কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী আজস্টাফ রিপোর্টার :: আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪১ সালের বাংলা ২২ শ্রাবণ মৃত্যুবরণ করলেও বাঙালির হূদয়ে চির আসন করে নিয়েছেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ তার লেখনীতে বাঙালির জীবন-যাপন, সংস্কৃতিকে যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি বাঙালির চিরদিনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনারও অন্যতম রূপকার তিনি। বাংলাভাষা ও সাহিত্যকে তিনি সারাজীবনের সাধনায় অসাধারণ রূপ-লাবণ্যমণ্ডিত করেছেন। অতুলনীয় ও সর্বতোমুখী প্রতিভা দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করে বাঙালিকে এক বিশাল মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রেরণাদায়ী পুরুষ।

হে নূতন, / দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ/ তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন সূর্যের মতন’ — নিজের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখকে এভাবেই ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু। মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে এক ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল এই পঁচিশে বৈশাখ। ১৮৬১ সালের এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় জন্ম নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যলালিত দর্শন ও সাহিত্য, তার রচনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব সাহিত্য সভায় পরিচিতি পায়। ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি এবং এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তার লেখা আমাদের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, কবির চিন্তাচেতনা, অন্তর্নিহিত ভাব ও দর্শন আমাদের জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারলে সামগ্রিক উন্নয়ন ও কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে। ‘বাঙালি মাত্রেই রাবীন্দ্রিক’— এ উপলব্ধির ধারণ-ই হোক আমাদের নিত্যচলার পাথেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও বাঙালির অহংকার। বিশ্ব সাহিত্যের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে তিনি বিস্তৃত করেছেন বাংলা সাহিত্যের পরিসর। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ-বেদনা এবং আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্র সৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে।’

বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্ম বার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।  আজ বেলা আড়াইটায় নওগাঁর পতিসরে রবীন্দ্র কাচারি বাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানুষের ধর্ম : রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা’।

এ বিষয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক ড. হায়াত্ মামুদ। আলোচনার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগসহ ঢাকায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।

 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলা একাডেমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগিতায় পতিসরের আলোকে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে। বাংলা একাডেমিতে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলা একাডেমি। ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এর বাইরে অন্য সকল জেলার জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে। জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ সম্প্রচার করবে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here