হুমায়ূন আহম্মদ
রহিমা আক্তার মৌ :: ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো….
প্রিয় হুমায়ূন, রুদ্র’র প্রিয় গান দিয়েই শুরু করেছি বলে অবাক হও না। এই গান যেমন আমার খুব প্রিয় ওই কবিও আমার প্রিয়। আর চিঠি তো আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে। অন্য ভাবে বললে, চিঠিই আমায় সবার কাছে অন্য ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আজ তুমিও নেই রুদ্র ও নেই কিন্তু আমার সম্পাদিত “আকাশের ঠিকানায় চিঠি” ঠিক আছে। চিঠিকে ভালোবেসেই শুরু করেছি চিঠি বিষয়ক পত্রিকা বের করা। জানিনা কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবো।
প্রিয় হুমায়ূন, এমন চিঠিতে কেমন আছো জিজ্ঞেস করতে হয়না, জানি তুমি ওই আকাশেই আছো, ভালো আছো। তুমি ওই আকাশের কোন তারাটি হয়ে জ্বলছো- শুকতারা, সন্ধ্যা তারা, ধ্রুবতারা কিছুই জানিনা। তবে এটা জানি তুমি ওই আকাশেই আছো। জ্বল জ্বল হয়ে জ্বলছো। আজ অন্যভাবেই শুরু করি, গতবছর এই সময় দেশে ও দেশের বাইরের পেক্ষাগৃহে চলছে তোমার ‘দেবী’। দেখার খুব ইচ্ছে, কিন্তু‘ মেয়েটার পরীক্ষা বলে এতদিন দেখা হয়নি, অতঃপর দেখা হল। তোমার মিসির আলী সমগ্র আমার ঘরে, বড় মেয়েটা টেস্ট পরীক্ষার পর আবদার করেছে বইটির জন্যে। নিমিষেই ওর পড়া শেষ। ছোট মেয়ে খেতে বসে তোমার মিসির আলী সামনে করে। দুটোই আমার বই পোকা। ‘দেবী’ দেখবো বলছি বলে বড় মেয়েটা বলে–
আগে ‘দেবী’ পড়ে নেও।
ছোট মেয়ে বলে-
না পড়েই ‘দেবী’ দেখো।
আমি অল্পটুকু পড়েছি অনেক আগে, এখন সে সব একটুও মনে নেই। তাই না পড়েই গেলাম। আজ নয় এরপর হয়তো অন্য চিঠিতে লিখবো তোমার ‘দেবী’ আর এই ‘দেবী’র মিল অমিলের কথা।
প্রিয় হুমায়ূন, অমর একুশে বই মেলা শুরু হলে অনেককে বলতে শুনি-
‘হুমায়ূন নেই তবুও তাঁর বইয়ের স্টলে পাঠকের ভিড়’।
আমি বলি- কে বলে তুমি নেই? তুমি আছো, তুমি থাকবে যতদিন বাংলা সাহিত্য থাকবে। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, বইমেলা যতদিন থাকবে তুমিও ততদিন থাকবে। সেদিন সবুজ নামের আমার এক বন্ধু বলে, সে তোমাকে হিংসা করে। জিজ্ঞেস করলাম, কেনো?
জবাবে বলল-
‘হুমায়ূন যা ধরে তাই সোনা হয়ে যায়, তামাকেও সে সোনা বানিয়ে ফেলে, তাই হিংসা হয়।’
ভেবে দেখলাম সে ভুল বলেনি। যখন থেকে টিভি দেখছি প্রতিদিন, তখন থেকেই তোমায় দেখছি, তোমার নাটক দেখছি। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি, এইতো সেদিন আমাদের বর্তমান সংস্কৃত মন্ত্রী মাননীয় ও সম্মানিত ব্যক্তি আসাদুজ্জামান নূর এর সাথে দেখা বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ হলরুমে। উনি তো চলেই যাচ্ছেন, কি করে উনাকে থামাই। একটু কথা তো বলতেই হবে। পেছন থেকে বাকের ভাই বলে ডাকতেই তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। সবাইতো আমার দিকে তাকিয়ে হা করে আছে। কথা
হলো, হলো ভালো-মন্দ জানাশোনা। মেয়েরা বলে-
এটা কি করলে? কেনো বললে? উনার নাম কি এটা?
