জুনাইদ আল হাবিব
জুনাইদ আল হাবিব

জুনাইদ আল হাবিব :: প্রতিদিন খবরের পাতায় হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। অথচ, সেখানেই ঈদের আমেজ, শপিং করার জন্য হুড়াহুড়ি! যেখানে রোগের ভয়ে তিলে তিলে বহু বছরে গড়ে ওঠা সম্পর্কের মানুষটার সঙ্গে দেখা মেলে না, দেখা করার চিন্তাও করা যায় না, সেখানে এসব কিসের আলামত?

প্রতিদিন ভয়ে আমি এখন খবরের পাতায় চোখ ভোলাই না। আশ্চর্য হয়েছেন? হ্যাঁ, আপনি আশ্চর্য হতে পারেন, কিন্তু এটাই সত্য। আক্রান্তের খবর, লাশের খবর, এ সব খবর কি শুনতে ভালো লাগে? বলেন। সারাদিন লাশের খবর, আক্রান্তের খবর নিয়ে মানুষটা ভাবে, সে মানুষটা যে একটা মানসিক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে না, এর নিশ্চয়তাই বা কি?

দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২হাজার। সংখ্যাটার কোন কমতি নেই। প্রতিদিন বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাটাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা মানুষ মারা গেলে কত মাইকিং, কত প্রচার-প্রচারণা। কত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে জানাজায় অংশ নিতে। অথচ, করোনায় মারা গেলে শুনলে কেউ কাছে আসে না। মুহুর্তেই হারিয়ে যায় সব আবেগ, ভালোবাসা। লাশগুলো দাফন করতে হয় যাদেরকে আমরা সব সময় গালি দেই, তাদের। সেই পুলিশ, সেই প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কেউ ছুঁতে আসে না করোনায় মারা যাওয়া স্বজনকে। দেখতে আসে না স্বজনকে শেষ বারের মতো এক চোখ দেখতে। কি করুণ পরিস্থিতি! অথচ, এর মাঝেই খুলে ফেলছে শপিং মলগুলো। ঈদের আনন্দে লাফালাফি শুরু করেছেন কিছু গন্ডমুর্খ মানুষ।

আজ কয়েকদিন সরকার শর্তযুক্ত করে শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এ সব শর্ত কি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে? একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন, চোখ ফেরান কাছের শপিংমলে। দেখতে পাবেন মানুষের ভিড় কেমন। বাঙালি এমন একটা জাতি, যাদেরকে প্রতি মুর্হুতে লাঠিপেটার ওপর না রাখলে, তারা সোজা হয় না। দুইটা শব্দ এ রাষ্ট্রে বড় হুমকির। একটা হচ্ছে হুজুগে বাঙালি আরেকটা হচ্ছে হুজুগে ধার্মিক।

সম্প্রতি সময়েও এ দুইটা কারণে এ দেশের মানুষকে একত্র করা যায়নি। আপনি হিন্দু বলবেন আর মুসলমান বলবেন, আমরা ধর্ম সম্পর্কে এখনো অনেকটাই অজ্ঞ রয়ে গেছি। আর হুজুগে বাঙালির সজ্ঞাটায় গেলে দেখা যায়, সরকার বলছে, লোক সমাগম কম করে আপনারা শপিং করতে পারবেন। এ মুহুর্তে সরকারের এ ঘোষণাটাও কি ঠিক হয়েছে? সরকার ব্যবস্থা কি জানে না, এ দেশের মানুষের স্বভাব কেমন? এখন সবাই বলবে, সরকারতো বলছে শপিং করতে পারবে। অথচ, সরকার যে শর্তযুক্ত করেছে, সেটা কি কেউ খেয়াল করছি? পুলিশ-প্রশাসন কত দিকে দৌঁড়বে? সব সময়ইতো আমরা পুলিশ-প্রশাসনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমরাতো মানুষ না। যদি মানুষ হতাম, এ মানুষগুলো রাত-বিরেত ঘুমহীন কাটাতে হতো না। আমাদের জন্যই এ পেশার হাজারো লোক করোনায় আক্রান্ত। তারপরেও আমরা কোন আপসোস করবো না। বলবো, এরা কি মানুষ? আরেহ, আমি-আপনি যে এখনো মানুষ হতে পারলাম না, সেটা কি একবারও ভাবছি?

শপিংমলে গিয়ে করোনার এ মুহুর্তেও দৈহিক দূরত্ব মানছিনা। আচ্ছা, এ বছরটার জন্য, এক বারের জন্য ঈদটা না করলে কি হয়? বেঁচে থাকলে এ ঈদ আরো করা যাবে। কিন্তু যদি এ ঈদের শপিং করতে গিয়ে খোদা নাখাশ, আপনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যান! তবে আপনার কি আর ঈদ করা যাবে? আপনি কি সন্তানদের নিয়ে হাসি-খুশিতে জীবন কাটাতে পারবেন? তখনতো আপনার নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

আমি প্রতিবছরই মেঘনাপাড়ের নদীভাঙা এবং দ্বীপ-চরের শিশুদের জন্য ঈদবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়ে থাকি৷ কিন্তু এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এমন পরিস্থিতিতে এখন কোন ঈদ নয়। যেখানে জীবন বাঁচানো বড় দায়, সেখানে ঈদ করে কি হবে? অনেকেই ফোন করে জানতে চাইছেন, এবার আয়োজনটা করবো কিনা? কিন্তু আমার সোজা কথা, এ মুহুর্তে জনসমাগমটা মোটেই কাম্য নয়। আর লাশের ভেতর এ সবের আয়োজনতো কল্পনাই আনতে পারি না।

আপনি ঈদের শপিং করতে যাবেন। আপনি কি একবারও ভেবেছেন, শপিং করতে আসা লোকজনের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত থাকতে পারে। কারণ, এ দেশের করোনায় লাশ দাফন করার জন্য হিমশিম শুরু হয়ে যাবে, তারপরেও আপনার মাঝে চেতনা জাগবে না। মৃত্যুর মাঝে আপনি উল্লাসটাকেই বেছে নিয়েছেন। কারণ, আপনার ভেতরে মনুষ্যত্ব বোধের এখনো জন্ম হয়নি। আপনি বলবেন, আমি বড় বড় ডিগ্রি নিয়েছি, কিন্তু আমি বলবো, এ সবে আপনার কি লাভ হয়েছে? যদি না দেশের এমন দুর্যোগ মুহুর্তে আপনি মুর্খের মতো আচরণ করে বসেন। শিক্ষিত হলেই যে মানুষ মুর্খ নয়, তারতো প্রমাণ এটাই। এতক্ষণ আমি যে আঘাত মূলক লেখা লিখেছি, এটা একমাত্র আপনার জন্যই। আপনাকে বাঁচানোর জন্যই।

অতএব, শপিং যেয়ে করোনা উপহার নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন, না কি করবেন। সেটা একান্তই আপনার এখতিয়ার। কারণ, দিনশেষে দশজন মানুষ অন্তত আপনার মুখে তাকিয়ে হাসতে সাহস পায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here