এসকেএস ফাউন্ডেশনের রিকল-২০২১ প্রকল্প সুফল দিচ্ছে ২৫ হাজার মানুষকে

রওশন আলম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নাধীন রিকল-২০২১ প্রকল্পটির কল্যাণে বেশ সুফল পাচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি কাজ করছে এ জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ও গজারিয়া এবং সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ও হলদিয়া ইউনিয়নের ১৮ টি গ্রামের ৩৬ টি সমাজভিত্তিক সংগঠনের মাধ্যমে ছয় হাজার ৩৭৮ টি দরিদ্র ও হত-দরিদ্র পরিবারের সাথে।

রিকল-২০২১ প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, একটি পরিবার বা সমাজের উপর দুর্যোগের ফলে যত নেতিবাচক প্রভাব আসুক তা সফলতার সাথে মোকাবেলা করে পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থানে টিকে থাকাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

প্রকল্পটির উদ্যোগে বন্যাকালীন সময়ে মানুষকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য করা হয়েছে বন্যা বীমা, বিশুদ্ধ পানি পান করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে দ্বিপ্লাটফর্ম বিশিষ্ট নলকূপসহ কমিউনিটি ফুড ব্যাংক, বন্যা সহনশীল পারিবারিক পায়খানা, নারী ও কিশোরীদের স্নানাগার, স্কুল ল্যাট্রিন ও পাবলিক টয়লেট, স্যানিটারী ন্যাপকিন উৎপাদন ও হাইজিন সেন্টার স্থাপনে সহায়তা, হ্যান্ড ওয়াশিং ডিভাইস বিতরণ, বেকার যুবক ও যুব নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সহায়তাদান, নারীনেতৃত্ব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, নারীদের বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে লিংকেজ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, গ্রামীণ পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাথে প্রাইভেট সেক্টরে সম্পৃক্তকরণ, নারীদের পারিবারিক পর্যায়ে সেবামূলক কাজ হ্রাসকরণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, কমিউনিটি পর্যায়ে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি পর্যায়ে নারী ওয়াশ দল গঠন করে দলের সক্ষমতা অর্জনে প্রশিক্ষণ প্রদান, ওয়াশ কার্যক্রম জোরদারকরণে কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু ও কিশোর-কিশোরী দল গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদান, কমিউনিটি পর্যায়ে ওয়াশ পরিস্থিতি পর্যালোচনা, ওয়াশ ম্যাপ তৈরী ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, চাইল্ড টু চাইল্ড ক্যাম্পেইন, সিএলটিএস প্রশিক্ষণ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে স্যানিটেশন কমিটির সাথে নিয়মিত সভা, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা, নিরাপদ পানি ব্যবহার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন ও টুলস ব্যবহার, কমিউনিটি পর্যায়ে স্যানিটেশন সেন্টার ও স্যানিটেশন মার্কেটিং এবং প্রমোশন, মিনিস্ট্রিয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি সেশন পরিচালনা, এসএমসি, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ওয়াশ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, স্কুল পর্যায়ে এসএমসি ও শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত সভা এবং ওয়াশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন ও নলেজ কম্পিটিশনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

প্রকল্প সুত্রে আরও জানা যায়, সমাজভিত্তিক এসব সংগঠনের মধ্যে আটটি সরকারি রেজিস্ট্রেশনকৃত করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে নিজেরাই কাজ করতে পারবে। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ১২৪ জনকে ড্রাইভিং, গার্মেন্টস, মোবাইল সার্ভিসিং, অটোমোবাইলস, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্সসহ বিভিন্ন কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে প্রত্যেককে চাকরিতে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জব ফেয়ারের আয়োজন করে চাকরি দেওয়া হয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীদেরকে।

সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের শেফালী বেগম বলেন, আমরা প্রতিদিন কমিউনিটি ফুড ব্যাংকে চাল জমা রাখি। একমাস পরে এই চাল বিক্রি করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা হয়। বন্যাসহ বিপদকালীন সময়ে সেখান থেকে চাল ও টাকা ঋণ নিতে পারি। পরে আবার সুবিধামত সময়ে এই ঋণ শোধও করা যায়। এর জন্য বাড়তি কিছু দিতে হয়না। এতে করে আমরা অনেক সুফল পেয়েছি।

একই গ্রামের মজিদা খাতুন বলেন, নদীভাঙ্গনে সব হারিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। সংসারে ছিল তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্বামী। সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। রিকলের সদস্যভুক্ত হয়ে তাদের ও আমার আর্থিক সহযোগিতায় একটি মুদি দোকান দিয়েছি। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। স্বামী অসুস্থ্যতাজনিত কারণে মারা গেছে। এখন এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে এই মুদি দোকানের উপরেই সংসার চলে আমাদের।

ওই গোবিন্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে সচেতন স্যানিটারী ন্যাপকিন উৎপাদন ও হাইজিন সেন্টার। এখানে কাজ করেন কয়েকজন নারী। তাদের একজন সামিনা বেগম বলেন, আগে স্বামী একাই শুধু টাকা উপার্জনের কাজ করতো। এখন আমিও সংসারের উন্নতির জন্য এই সেন্টারে কাজ করে প্রতিমাসে টাকা উপার্জন করছি। এতে করে সংসারে অভাব মোচন হয়েছে। সচেতন স্যানিটারী ন্যাপকিন উৎপাদন ও হাইজিন সেন্টারে কাজ করা আরেক নারী তাহেরা বেগম বলেন, আগে শুধু স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলতো। এখন সংসারে আমারও আয়ের টাকা যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু আগে কোন কাজ না করে বাড়ীতেই বসে থাকতাম। এখান থেকে যে টাকা পাচ্ছি সেই টাকায় ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ সংসারের কাজে ব্যয় হচ্ছে। এতে উপকৃত হচ্ছি আমি।

ওই গ্রামের সজিব মিয়া বলেন, দ্বিপ্লাটফর্ম বিশিষ্ট নলকূপ স্থাপনের ফলে বন্যার সময় আমাদেরকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে পড়তে হবে না। সেসময় এই নলকুপ থেকেই আমরা বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবো।

প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর বাহারাম খান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার বিপদাপন্ন নারী, পুরুষ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলা করে অধিক সক্ষমতা অর্জন করার লক্ষ্যকে অর্জন করার লক্ষ্যে রিকল-২০২১ প্রকল্প কাজ করছে। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর পরে থেকেই এর সুফল ভোগ করছে ভুক্তভোগীরা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here