স্টাফ রিপোর্টার :: প্রশাসনের বিভিন্ন পদে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে আপস না করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক। সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে-সব খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে।’

শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১১তম সমাবর্তনে তিনি আরও বলেন,‘ আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকরা প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিংয়ে ব্যস্ত থাকেন।’

রাবি ক্যাম্পাসের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাধারণ মানুষ আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনেই দেখতে চায়। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে আপস করবেন না। আপনাদের মর্যাদা আপনাদেরই সমুন্নত রাখতে হবে।’

‘আপনারা রাজনৈতিকভাবেও খুবই সচেতন ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা চেতনায় একজনের সাথে আরেকজনের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষার্থীর ওপর না পড়ে তাও নিশ্চিত করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা আজ গ্র্যাজুয়েট, দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সবসময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা, তোমরা কখনো অর্জিত ডিগ্রির মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে না। বিবেকের কাছে কখনো পরাজিত হবে না।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মনে রাখবে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তোমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার।’

‘তোমরা তোমাদের মেধা, কর্ম ও সততা দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে পারলে সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, ভুলবে না শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, সহপাঠীসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে। ভুলবে না এ দেশ ও এ দেশের সাধারণ জনগণকে,’ যোগ করেন তিনি।

রাবির সমাবর্তনে অংশ নিতে বিভিন্ন অনুষদের ৩ হাজার ৪৩২ জন ডিগ্রিধারী নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে কলা অনুষদের ১০ বিভাগের ৬৬৬ জন, আইন অনুষদের আইন বিভাগ থেকে ৮৯ জন, বিজ্ঞান অনুষদের চার বিভাগ থেকে ৩৭৭ জন, বাণিজ্য অনুষদের চার বিভাগ থেকে ৫০৫ জন এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নয় বিভাগের ৫৮২ জন রয়েছেন।

পাশাপাশি,  লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস অনুষদের ছয় বিভাগের ৩১০ জন, কৃষি অনুষদের চার বিভাগে ৮৫ জন,  প্রকৌশল অনুষদের পাঁচ বিভাগের ১৩৫ জন এবং চারুকলা অনুষদের দুই বিভাগের ৪৩ জন অংশ নিয়েছেন।

এছাড়া, স্নাতকোত্তরের ছয়জন, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ৫১১ জন এবং বিডিএস ডিগ্রির জন্য ১২৩ জন সমাবর্তনের জন্য নাম লিখিয়েছেন।

সমাবর্তনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানও উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here