ডেস্ক রিপোর্ট:: নেই যানজট, মানুষের হুড়োহুড়িও নেই। অফিসগামী মানুষেরও তাড়া নেই। ঢাকার সড়কে গণপরিবহণও সেভাবে নেই, বাস হেলপারদের হাঁক-ডাকও কানে আসছে না। সিএনজি চালকরা ফাঁকা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন, বেশিরভাগ দোকনপাট এখনও খোলেনি। সব মিলিয়ে নীরব তিলোত্তমা এই নগরী।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি, এলাকা, পাড়া মহল্লা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রায় সব বড় সড়ক থেকে শুরু করে, ছোট রাস্তার কোথাও সেভাবে খুব বেশি যানবাহন দেখা যায়নি। বেশিরভাগ দোকানপাট এখনও বন্ধই রয়েছে। এখনও ফাঁকা রাজধানী ঢাকা
এদিকে শত বিড়ম্বনা-ভোগান্তি উপেক্ষা করে শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরেছেন অনেক নগরবাসী। তাদের বাড়ি ফেরার এই আনন্দ চলেছে ঈদের আগ রাত পর্যন্ত। তাদের সিংহভাগই এখনও ঢাকায় ফিরে আসেননি। এই মানুষগুলো ছাড়াও রাজধানীতে আর এক শ্রেণীর মানুষ ছিল, যাদের ছুটি ঈদের আগে মেলেনি, অথবা ব্যবসায়ীক কারণে যেতে পারেননি। এসব মানুষের কিছু অংশ ঈদের পরের দিন ঢাকা ছেড়েছেন নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে, শেকড়ের টানে। এসব মানুষ ঢাকায় ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এমন ফাঁকাই থাকবে ঢাকা।
মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের চার দিনে রাজধানী ছেড়েছেন ৬০ লাখের মতো মুঠোফোনের সিমধারী।
ঈদ উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু গেল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছিলেন। এরপর শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ও মাঝে রোববার পবিত্র শবে কদরের ছুটি ছিল। পবিত্র ঈদুল ফিতরে এবার লম্বা ছুটি রয়েছে। ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। এর পরদিন, অর্থাৎ আজ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রোববার পয়লা বৈশাখের ছুটি। এতে টানা পাঁচ দিন ছুটি পেয়েছেন সবাই। ধারণা করা যাচ্ছে, আগামীকাল বা তার পরের দিন থেকে একযোগে ঢাকায় ফেরা শুরু করবেন সবাই।
রাজধানীর মহাখালীর রাস্তায় সড়কের পাশে সিএনজি রেখে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন চালক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকে বলতে গেলে কোনো ট্রিপ পাচ্ছি না। রাস্তাঘাটে তেমন কোনও মানুষই নেই। আসলে যারা ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে গেছেন, তারা এখনো ফিরে আসেনি ঢাকায়। এ কারণে পুরো রাস্তাঘাট এলাকা সব ফাঁকা, দোকান দোকানপাটও বন্ধ। সড়কে তেমন বাস, প্রাইভেট কার, রাইট শেয়ারিং মোটরসাইকেল, খুব বেশি সিএনজিও নেই। সব মিলিয়ে পুরা ঢাকায় এখন ফাঁকা। ঈদ করতে যাওয়া মানুষগুলো যখন ফিরে আসতে শুরু করবেন তখন ফের ঢাকা আগের মত রূপে ফিরে যাবে।
গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা বৈশাখী বাসের হেলপার রাকিবুল বলেন, গাবতলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত এসেছি বাসে কোনও যাত্রী নেই, সর্বোচ্চ ১০-১২ জন যাত্রী পেয়েছি। সড়কের পাশে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না, এছাড়া পুরো রাস্তায় ফাঁকা। গাবতলী থেকে মহাখালী আসতে ১৫-২০ মিনিট সময় লেগেছে। ঢাকার সড়কে আজ তেমন বাস নেই এবং যাত্রীয়ও নেই।
গাইবান্ধা থেকে সকালেই ঢাকা এসে নেমেছেন ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী লতিফুর রহমান। তিনি বলেন, জরুরি কাজে একদিন আগেই ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় নামার পরে দেখছি পুরো ঢাকা শহর ফাঁকা। সকালে যে নাস্তা খাব এমন দোকানও খোলা পাচ্ছি না, এছাড়া অন্য সব ধরনের দোকানের বেশিরভাগ বন্ধ।
বিজয় স্মরণী এলাকার সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে আলাপ কালে তিনি বলেন, বলতে গেলে রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সিগন্যাল এই বিজয় সরণি। কিন্তু ঈদের দিন থেকে আজকে পর্যন্ত এই সিগন্যালও অনেকাংশেই ফাঁকা। আমাদের যেসব ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা মোটামুটি রিলাক্সেই ডিউটি পালন করছেন। গণপরিবহন হিসাবে খুব বেশি বাস নেই, প্রাইভেটকারের সংখ্যাও খুব কম আজ, এছাড়া রাইড শেয়ারিং যেসব মোটরসাইকেলগুলো থাকে সেগুলোও হাতেগোনা কিছু সংখ্যক চলাচল করছে। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটি পরবর্তীতে আজ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা অবস্থাতে আছে। আর দুই একদিনের মধ্যেই হয়তো গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া মানুষগুলো ঢাকায় ফিরে আসবেন। তখন থেকে ফের ঢাকা পূর্বের রূপে ফিরে আসতে শুরু করবে।