স্টাফ রিপোর্টার :: এডুকো বাংলাদেশ সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) ’করোনায় শিক্ষার বাস্তবতা: এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা কোথায়? শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপ এর আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাউ আরাগে, ডিরেক্টর, ইমপেক্ট ও অরগানাইজেশনাল ইমপ্রুভমেন্ট, এডুকো গ্লোবাল অফিস, ড. সুুমেরা আহসান, সহকারি অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম), এনসিটিবি ও ড. মনজুর আহমদ, এমিরেটাস অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও সভাপতি, বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্ক ।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এডুকো বাংলাদেশের হেড অফ এ্ডুকেশন গোলাম কিবরিয়া।
এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ বলেন, এডুকো বাংলাদেশ দীর্ঘসময় ধরে শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে সারা পৃথিবীর শিশুদের শিক্ষাই আজ হুমকির মুখে। আমরা জানি, এই পরিস্থিতিতে সরকারের এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনের চ্যলেঞ্জগুলো। এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু শুধু সরকারের একার নয়। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের সবার। তাই কাজ করতে হবে একযোগে।
মূল বক্তব্যে গোলাম কিবরিয়া বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারী সারা বিশ্বের শিশুদের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বজুড়ে বিঘ্নিত হচ্ছে শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক চাহিদাগুলো। এই পরিস্থিতিতে শিশুরা কেমন আছে তা জানতে এডুকো ২০২০ সালের ৭ মে থেকে ২৩মে পর্যন্ত আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের বিশটি দেশের ৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪৪৭৬ জন শিশু-কিশোর-তরুণ এর মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করে। অনলাইন এবং ফোনভিত্তিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিশু-কিশোর-তরুণরা এতে অংশ নেয়। জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ১৮.২৮ শতাংশ শিশু-কিশোর-তরুণ মনে করে, লকডাউনের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ছেলেদের তুলনায় অধিকতর মেয়ে অংশগ্রহণকারী ভবিষ্যত নিয়ে তাদের উৎকন্ঠার কথা জানায়। দেখা যায়, ২৯.৩৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। ২২.৩৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর কাছে সবচাইতে উদ্বেগের বিষয় হলো, পরিবার-পরিজনের সম্ভাব্য অসুস্থতা, ১৯.৪০ শতাংশ পরিবারের বড়দের কাজের প্রয়োজনে বাইরে বের হতে না পারা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং ১৭.৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আতঙ্কিত ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যয়ভার মেটাতে পরিবারের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে।
জরিপে বাংলাদেশ থেকে ৫০৩ জন অংশ নেয়। এদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই ছিল মেয়ে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শিশুরা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে সবচাইতে বেশী চিন্তিত। ১৯.৮১ শতাংশ শিশু বলেছে যে, তাদের পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের কাজে ফিরে যেতে না পারায় তারা সবচেয়ে বেশী উদ্বিগ্ন। ২১.৮ শতাংশ শিশু স্কুল, ২২.৮৮ শতাংশ শিশু বন্ধুদের এবং ১৪.৩২ শতাংশ শিশু শিক্ষকদের অভাব অনুভব করে। আশঙ্কার কথা হলো, মাত্র ১৬.৭৩ শতাংশ শিশু পরিবারকে তাদের নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে। ৪১.৯৫ শতাংশ শিশু মনে করে লকডাউন পরবর্তী জীবন আরো কঠিন হয়ে উঠবে। অন্যদিকে ২২.০৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের সঙ্গে বেশী সময় কাটাতে পেরে তারা আনন্দিত। তারা আরো জানায় পড়ালেখার ক্ষেত্রে পরিবারের সহায়তা তাদের আনন্দ দেয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ঘরে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এই কোভিড সময়ে সরকার শিশুদের জন্য দূরশিক্ষণ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে। তাদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ও শিক্ষকদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্কুলভিত্তিক স্কুল রিওপেনিং প্ল্যান করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটা স্কুলের স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্কুলগুলোর স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেখানে সরকার কাজ করছে এবং পাশপাশি রিকভারি প্ল্যান করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিউডের সহকারী অধ্যাপক ড. সুমেরা আহসান বলেন, “কোভিট-১৯ এর পেক্ষাপটে পর্যাপ্ত সমসাময়িক তথ্য আমাদের কাছে নেই। ২০১৬ সালের ডাটা অনুযায়ী প্রাইমারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, নিম্ন মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার ডেটার অন্তর্ভূক্ত এবং কারিগরি শিক্ষা এবং মৌলিক সুবিধার ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ উপস্থিতির ডেটা সংগ্রহ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ঠ পরিমানে আকর্ষনীয় না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময় স্কুলে যেতে চায় না, তবে বর্তমান সময়ে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ।”
কোভিট এর পরবর্তী শিক্ষা পেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য(এনসিটিভি) প্রফেসর ড. এ কে রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে আমরা শিশুদের মানসিক অবস্থার উপরে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। স্কুল খোলা হলেই তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করা হবে এবং পাঠ্যক্রম নিয়ে অবিভাবকদের অবগতি করা হবে। জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা হবে এবং সে ক্ষেত্রে শিক্ষকবৃন্দ যৌথভাবে কাজ করবে।”
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের সভাপতি ড. মনজুর আহমেদ বলেন, “২০২০ সালে এসে কোভিট এর জন্য আমাদের পড়া-লেখা সহ জীবন জীবিকা থেমে গেছে। এই সময়ে আমাদের যতটুকু কাজ হয়েছিলো তার উন্নতি ধরে রাখতে হবেীবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এসডিজি-৪ অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষার মধ্যে একটি গুণগত পরিবর্ত্ন আনতে হবে এবং এর মান উন্নয়ন করতে হবে।”
ডিরেক্টর অব ইমপেক্ট ও অরগানাইজেশনাল ইমপ্রুমেন্ট পাউ আরাগে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়। কারন স্কুল হচ্ছে শিশুদের বিকাশের জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবেশ। শিশুদের সামাজিকীকরণ ও ব্যাক্তিত্ব বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বোত্তম পরিবেশ।”