম-প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কমরেড মিলুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভার শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভা সঞ্চালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ ও কমরেড মিলুর সংক্ষিপ্ত জীবন-সংগ্রাম তুলে ধরেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন।
আমাদের পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির বিপ্লবী সদস্য কমরেড জাহেদুল হক মিলু ১৩ মে ২০১৮ দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মাসাধিককাল মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ১৩ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি শারীরিকভাবে চিরবিদায় নিয়েছেন কিন্তু মানসিক ভাবসত্তায় দলের মর্মচিত্তে গেঁথে আছেন এবং থাকবেন। কারণ তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ বিপ্লবী। তিনি তাঁর জীবনকে এক এবং অভিন্ন সত্তায় বিপ্লব এবং দলের সাথে গ্রথিত রেখেছিলেন আমৃত্যু। সেজন্য তাঁর অস্বাভাবিক ও অসময়োচিত প্রয়াণে দলের যেমন একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে তেমনি এদেশের বাম-গণতান্ত্রিক বিপ্লবী সংগ্রাম ও শ্রমিকশ্রেণির মুক্তি আন্দোলনেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা মনে করি এবং অন্যেরাও সবাই সহমত পোষণ করেন। আমরা আমাদের গভীর শোক ও বেদনাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার প্রত্যয় নিয়েই এ শোক ও স্মরণ সভায় মিলিত হয়েছি।
কমরেড মিলু ছিলেন আমাদের দলীয় সংহতির একটা বড় গ্রন্থীরূপ নিরহঙ্কার নেতা। প্রচার মুখী না হয়ে সর্বদা নীরবে কর্তব্য পালন করে গেছেন। যে কোন স্থানে ও কাজে তাঁর উপস্থিতি বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ দৃষ্টিকাড়া হতোনা, কিন্তু স্বল্প সময়ে উদ্দেশ্যমুখীনতার আন্তরিক সংযোগে অনায়াসে সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যেত অন্যদের সাথে। এখন সে সংযোগ চিত্র ভেসে উঠেছে তার বিচরণের সকল ক্ষেত্র থেকে। এটা সম্ভব হয়েছিল এজন্য যে তিনি আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে দল, আদর্শ ও নৈব্যক্তিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্রতী ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সমালোচিত হওয়াকে তিনি স্বাগত জানাতেন এই ভেবে যে, আমার চারিদিকে অসংখ্য রক্ষা প্রহরী সেবাকর্মী ও নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে যা আমাকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এবং আভ্যন্তরীণ ক্ষয় থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
তিনি আরো বলেন, তবে সকল ক্ষেত্রেই দলের মূল নেতৃত্বের অগোচরে ছোট বড় কোন কর্মকেই একান্ত করে কখনও দেখেননি কিংবা ভাবেননি। সেজন্যই তার চলে যাওয়ার কষ্টের বোঝা অনেক ভারী হয়ে আছে। প্রতি মূহুর্তেই মনে হয় কি যেন হারিয়ে ফেলেছি, কিছুতেই তার অভাব দূর হয়না। আমাদের দলের সারা দেশের নেতা-কর্মী, সমর্থক-দরদী সকলে মিলে অন্তর উজাড় করা কামনায় প্রচেষ্টায় তাঁকে বাঁচানোর যে চেষ্টা করেছেন তাতে বিপ্লবী চেতনা-সংগ্রামের একটা ভিন্ন মাত্রাগত রূপ ফুটে উঠেছে যা দেখে ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য রোগীদের আত্মীয় স্বজনসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করেছেন, এটা কি করে সম্ভব? আত্মীয়-স্বজন না, আপনজন কেউ না অথচ জ্ঞাতিকূল যা পারেনা-এরা কি করে তা পারছে। অপরাপর দল ও সংগঠনের নেতা কর্মীদেরও বলতে শোনা গেছে, এ ব্যাপারে বাসদ এর কাছে শিক্ষণীয় রয়েছে। আসলে এটা কোন বিচ্ছিন্ন কিছু না, এটা বিপ্লবী ভাবাদর্শের বিপ্লবী চেতনা ও সংগ্রামের প্রাণশক্তি।
তিনি বলেন, কমরড মিলু জনগণের মুক্তি সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, দলীয় সত্ত্বায় নিজেকে বিলীন রেখে জনগণের মাঝে দলকে নিয়ে গেছেন কোন প্রাপ্তি প্রত্যাশা করেননি বলেই আজ তাঁর স্মৃতির উপর দিয়ে অবিরাম জল ধারার মতো জনগণের শ্রদ্ধা ভালবাসার প্রবাহ বয়ে চলেছে। এ প্রাপ্তি দলের একটা বড় অর্জন। এ অর্জনকে সাথে নিয়ে আরও বড় অর্জনের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো, জাহেদুল হক মিলুর সংগ্রামী জীবন ও স্মৃতি অক্ষয় হয়ে আমাদের মাঝে জাগরুক থাকবে।
সর্বশেষ চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আয়োজিত কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে কমরেড জাহেদুল মিলুর শোকসভার কাজ শেষ করা হয়।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি