ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডেস্ক ::

কথা সত্যি, এক কাপ চায়ের দাম সাড়ে আট লাখ টাকা! নাম দেখেই হয়তো আন্দাজ করে ফেলেছেন, এর প্রাপ্তিস্থান চীন। দেশটির উয়িশান অঞ্চলের উয়ি পর্বতে জন্মে ডা হং পাওয়ের গাছ।শিরোনাম দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠতে পারে। তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আকাশছোঁয়া নয়, একেবারে আকাশ ভেদ করে উঠে যাওয়া এত দামি এই চায়ের নাম ডা হং পাও।যার এক কাপ চায়ের দাম সাড়ে আট লাখ টাকা! একে বলা হয় সোনার চেয়েও দামি চা। কারণ এর এক গ্রামের দাম সোনার এক গ্রামের দামের থেকে ৩০ গুণ বেশি!

তার আগে এর স্বাদের কথায় আসা যাক। বিবিসি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডা হং পাও চায়ের ওপর। সেখানে বলা হয়েছে, চমৎকার মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আছে এই চায়ের। শুকনো চা–পাতা দেখতে অনেকটা আমের আচারের মতো। চীনে এ ধরনের চায়ের একটা কেতাবি নাম আছে—ওলং টি।

দেশটির ফুজিয়ান প্রদেশের উয়ি পর্বতে খুব বিরল জাতের এই চা উৎপন্ন হয়।তবে স্বাদ-গন্ধ-বর্ণের জন্য নয়, ডা হং পাও চা এত দামি অন্য কারণে (এক গ্রাম ডা হং পাও চায়ের দাম প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা)। মূলত দুষ্প্রাপ্য বলেই দামের এমন বাহার। ডা হং পাও চায়ের ছয়টি গাছ আছে চীনের উয়ি পর্বতের গায়ে।সারা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র চীনেই এই চায়ের ছয়টি গাছ রয়েছে। বিরল ও উৎকৃষ্ট মানের জন্য ডা হং পাও’কে চায়ের রাজা বলা হয়। ২০০৬ সালে এই ছয়টি চা গাছের প্রায় ১১৭ কোটি টাকার বীমা করিয়েছে চীন সরকার। এক কেজি এই চায়ের দাম প্রায় ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তিনশো বছর ধরে চীনে এই চায়ের চাষ হচ্ছে।

একটা গল্প প্রচলিত আছে। চীনের মিং রাজবংশের (১৩৬৮-১৬৪৪) এক নৃপতির মা একবার ভীষণ অসুখে পড়লেন। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য কত কিছুই না করলেন তিনি। কিছুতেই কিছু হয় না। শেষমেশ কেউ একজন বুদ্ধি বাতলালো, ডা হং পাও চা পান করানোর ব্যাপারে। নৃপতি তা-ই করলেন। তাঁর মা সুস্থও হলেন। ব্যস, ‘কপাল’ খুলে গেল এই চায়ের। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল এর জাদুকরি ক্ষমতার কথা। মিং নৃপতি ঘোষণা করলেন, এই চা গাছ সংরক্ষণ করতে হবে। লাল রঙের বিশেষ শামিয়ানাও পাঠালেন গাছগুলো ঢেকে রাখার জন্য। আজও একইভাবে গাছগুলো সংরক্ষিত আছে। ১৯৯৮ সালে এই গাছগুলো থেকে ২০ গ্রাম চা বিক্রি হয়েছিল ১৯ লাখ ৩০ হাজার ৩৫২ টাকায়।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই চায়ের পেছনে বিস্তর টাকাপয়সা ঢেলেছে।মজার ব্যাপার হলো, সাধারণ জনগণ এই চা চেখে দেখার সুযোগ পায় না বললেই চলে।আর এখন ডা হাং পাওয়ের কাপে চুমুক দিয়ে ‘ফার্স্ট ক্লাস চা’ বলার সুযোগ পান কেবল চীনের সম্মানিত অতিথিরা!

এই চায়ে রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ক্যাফেইন, থিওফিলিন, পলিফেনলস এবং ফ্ল্যাবোনয়েড। প্রতিদিন এই চা খেলে ত্বক ভাল থাকে। মাটির পাত্রে বিশুদ্ধ পানিতে এই চা বানাতে হয়। সুগন্ধের জন্যই এই চায়ের রয়েছে আলাদা কদর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here