স্টাফ রিপোর্টার :: টেকসই উন্নয়ন অভিস্ট লক্ষ্য (এসডিজি) -৬ অর্জনের সরকারের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে পানি, স্যানিটেশন এবং হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল, যা স্বাস্থ্যের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৮-১৯ সালে গোল ৬.১ এবং ৬.২ লক্ষ্য অর্জনে প্রায় প্রয়োজনের তুলনায় ৪৪.৮৮ বিলিয়ন টাকা কম বরাদ্দ রয়েছে। এসডিজি -৬ অর্জনের জন্য ৬টি লক্ষ্য এবং ১৩টি সূচক নির্ধারণ করা হয়েছ। “এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ও অর্জনের জন্য একটি কংক্রিট রোডম্যাপ তৈরি করা, অর্থ বরাদ্দ এবং ব্যাবহার যুক্তিসঙ্গত করা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এসডিজি বাস্তবায়নের অতিরিক্ত ব্যয়ের মূল্যামান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউয়ে ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে আয়োজিত দুই দিনের চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিন (১৯ ফেব্রুয়ারি) এসডিজি বাস্তবায়নে সুশাসনের গুরুত্ব শীর্ষক প্যারারাল অধিবেশনে স্যানিটেশন এ্যান্ড ওয়াটার ফর অল (এসডব্লিউএ) এর দক্ষিণ এশিয়া সিএসও প্রতিনিধি ও ডর্প’র গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান এ কথা বলেন। প্যারারাল অধিবেশনে তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেশনে সংসদ সদস্য আইনজীবি সায়েদা রুবিনা আক্তার মীরা প্রধান অতিথি হিসাবে এবং নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনেগেন বিশ্ববিদ্যালযয়ের গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক জেরোইন ফ্র্যাঙ্ক ওয়ার্নার চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ইউআইইউ, ডর্প এবং ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (ডব্লিউআইএন) ও নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় যৌথভাবে ৪র্থ ইউআইইউ-আইসিএসডি কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয় ।
মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান আরো বলেন, এসডিজি ফিনান্সিং স্ট্র্যাটেজিতে উল্লিখিত জিইডি অনুমান অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের জন্য মোট অতিরিক্ত ১০১.৫১ কোটি টাকা ব্যয় করা প্রয়োজন। তবে এসডিজির বিভিন্ন সরকারি দলিল থেকে জানা গেছে, কেবলমাত্র ৬.১ ও ৬.২ লক্ষ্য অর্জনে ৪৮.৮৮ বিলিয়ন টাকার বরাদ্দ ঘাটতি রয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে চাহিদার বিপরিতে এই ব্যবধান ছিল ৪৬.০৮ বিলিয়ন এবং ২০১৬-১৭ সালে ৩৯.৬৬ বিলিয়ন টাকা। এটিও দেখা গেছে যে সরকার নিরাপদ পানীয় জলের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেন, তবে স্যানিটেশন এবং হাইজিনের জন্য খুব কম পরিমাণের বাজেট বরাদ্দ দেন। ২০১৬-১৭ সালে পানির জন্য ২০ বিলিয়ন টাকা প্রয়োজন ছিল এবং বরাদ্দকৃত পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬ বিলিয়ন টাকা। তবে স্যানিটেশন ও হাইজিনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ছিল ৬৮ বিলিয়ন টাকা তবে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১২.৮৮ বিলিয়ন টাকা। ২০১৭-১৮ সালে জলের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ছিল ২১ বিলিয়ন টাকা তবে বরাদ্দ ছিল ৩৫ বিলিয়ন টাকা। স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে ৭২ বিলিয়ন টাকা প্রয়োজন হলেও এটি কেবল ১২ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। ২০১৮-১৯ সালে জলের জন্য ২২ বিলিয়ন টাকা প্রয়োজন ছিল কিন্তু প্রায় ৩৬ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। স্যানিটেশনের জন্য ৭৬ বিলিয়ন টাকা প্রয়োজন ছিল তবে বরাদ্দকৃত পরিমাণ ছিল মাত্র ১৯ বিলিয়ন টাকা।
যোবায়ের বলেন, এসডিজি-৬ঃ পানি ও স্যানিটেশনের সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোয় বিনিয়োগ, স্যানিটেশন সুবিধা প্রদান এবং প্রতিটি স্তরে স্বাস্থ্যবিধি উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
একই প্যারারাল অধিবেশনে ‘বিদ্যালয়গুলিতে পানি ও স্যানিটেশন উন্নয়নে শুদ্ধাচার : অভিজ্ঞতা ও করনীয়’ সম্পর্কিত উপস্থাপনায়, ডর্প এর প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী (স্কুল ওয়াশ) ডাঃ তারেক আলম বলেন, স্কুল শিশুরা পর্যাপ্ত তহবিল এবং মৌলিক স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ এবং বরাদ্দ না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা টয়লেটগুলি অকেজো হয়ে থাকে । বর্তমানে টয়লেট প্রতি শিক্ষার্থীর গড় সংখ্যা ১৮৭ জন, কিন্তু সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্ল্যান ২০১১-২৫ অনুযায়ী প্রতি টয়লেট ৫০ জন ব্যবহার করবে প্রস্তাব করা হয়। জাতীয় স্বাস্থ্যবিধি বেসলাইন সমীক্ষা ২০১৪ অনুসারে, গ্রামাঞ্চলে অর্ধেকেরও কম স্কুল (৪৩ শতাংশ) কার্যকরী শৌচাগার উন্নত করেছে। মিঃ তারেক বলেন, ওয়াশ-এ প্রবেশাধিকার উন্নয়নের জন্য শিক্ষামন্ত্রনালয় থেকে একটি পরিপত্রে ওয়াশ সার্কুলারের এগারোটি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে চালু করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেইন বলেছেন, বর্তমানে জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশই নিরাপদ পানীয় জলসেবার আওতাভুক্ত রয়েছে এবং ৮৪ শতাংশ জনগণ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পেয়ে আসছে। বিবিএস এখন থেকে ওয়াশ সেক্টর কভারেজের বার্ষিক তথ্য সরবরাহ করবে। আগামী জনসংখ্যা ও আবাসন আদমশুমারি-২০২১ এ ওয়াশ-এর উপর গ্রাম-স্তরের পৃথকীকরণের আপডেটেড ডেটা সরবরাহ করবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য আইনজীবি সায়েদা রুবিনা আক্তার মীরা বলেন, সরকার সময়মত এসডিজি লক্ষ্য সমূহ পূরণে বদ্ধপরিকর। এই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের সকল মন্ত্রনালয়কে একসাথে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্যানিটারি ও হাইজিন খাতে আমরা যে কিছুটা পিছিয়ে আছি তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
তিনি আরো বলেন, এই খাতকে উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি এনজিওসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরো সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি স্যানিটারি ও হাইজিন খাতে অপ্রতুল বাজেটের কথা স্বীকার করে ভবিষ্যতে সংসদে এবং অন্যান্য নীতি নির্ধারণই সভায় এই ব্যাপারে কথা বলবেন বলে উপস্থিত সবাইকে জানান।