স্টাফ রিপোর্টার :: বুধবার বিকালে ভক্ত পরিচয় দিয়ে মধ্যবয়সী এক নারী বাড়িতে এসেছিলেন বলে ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী সাংবাদিকদের জানান।

ওই নারী পুরো বাসা ঘুরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুই যুবক হজ্বে যাওয়ার আলোচনার কথা বলে ফারুকীর পূর্ব রাজাবাজারের বাড়িতে ঢোকেন। সঙ্গে সঙ্গে আরো ৬/৭ জন যুবক ঢুকে ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে চলে যায় বলে পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়।

ফারুকী টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন, সেইসঙ্গে আহলে ‍সুন্নাত ওয়াল জামাতের নেতা ছিলেন তিনি। সুন্নিবাদী সংগঠন আহলে সুন্নাত ও ইসলামী ফ্রন্টের নেতাদের সন্দেহ, ওহাবি মতাবলম্বী উগ্র ইসলামপন্থিরাই ফারুকীকে হত্যার পেছনে রয়েছে।
ফয়সাল ফারুকী বলেন, “বুধবার বিকালে এক মধ্যবয়সী নারী কয়েকবার টেলিফোন করে বাসায় এসেছিলেন। তার পরনে ছিল ছেড়া স্কার্ফ ও নোংরা শাড়ি। যদিও দেখে তাকে দরিদ্র মনে হচ্ছিল না। ছেলে বিয়ের পর তাকে দেখাশোনা করে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। আব্বার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন তিনি।”
ফারুকীর কাছে এমন অনেকে এলেও ওই নারীকে সন্দেহের কারণ কী- জানতে চাইলে ফয়সাল বলেন, “বাসায় আব্বার কোনো ভক্ত আসলে তারা বসার ঘরেই বসেন, ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পান না। কিন্তু ওই মহিলা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে পুরো বাড়ি ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। মহিলার চলাফেরা ও কথাবার্তাও ছিল অসংলগ্ন।
কখনো সে বরিশাল, কখনো সাতক্ষীরা থেকে এসেছে বলে জানায়। আমি তখন ভাত খাচ্ছিলাম। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিল, অনেক দূর থেকে একটা কাজে তোমার আব্বার কাছে দোয়া চাইতে আসছি।
ওই নারী রাতে বাড়িতে থাকতেও চেয়েছিল জানিয়ে ফয়সাল বলেন, তখন তার বাবা এতে অসম্মতি জানান। আব্বা আমার সামনেই তাকে বলেছিলেন যে বাড়িওয়ালা বাইরের কেউ বাসায় থাকলে সমস্যা করে। আপনি কিছু মনে করবেন না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আপনি চলে যান।”
বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওই নারী একটি কালো বোরকা গায়ে চাপিয়ে নেন বলে ফয়সাল জানান। ওই মহিলাকে রিকশায় তুলে দিতে নাতী মেহেদী হাসানকে বলেছিলেন ফারুকী।
মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন,“প্রথমে উনি আমাকে বললেন, গাউসিয়া যাবেন। এরপর রিকশা ঠিক করে দেয়ার সময় বললেন যাবেন গুলিস্তান। রিকশায় উঠে পড়েই আমাকে বাসায় চলে যেতে বলেন তিনি।” ফয়সালের সন্দেহ, হত্যাকারীরা খোঁজ-খবর নিতেই ওই নারীকে পাঠিয়েছিলেন।
ওই নারী সন্ধ্যায় বেরিয়ে যান। তারপর রাত ৮টার দিকে ১৭৪ পূর্ব রাজবাজারের চারতলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফারুকীর বাসায় ঢোকেন দুই যুবক। ওই দুজন হজ্বে যাওয়া বিষয়ে আলোচনার কথা বলে ঘরে ঢোকেন, দরজা খোলার পরপরই আরো ৬/৭ সশস্ত্র যুবক ঢুকে পড়েন। ওই সময় ফয়সাল বাড়িতে ছিলেন না।
ঘরে ওই সময় থাকা ফারুকীর স্ত্রী, শাশুড়ি, গৃহকর্মী ও ভাগ্নে মারুফকে বেঁধে ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
ফারুকীর এক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যারা এসেছিল তারা সবার মুখে শাড়ি কেটে, লুঙ্গি কেটে তার অংশ মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছিল বলে হুজুরের স্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন। তাই তারা কেউ একটু শব্দও করতে পারে নাই।” তবে ফারুকীর কাছে অনেক ভক্ত আসত বলে তখন ওই যুবকদের এ নিয়ে কোনো সন্দেহ হয়নি বলে প্রতিবেশীরা জানান।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here