‘কন্যা উৎসব’ উদযাপনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পঞ্চকন্যা

মো. শাহীন আলম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: ঝালকাঠিতে অনুষ্ঠিত হবে দেশের প্রথম ‘কন্যা উৎসব’। ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে আগামী ২৬ জানুয়ারি দিনব্যাপী এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্থানীয় ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ঝালকাঠির মেয়েরা অংশ নেবে। কন্যা উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন চলছে ঝালকাঠিতে। শহরের গুণি পাঁচ কন্যা এই অনুষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা। উৎসব সফল করতে পঞ্চকন্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষ।

এদিকে কন্যা উৎসব বর্জনের ঘোষণা দিয়ে শহরে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সচেতন নারী সমাজ নামে এ লিফলেটগুলো বিতরণ করা হয়। কন্যা উৎসবের পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা মতের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কন্যা উৎসবকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে নারীদের মিলন মেলায় পরিনত করার কথা বলছেন, কেউ আবার উৎসবে নারীদের মর্যাদাহানীর কথা বলে বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে কন্যা উৎসবের আয়োজনকরা যত বাধাই আসুক অনুষ্ঠান যথা সময়ে করবেন বলে জানিয়েছেন।

কন্যা উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নিয়ে এ কন্যা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।

২৬ জানুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কন্যাদের মিলন মেলা, আলোচনা পর্ব, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ঝালকাঠির কন্যাদের পদক প্রদান, রত্নগর্ভা মায়েদের সম্মাননা ও সম্ভাবনাময়ী কৃতি কন্যাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এছাড়াও রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সংগীত পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ।

গত ৮ জানুয়ারি শহরের একটি রেস্তোরায় আয়োজকরা আনুষ্ঠানিকভাবে কন্যা উৎসবের ঘোষণা দেন। কন্যা উৎসবের স্বপ্নদ্রষ্টা ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সদস্য শারমিন মৌসুমী কেকা, পৌর কাউন্সিলর নাছিমা কামাল, সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার, শিক্ষক শিমুল সুলতানা হেপী ও জাফরিন ফারজানা শিমুল উৎসবের নানা আয়োজনের কথা তুলে ধরেন।

এদিকে কন্যা উৎসবের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বাংলাদেশ আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বানে ঝালকাঠি শান্তিকামী জনতার ব্যানারে বিভিন্ন সংগঠন উৎসবের বিরোধীতা শুরু করে। তারা অনুষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করে শিল্পকলা একাডেমিতে করতে হবে এবং কন্যা উৎসবের নাম পরিবর্তন করে মহিলা সমাবেশ রাখতে হবে বলে শর্ত দেন। কিন্তু কন্যা উৎসবের আয়োজকরা তাদের অবস্থানে অটল থাকায় বিষয়টি নিয়ে ক্রমান্বয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১৪ জানুয়ারি বিকেলে ঝালকাঠির নেছারাবাদে খানকায়ে মুছলিহীনে মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের আহ্বানে স্থানীয় আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশ আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদ ঝালকাঠি জেলা শাখা, ইমাম সমিতি, মাদ্রাসা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সমাজসেবক হেমায়েত হোসেন হিমু, আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন খানসহ ঝালকাঠির স্থানীয় ব্যক্তিরা।

সভায় মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর জানান, কথিত এ উৎসব ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে এবং সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে। তাই কন্যা উৎসব বন্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এর পরে কন্যা উৎসবের আয়োজকরা অনুষ্ঠিানটি দুই দিনের পরিবর্তে একদিন এবং স্থান সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।

‘কন্যা উৎসব’
প্রেস ব্রিফিং এ কন্যা উৎসবের স্বপ্নদ্রষ্টা পাঁচ গুণি কন্যা

একই বিষয় নিয়ে ১৫ জানুয়ারি মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের মেয়ে বাংলাদেশ আনজুমান খাওয়াতিনের আমির উম্মে ছালমা হাফসা কন্যা উৎসবের আয়োজকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনিও কন্যা উৎসবের নাম পরিবর্তন করে নারী সমাবেশ করার আহ্বান জানান। তিনি ওই অনুষ্ঠানে নারীদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানাতে অনুরোধ করেন। তবে অনুষ্ঠান দুই দিনের পরিবর্তে এক দিন করা হলেও নাম পরিবর্তন করা হয়নি। এক দিনের অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে অটল রয়েছেন আয়োজকরা।

অন্যদিকে গত দুই দিন ধরে কন্যা উৎসব অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়ে একটি লিফলেট শহরে বিতরণ করা হচ্ছে। সচেতন নারী সমাজের নামে কন্য উৎসবের বিরোধীতা করে এ লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এতেও থেমে নেই উৎসবের আয়োজকরা।

আয়োজক পঞ্চকন্যার এক কন্যা সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার বলেন, আমাদের উৎবের আয়োজন চলছে। সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা আগামী ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠান করবো। এ উপলক্ষে ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় সাজানো হচ্ছে। সাজসাজ রব বিরাজ করছে শহরের আনাচে কানাচেও। উৎসব নারীদের মিলন মেলায় পরিনত হবে। উৎসব বন্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, আমাদের শিল্পমন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছে। তাদের সহযোগিতায় অবশেষে আমরা উৎসব করতে পারবো।

উৎসবে ৮ হাজার নারী অংশ গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে ৮ হাজার নারীর রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে। উপস্থিতি বাড়বে ছাড়া কমবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজকদের একজন নাছিমা কামাল। তিনি আরো জানান, উৎসবে যাদের সম্মাননা দেওয়া হবে, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ৫০জনকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। এদের মধ্যে কয়েকজন রত্নগর্ভা মা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা কন্যারা রয়েছেন।

ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহামুদ হাসান বলেন, কন্যা উৎসবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ঝালকাঠির কন্যারা আসবেন। উৎসব নিয়ে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছেন। এখানে কাউকে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কারণ ২৬ জানুয়ারি কন্যা উৎসবে শিল্পমন্ত্রী থাকবেন। তিনি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here