খাদিজা আক্তার :: ঈদ-উল-আযহায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপর বাড়তি কাজের চাপ নিয়ে গতকাল ক্লেমন কোমল পানীয়র একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। বিজ্ঞাপনটি দেখা শেষে নিজের অজান্তেই হেসেছিলাম। খেয়াল করলাম আমার হাসির কারণ ছিল আসলে বিজ্ঞাপনের শেষ দিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীটির হাসিমাখা মুখ। আমার হাসি পরক্ষনেই মিলিয়ে গেল। ভাবছিলাম, আমিকি এই ঈদে কোন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাসির কারণ হতে পারব?
বিজ্ঞাপনটির লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/clemoncleardrink/videos/841672676037865/
ঈদ আমাদের সবার জন্য। আর এই সবার মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ঈদ-উল-আযহায় আমাদের আনন্দ বাড়ার সাথে সাথে কাজ বাড়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। আমরা বেশিরভাগ মানুষেরাই কষ্ট কমাতে নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে বাসার নিচের গ্যারেজে কিংবা সামনের রাস্তায় কোরবানির পশু জবাই করতে, এবং বর্জ্যগুলো আশেপাশে কোথাও ফেলে রাখতে পছন্দ করি। নিজের অংশের মাংশ ঘরে তুলে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ এবং নানারকম রেসিপি তৈরি করতে পারলেই ভাবি ঈদ পরিপূর্ণ।
কিন্তু কেমন হত যদি, আমাদের বাসার পাশে স্তূপকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য দিনের পর দিন সেখানেই থাকত? আমাদের বাসার সামনের ড্রেনে আটকে পরা পশুর জমাট রক্ত ও বর্জ্য সেখানেই পচত? সে কথা ভাবা যায় না।
অতএব, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো সরিয়ে ফেলে বলেই, ঘরে এবং বাইরে আমাদের ঈদ হয় উপভোগ্য। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখি যে আমাদের ঈদকে উপভোগ্য করতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরকে ঈদের দিন বিকেল কিংবা পরদিন সকাল থেকেই কাজে নামতে হয়। তারা ত্যাগ করে তাদের আনন্দ, বিনোদন, সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ, আর গ্রহণ করে অতিরিক্ত কাজের চাপ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
অথচ, আমরা তথাকথিত সচেতন মানুষেরা তাদেরকে পছন্দ করিনা। যারা আমাদের যত্রতত্র ফেলে রাখা বর্জ্য অপসারণ করে আমাদেরকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তাদেরকেই ভাবি নোংরা, অস্পৃশ্য। আশেপাশে থেকে যাওয়া রক্ত আর বর্জ্যের গন্ধে নাকে কাপড় চেপে চলি আর তাদেরকে দোষারোপ করি। বলি, তারা কেন বর্জ্য অপসারণে দেরি করছে। ভাবিনা তাদের জন্যও সময়টা ঈদ।
যাইহোক, আমাদের একটু সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা রাখতে পারি আমাদের পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর। আমরা যদি নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করি, নিজ দায়িত্বে সে স্থান পরিষ্কার করি, এবং বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলি, তাহলেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপর আমাদের আর খুব বেশি নির্ভর করতে হবেনা আর তারাও দ্রুত বর্জ্য অপসারণ করতে পারবে।
সেইসাথে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রতি আমাদের বৈষম্যমূলক মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। তাদের সকলের রয়েছে সম্মান পাওয়ার অধিকার আর সেজন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে সহযোগিতার হাত।
আসুন পশু কোরবানি করার আগে ও বর্জ্য ফেলার সময় আরেকবার ভাবি, যাতে একটি উৎসবের সময়ে, পরিবেশ দূষিত না হয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কষ্ট না বাড়ে। সকলকে পরিচ্ছন্ন ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা।
লেখক, উন্নয়ন কর্মী