প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি হয়ে গেলেও মন্ত্রিসভায় বিষয়টির অনুমোদনের প্রশ্নে কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্র।
গত বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মনমোহন সিংহ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে এই সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল। তার পর প্রায় ছ’মাস কেটে গেলেও এই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিলমোহর পড়েনি। সরকারি সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে এ দেশে এখনও রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। আপত্তি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর সম্মতি আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র। যে ভাবে চুক্তিটি করা হয়েছে, তাতে আপত্তি রয়েছে বিজেপি-রও। সূত্র : আনন্দবাজার

মনমোহন-হাসিনা চুক্তিতে বলা রয়েছে, ছিটমহল হস্তান্তরের ফলে যদি কোনও বাড়তি ভূখণ্ড বাংলাদেশকে দিতে হয়, তা হলে ভারত কোনও ক্ষতিপূরণ চাইবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জমি দেওয়ার ব্যাপারে এখনও মমতার সম্মতি মেলেনি। তিস্তা চুক্তি থেকে শুরু করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি সব ক্ষেত্রেই মমতার আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে হয়েছে কেন্দ্রকে। তাই ছিটমহল নিয়ে মমতার সঙ্গে বিশদে আলোচনা না করে এগোতে চাইছেন না মনমোহন।
ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের চেষ্টা চলছে সেই ১৯৫৮ সাল থেকেই। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন। ভারতীয় ভূখণ্ড ছাড়ার ব্যাপারেও তাঁর আপত্তিও ছিল না। কিন্তু ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওই চেষ্টা বানচাল হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিতেও ছিটমহল সমস্যার সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর হয়নি।
মনমোহন-হাসিনা চুক্তি অনুসারে ছিটমহল বিনিময় পদ্ধতি কী হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তিনি জানিয়েছেন, ভারতীয় বা বাংলাদেশি ছিটের কারও উপরেই জোর করে কোনও নাগরিকত্ব চাপিয়ে দেওয়া হবে না। ভারতীয় ছিট বাংলাদেশের হাতে গেলেও সেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে। একই স্বাধীনতা থাকবে বাংলাদেশি ছিটের বাসিন্দাদের। চিদম্বরম আরও জানিয়েছেন, ভারতীয় ছিটমহলের কোনও বাসিন্দাই (মোট ৩৭ হাজার ৩৭৯ জন) যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না চান, তা হলে তাঁদের সবাইকেই ভারতে পাকাপাকি ভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
কিন্তু বিজেপি-র বক্তব্য, ছিটমহল হস্তান্তরের সময় সেখানে বসবাসকারী জনসাধারণের হস্তান্তরও বাধ্যতামূলক করতে হবে। অর্থাৎ, ভারতীয় ছিটের বাসিন্দা চান বা না চান, তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতেই হবে। তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে যে ভাবে বাংলাদেশি ছিট দহগ্রাম এবং আঙরপোতাকে মূল বাংলাদেশের সঙ্গে জোড়ার ব্যবস্থা হয়েছে, তারও সমালোচনা করেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো বিজেপি নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, এতে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান বাড়বে।
এই অবস্থায় সমস্ত দিক দেখে সতর্কতার সঙ্গে ছিটমহল হস্তান্তরের কাজটি সারতে চায় ভারত। যদিও বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “আমরা আশাবাদী। আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ছোটখাটো যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলি কাটিয়ে আমরা শীঘ্রই এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”

‘ভিশন-ডিজিটাল ছিটমহল’। বিদ্যুৎবিহীন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহলে এ বার ইন্টারনেট পরিষেবাকে হাতিয়ার করে ইনফরমেশন সেন্টার গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সৌজন্যে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। ২৮ জানুয়ারি ওই পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে দিনহাটা সীমান্তের বাংলাদেশি ছিটমহল মশালডাঙ্গা, পোয়াতেরকুঠি এলাকার বাসিন্দাদের ই-পরিষেবা ও প্রশিক্ষণের সুবিধে দিতে দুইটি তথ্যকেন্দ্র চালু হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া, গরাতি ও শালবাড়ি এলাকায় আরও তিনটি তথ্যকেন্দ্র চালু করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে দুই দেশের সীমান্ত ঘেরা ছিটমহলে ৬০টি তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে। সংগঠনের সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “বিচ্ছিন্ন ছিটমহলগুলিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার পাশাপাশি যুব সম্প্রদায়কে ই-জগৎ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করার জন্যই ভিশন ডিজিটাল ছিটমহলের পরিকল্পনা হয়েছে।” কয়েকটি ছিটের বাসিন্দাদের নিয়ে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্র চালানো হবে। বিনিময় সমন্বয় কমিটির কর্তারা জানান, ছিটমহলের ক্লাবগুলিতে ওই তথ্যকেন্দ্র তৈরি করা হবে। ৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক তথ্য কেন্দ্রগুলিতে আগ্রহী যুবকদের কম্পিউটার শেখাবেন। সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে তথ্যকেন্দ্র চালানো হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here