তখন তোমার ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের গল্প শুনাই, সেই নাটকের কুত্তাওয়ালির কথা বডি টারমানিক মানে গায়ে হলুদ, সে গল্প ওদের বলি। ওরা তোমার সাহিত্য পড়ে, কিন্তু তোমার নাটক খুব একটা দেখেনি। আর নতুন নাটকের ভিড়ে সেসব নাটক কে দেখাবে বলো। আমার বিশ্বাস এখনো যদি আবার সে নাটক গুলো দেখায়, দর্শক টিভির পর্দায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
হুমায়ূন, টিভিতে তোমার কোন সিনেমা, নাটক বা গানের অংশ দেখালেই আমি বলি-
এটা হুমায়ূনের। মেয়েরা বলে-
বুঝলে কি করে?
একটাই কথা, এমন করে কি আর সবুজ বলেছে তুমি সোনা ফলাও। প্রতিটা দৃশ্যই বলে দেয় এটা তোমার কাজ, তোমার হাতের ছোঁয়া। তোমার করা শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নন্দিত নরকে, নিরন্তর, সাজঘর, আমার আছে জল, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, দারুচিনি দ্বীপ, ঘেটু পুত্র কমলা এক একটি সিনেমা নয়, যেনো জীবন্ত গল্প। সবই দেখা, তুমিই বলো, এগুলো কি কখনো পুরনো হবে তুমিই বলো? তাহলে তুমি নেই এটা ওরা বলে কি করে। আচ্ছা তোমার মাথায় এমন এমন ভাবনা কি করে আসতো বলতো। এক একটা নাটকে কি কিরে তুমি পাঠককে এতটা ধরে রাখতে শেষ না হওয়া পর্যন্ত। টেলিভিশনের ধারাবাহিক গুলোর মাঝে- এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার কখনোই ভুলে যাবার নয়। সেই তোমার লবঙ্গলতা, দারুচিনি বেগম আরো কত কি। আজ রোববার নাটকে আলি জাকেরের কফিনের ভেতর ঢুকে থাকা। উহ! মনে করলে ভয় ও লাগে।
হুমায়ূন তোমায় লিখছি, সামনে টিভি চলছে। তোমার জন্মদিনে আমাদের গনমাধ্যম গুলো তোমাকে নিয়ে অনেক নিউজ করবে অনেকে তোমার কথা বলবে। গল্পকার সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন – হুমায়ূন আহম্মদ নতুন প্রজন্মকে বই পড়তে শিখিয়েছে।
সত্যিই তুমিই তো আমাকে আমার পরের প্রজন্মকে বই পড়তে শিখিয়েছ। তোমার সাহিত্যের অনেক জায়গায় তুমি নুহাশের মা গুলতেকিনকে সাহিত্য রাণী উপাধি দিয়েছিলে। এই তো কবে বই মেলায় দূর থেকে তাকে দেখেছি, মন ভরে দেখেছি। কাছে যাইনি যদি যেতে যেতে দূরে সরে যায়, তাহলে তো দেখাও হবে না। আমি মনে করি আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনে কয়েকটি সাদা পেইজ থাকে, তোমার ও কি তাই ছিলো। নাকী সব কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছো। তুমি চলে গেলে, দেখা হল না। এখন থাকলে ঠিক দেখা হতো। আমার প্রকাশিত ১২ খানা বই আর সম্পাদিত “আকাশের ঠিকানায় চিঠি” নিয়ে ঠিক হাজির হতাম। আমি অনেকটা প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেই লেখালেখি করি। আসলে এটা আমার নয়, আমাদের মতো অনেক নারীদের এম। অবস্থা। তোমার সাথে একটা কথা শেয়ার করি- ১৭ জুলাই গেয়েছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে, অনেক নারীদের সাথে দেখা। অনুষ্ঠানটি ছিলো “হিজিবিজি” ফেইসবুক গ্রুপ  এর প্রোগ্রাম। অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আর লেখকদের সাথে পরিচয়। প্রোগ্রামের মাঝ পথেই আমি নেমে আসি, ওই যে বললাম প্রতিকূল পরিবেশ। লিফট
দিয়ে নামতে এক আপার সাথে পরিচয়, উনি গৃহিণীই। ঘর থেকে বের হন কমই। ফেইসবুকে অনেকের সাথে যোগাযোগ। গ্রুপের সাথে এড হলেন। আজ এলেন, এখানে এসে উনার খুব ভালো লাগলো। বললেন – নিচে ছেলে অপেক্ষা করছে।
নিচে এসে ছেলের সাথে পরিচয় করালেন। আর বললেন-
ছেলে নিয়ে এসেছে বলেই আসতে পেরেছেন।
কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। আজ আর কত লিখবো, সীমাবদ্ধতা বলতে তো কিছু আছে। আজ এখানেই রাখি, আবার লিখবো কুয়াশা ভেজা শিশির কণা না হয় কোন বরিষায়।
লেখক: সাহিত্যিক কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। rbabygolpo710@gmail.com
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here