নিউজ ডেস্ক :: প্রথম দুটি সপ্তাহ পার হয়েছে সৌদি সরকারের একটাই কথা- সাংবাদিক জামাল খাশোগির কোনো খবর তারা জানেই না! তিনি ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকেছিলেন ঠিকই। কিন্তু পরে বের হয়ে যান। এর বেশি কিছু সৌদি কর্তৃপক্ষের জানা নেই।

এটাই ছিল ২ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি আরবের ভাষ্য। একবার নয়, বারবার এই বক্তব্য দেয়া হয়েছে রিয়াদ এবং ইস্তাম্বুল কনস্যুলট থেকে। এবং বলা হয়েছে খাশোগির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানতে তারা তদন্ত করে দেখবে।

এদিকে রিয়াদের ভাষ্যের সাথে তাল মেলাচ্ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিদিন টুইট করে সৌদি আরবের বার্তাকে প্রচার করছিলেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছিলেন সৌদির বিপরীতে তুরস্কের দেয়া বক্তব্য নিয়ে। আঙ্কারা প্রথম দিন থেকেই দাবি করছিল, তাদের কাছে প্রমাণ আছে খাশোগিকে কনস্যুলেটেই হত্যা করা হয়।

বিগত কয়েক বছরের তিক্ততার পর মার্কিন ও সৌদি মিত্র সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালোই জমেছে। ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফর সৌদি আরব দিয়েই শুরু করেছেন। সৌদি রাজপরিবার এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি অনুযায়ী ইরানের সাথে করা ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকেও সরে গেছে মার্কিন প্রশাসন। অস্ত্র বেচাকেনা রেকর্ড ছাড়িয়েছে দু’দেশের মধ্যে। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের মধ্যকার ‘এক্সট্রা খাতির’ এর খবর সবার জানা।

এমন অবস্থায় তুরস্কের মাটিতে খ্যাতনামা এক সৌদি সাংবাদিককে সৌদি এজেন্টদের দিয়ে হত্যা করার ঘটনা আঙ্কারার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। সৌদি-মার্কিন প্রশাসন এক জোট হয়ে একরকম কথা বলছে।

তাই তুরস্ককে খাশোগি ইস্যুর একটা দফারফা করতেই হবে। কে কিভাবে তাকে গায়েব করে দিলো তা প্রমাণ করতেই হবে। কিন্তু একইসাথে সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কে কোনো নতুন জঠিলতা তৈরি করা যাবে না। এমনিতেই যাজক ব্রান্সন ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল এক প্রতিবেদনে এত বাধা থাকা সত্ত্বে সম্ভাব্য একটি সংকটকে কাটিয়ে ওঠে সৌদি আরবকে তাদের অপকর্মের দায় স্বীকার করতে বাধ্য করার কৌশলের কারণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। পুরো ইস্যুকে সৌদি-তুরস্ক দ্বিপক্ষীয় সংকট হয়ে ওঠা থেকে সরিয়ে বৈশ্বয়িক রূপদান এবং ক্রমান্বয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রামাণ্য বিবরণ সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে সৌদি আরবকে তাদের একচেটিয়ে অস্বীকার থেকে নড়তে বাধ্য করার কৃতিত্ব এরদোগানকে দিয়েছে পত্রিকাটি।

“How Turkey’s president pressured the Saudis to account for Khashoggi’s death” শিরোনামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কিভাবে তুর্কি গোয়েন্দারা ২ অক্টোবরের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে সৌদি আরবের ওপর চাপ তৈরি করতে থাকে তাদের উদ্ধারকৃত নানা প্রমাণের মাধ্যমে। এবং এক পর্যায়ে সৌদিয়ানদের পক্ষে বক্তব্য দেয়া থেকে সরে যান ট্রাম্পও।

সর্বশেষ এখন সৌদি সরকার ও ট্রাম্প প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে হত্যাকাণ্ডের সাথে যাথে যুবরাজ বিন সালমানকে সরাসরি জড়ানো না হয়।

কিন্তু বাস্তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত তা অনেকেই বলছেন। ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই১৬ এর সাবেক প্রধান স্যার জন সিউয়ার, মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ আরও অনেকে টুইট করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, তুর্কি সংবাদমাধ্যমে ঘটনার যেসব বর্ণনা এসেছে তাতে তারা নিশ্চিত বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরদোগানেরও মূল লক্ষ্য ছিল এটাই। মার্কিনীরা যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের নানা ইস্যুতে অনভিজ্ঞ বিন সালমানের ওপর এককভাবে নির্ভর করছিল সেটি যে সঠিক সিদ্ধান্ত নয় তা খাশোগি ইস্যুতে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন এরদোগান। এবং তিনি সফল হয়েছেন।

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর টার্কিশ স্টাডিজের পরিচালক গনুল টল মনে করেন, এরদোগান সৌদিয়ানদের বিরুদ্ধে একা লড়তে চাননি। তাই বিষয়টি বিশ্বসংকট হিসেবে রূপদান করতে সবকিছু করেছেন তিনি।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট অব নিয়ার ইস্ট পলিসির বিশেষজ্ঞ সনার কাগাপতে বলেন, কোনো সংকট থেকে কিভাবে একটা সুযোগ বের করে নিতে হয় সেই বিদ্যায় এরদোগান হলেন একজন মাস্টার।

খাশোগি ইস্যুতেও সম্ভাব্য সংকটকে তিনি তার পক্ষে নিতে পেরেছেন ভালোভাবেই।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here