আমি নুসরাত। আমার জন্ম, পড়াশোনা বেড়ে উঠা সবই এই যান্ত্রিক ব্যাস্ত ঢাকায়৷ পৈতৃক সূত্রে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। আমার পরিবার ভীষন সংস্কৃতিমনা হওয়ায় আমি ও গানের সাথে জড়িত।

ছায়ানট থেকে লোকসংগীত আর উচ্চাঙ সঙীত এর তালিম নিয়েছি। আমার দাদী যখন নকশী কাথা সেলাই করতো – সুই সুতোর কায়দা করে নক্সী প্যাচ গুলোকে অবাক হয়ে দেখতাম।

মনে মনে ডিজাইন করার শখ আর ইচ্ছা টা শেখান থেকেই। তেজগাও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ssc 2006 আর ঢাকা সিটি কলেজ থেকে 2008 সালে HSC দেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।

ডাক্তারী তে চান্স না পাওয়ায় ভর্তি হই ইডেন কলেজে ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে। অনার্স মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্টের পর কোন ফাইন্যান্স কোম্পানী তে না জয়েন করে শেষমেস ঢুকি বিখ্যাত মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী Maersk Line এ।

এভাবে শিক্ষা জীবনের পর ৫ বছর কর্পোরেট চাকরীর পরেও আমি মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। নিজে থেকে কিছু করার ইচ্ছেটা সব সময় মনে তাড়া দিতো।

আমার বিয়ের পর থেকে আমার বর সব সময় আমাকে মোটিভেট করতো নিজের মত করে বাচতে, নিজের মত করে শিখতে। তবু সব সময় ভয় ছিলো- লোকে কি বলবে, আব্বু আম্মু কি এক্সেপ্ট করবে? এখনো অনেকে ব্যাবসা কে ভালো চোখে দেখে না।

জুয়েলারী আমার খুব পছন্দ। ডিফরেন্ট স্টাইলের নকশাদার ধাতব জুয়েলারী আমার বেশি পছন্দ। বীডস, স্টোনের চাইতে আমার কাছে মেটাল খুব বেশি আকর্ষন করে।

মেটাল কে পিটিয়ে কেটে নকশা করা আমাকে বেশ টানে। সেই টান আর ভালো লাগা থেকেই জুয়েলারী বিজনেসে আসা। এই বিজনেসে আসার আগে- ২ বছর গিয়েছে মার্কেট রিসার্চ করতেই। এরপর গত বছর অক্টোবর থেকে শুরু করি “বিবির সিন্দুক ” এর যাত্রা।

চাকরীর পাশাপাশি ব্যাবসা পরিচালনা করা ছিলো অনেক কষ্ট সাধ্য। মেসেজ চেক, ডেলিভারি রেডি করা, এরি ফাকে সোর্সিং করা, নেটওয়ার্কিং এর জন্য কাজ করা।

সব কিছু দিন কে দিন অনেক টাফ হয়ে যাচ্ছিলো। আমার পক্ষে অফিসে বসে – মেসেজ চেক করা ও রিপ্লাই দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। অনেকেই বলতো এবং এখনো বলে- এত পড়াশোনা করে ইমিটেশনের ব্যাবসা করে।

ব্যাবসা করতে গিয়ে সমাজের নানান স্তরেএ মানুষদের সাথে মেলামেশা করতে হয়। জুয়েলারী মেয়েদের জিনিস হলেও- এই জুয়েলারী ব্যাবসা ও ম্যানুফ্যাকচারিং এ যারা আছেন সবাই পুরুষ!

শুরুতে আনইজি লাগলেও এখন তারা সবাই আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে, আমাকে চেনে। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। ব্যাবসা শুরুর পর যখন ভাল ফিডব্যাক পাচ্ছিলাম বাবা মা আর শ্বশুড়বাড়ি থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছি।

আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিলো আমার বড় আপু আর হাজবেন্ড। এই দুইজন মানুষের আর্থিক এবং মানষিক সাপোর্ট ছাড়া ব্যাবসা শুরু করা এবং চালিয়ে নেয়া অসম্ভব ছিলো।

আমি যাই করি, আমি আজ তা নিয়ে অনেক খুশি। খুব কম মানুষই তার পছন্দ মত কাজ করতে পারে, খুব কম মানু্ষই তার ভালো লাগাটাকে কাজে লাগাতে পারে।

আমি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন। আমি আমার ভালোলাগা, আমার স্বপ্ন কে সত্যি করতে পরিশ্রম করতে পেরেছি। স্বপ্ন দেখি “বিবির সিন্দুক” শুধুই কোন অনলাইন পেইজ নয়। এটা একটা ব্র‍্যান্ড!! বিবির সিন্দুক আমার ব্রেইন চাইল্ড। এটা কে নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক দুর যাবার।

বর্তমানে নারী উদ্যোক্তার খোঁজে ( IS of We) এর সাথে সংযুক্ত হয়ে নিজেকে এবং অন্য নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বিতা অর্জনের জন্য কাজ করছেন।

সকলের জন্য শুভকামনা
নুসরাত জাহান
মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here