ডেস্ক রিপোর্ট:: গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করছি না, মাঠে নেমে আন্দোলন করছি না, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনীতির মাঠে লড়াই করে যাচ্ছি।
শনিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী ও ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ শিক্ষার্থী নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে ছাত্র সংসদের দাবি জানিয়ে নুর বলেন, দেশকে মেধাহীন করতে এই সরকার দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আগেও দেশের কোনো সরকার ছাত্র সংসদ চালু করেনি। এজন্যই মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছে না। আজ যারা ন্যায্য আন্দোলন করে তাদের মামলা দিয়ে রাখা হয়েছে। ছাত্রলীগ একটি দানবের সংগঠন। শিক্ষার্থীরা মানব হিসেবে ছাত্রলীগে প্রবেশ করে দানব হিসেবে বের হয়। ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার চিহ্ন রয়েছে কিন্তু তারা কেউ চুপ করে যায়নি। ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে কেউ কখনো চুপ থাকেনি।
তিনি বলেন, আজ পত্রিকার কলামে দেখি দেশের রিজার্ভ নাকি ৮-১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। দুই বছর আগেও দেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। সেখান থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে। রিজার্ভ সংকটে দুই মাস পর আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন চাল-ডাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। কি খাবেন সবাই, সেটা এখন থেকেই ভেবে রাখেন।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, সরকারের পরিবর্তন শুধু সময়ের ব্যাপার। এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে বিশ্বব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে। এই সরকারকে পদত্যাগে সবাই কাজ করে যাচ্ছে। আজ বিডিআর হত্যা মামলার বিচার হলে সরকার দলীয় অনেক নেতার ফাঁসি হয়ে যাবে। তাই তো এই সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে মরণ কামড় বসাচ্ছে।
পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে নূর বলেন, শাহবাগ থানার এডিসি হারুন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখে মরিচের গুড়া দিয়ে নির্যাতন করেছিল। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার জন্য তাকে বারবার পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের নেতাদের ওপর হাত তুলেছে বলে তাকে বদলি করা হয়। তাই আমি পুলিশ ভাইদের বলব, ক্ষমতা পরিবর্তন হলে এই সরকার আপনাদের বাঁচাবে না। এমপি-মন্ত্রীদের বিদেশে কোটি কোটি টাকা আছে, বাড়ি-গাড়ি আছে। তারা পালিয়ে যাবে, আপনারা যেতে পারবেন না। তাই এখন অন্তত সাধারণ মানুষের কথা ভাবুন। নিজ যোগ্যতায় আপনাদের পদোন্নতি হবে।
বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড স্মরণ করে তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার পর শিক্ষার্থীরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নেওয়ার চেষ্টা করলে উপাচার্য দেয়নি। ছাত্রলীগের নেতাদের বাঁচাতে তিনি সেই ফুটেজ গায়েব করার চেষ্টা করেছিলেন। তখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, শিক্ষার্থীরা ভয়ে মিছিল করতে পারছিল না। আমরা তখন মিছিল নিয়ে বুয়েটে গেলে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের জোর আন্দোলনের কারণে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। অন্যথায় এই মামলার কোনো বিচার হতো না, অপরাধীরাও সহজেই রেহাই পেয়ে যেত।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, লেখক ও কলামিস্ট লেখক রাহা, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্রলীগ (জেএসডি) সভাপতি তৌফিকুজ্জামান পিরাচা, ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আহমেদ শাকিল, ছাত্র জমিয়তের সভাপতি নিজামউদ্দিন আল আদনান, কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আসাদ বিন রনি, সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, ঢাকা কলেজের সাধারণ সম্পাদক নজরুল করিম সোহাগ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের সাধারণ সম্পাদক মো. সালমান প্রমুখ।